Wednesday, August 29, 2012

পড়া মনে রাখার এক ডজন টিপস

ছাত্র-ছাত্রীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সব সময় অভিযোগ করে যে, তাদের পড়া মনে রাখতে কষ্ট হয়। অনেক পড়াশোনা করার পরেও পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়। অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা সত্ত্বেও স্মরণশক্তি দুর্বলতার জন্য সেসব প্রশ্নের উত্তর সুন্দরভাবে দেয়া হয় না। মানুষের মস্তিষেকর দুই ভাগ। এক ভাগ সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম, অপরভাগ পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম। সেন্টাল নার্ভাস সিস্টেমের আবার অনেকগুলো ভাগ রয়েছে, এর সাথে রয়েছে নানা রকম কাজ। তার একটি মেমোরি বা স্মরণশক্তি। পৃথিবীতে বেশি আইকিউ নিয়ে জন্মগ্রহণ কেউ করে না, তাদের ব্যবহারিক আচরণের ওপর নির্ভর করে বুদ্ধিমত্তা বা আইকিউ। যত চর্চা করা যাবে তত আইকিউ বেড়ে যাবে। তবে সাধারণ আইকিউ ৯০ থেকে ১১০। ৯০-এর নিচে যাদের আইকিউ থাকে তারা সাধারণ অর্থে চলনসই বুদ্ধিমান। বেশির ভাগ লোকজনের আইকিউ ৯০-১১০। আবার কারো কারো আইকিউ ১১০-এর ওপরে। পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির আইকিউ ১১০-এর উপরে ছিল।
বেশি আইকিউ থাকা আমরা আবার ঠাট্টা করে পাগল বলে থাকি। আমরা আমাদের মস্তিষেকর ন্যূনতম ১০ ভাগ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করি। এটা এই নয় যে, ইচ্ছা করলে ১২ ভাগ ব্যবহার করতে পারব, নির্ভর করে সম্পূর্ণ নানা রকম চর্চার ওপরে। একেক পেশায় এই চর্চা একেক রকম। কেউ ডাক্তারি পেশায় আইকিউ ভালো থাকে, ব্যবহারিক চর্চার জন্য সে বিখ্যাত ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞ হয়, কেউ বিজ্ঞান পেশায় ভালো থাকে ব্যবহারিক চর্চার জন্য সে হয় ভালো বিজ্ঞানী। তেমনি চর্চার ফলেই একজন ছাত্র সাধারণ মান থেকে মেধাবী ছাত্রে উন্নীত হতে পারে। আমাদের দেশে মাত্র কিছুদিন হলো সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হয়েছে। পূর্বে এটি গতানুগতিক ধরনের ছিল। সৃজনশীল পদ্ধতিতে ছাত্র-ছাত্রীর একটি বিষয় সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা থাকা দরকার এবং এর ফলেই সৃজনশীলতা প্রকাশ পায় এবং ছাত্র-ছাত্রীকে আমরা মেধাবী বলি। মুখস্থগত বিদ্যা আজকালকের দিনে মেধাবী চর্চায় কম গুরুত্বপূর্ণ।
পড়াশোনা ছাড়াও নানা রকম জিনিস আমাদের মনে রাখতে হয় আমাদের জীবনযাত্রায়। এবার কিছু মনে রাখার কৌশল জানানো হলো-

১. আত্মবিশ্বাস
আত্মবিশ্বাস যেকোনো কাজে সফল হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত। মনকে বোঝাতে হবে পড়াশোনা অনেক সহজ বিষয়-আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। তাহলে অনেক কঠিন পড়াটাও সহজ মনে হবে। আত্মবিশ্বাসের মাত্রা আবার কোনো রকমেই বেশি হওয়া চলবে না। অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবের সাথে নিজেকে তুলনা করে চলনসই আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোনো বিষয় পড়তে যাওয়া ভালো। একবার পড়েই মনে রাখা কঠিন। তাই বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পড়ে এর সম্বন্ধে একটি ধারণা লাভ করার পরেই মনে রাখা সহজ হয়। আবার  কোনো বিষয়ে ভয় ঢুকে গেলে সেটা মনে রাখা বেশ কঠিন। ছাত্র-ছাত্রীরা সাধারণত অঙ্ক ও ইংরেজিকে বেশি কঠিন মনে করে। তাদের উচিত হবে বইয়ের প্রথম থেকে পড়া বুঝে বুঝে পড়া এবং পড়ার পাশাপাশি লেখার অভ্যাস করা। লেখাপড়া মনে রাখার একটি বড় পদক্ষেপ। এই জন্যই বলা হয় লেখাপড়া। আর পড়ালেখা করার উত্তম সময় একেকজনের জন্য একেক রকম। যারা সাধারণত হোস্টেলে থাকে তাদের ক্ষেত্রে রাত জেগে পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। অনেকের কাছে আবার বিকেলে বা সন্ধ্যার পরে, কেউ কেউ আবার সকালে পড়তে ভালোবাসেন। তবে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হচ্ছে যেহেতু ঘুমের পরে মন ও মনন পরিষকার থাকে সেহেতু ভোর হচ্ছে পড়াশোনার জন্য ভালো সময়।

২. কনসেপ্ট ট্রি বা ধারণার গাছ
পড়া মনে রাখার এটি একটি কৌশল। কোনো বিষয়ে পড়া মনে রাখার জন্য সম্পূর্ণ পড়াটি পড়ে নেয়ার পর সাতটি ভাগে ভাগ করতে হয়। এবং প্রতিটি ভাগের জন্য এক লাইন করে সারমর্ম লিখতে হয়। ফলে পড়ার বিষয়টি সাতটি লাইনে সীমাবদ্ধ থাকে। এর প্রতিটি লাইন একটি পাতায় লিখে অধ্যায় অনুযায়ী একটি গাছ তৈরি করে গাছের নিচ থেকে ধারাবাহিকভাবে পাতার মতো করে সাজাতে হবে। যাতে এক দৃষ্টিতেই পড়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ মনে পড়ে যায়। এই পাতাগুলোতে চোখ বোলালে লেখাটি সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে। বাংলা, ভূগোল ও সমাজশাস্ত্রের জন্য এই কৌশলটি অধিক কার্যকর।

৩. কি ওয়ার্ড মূল শব্দ
যেকোনো বিষয়ের কঠিন অংশগুলো ছন্দের আকারে খুব সহজে মনে রাখা যায়। যেমন-রঙধনুর সাত রঙ মনে রাখার সহজ কৌশল হলো ‘বেনীআসহকলা’ শব্দটি মনে রাখা। প্রতিটি রঙের প্রথম অক্ষর রয়েছে শব্দটিতে। এমনিভাবে ত্রিকোণমিতির সূত্র মনে রাখতে ‘সাগরে লবণ আছে, কবরে ভূত আছে, ট্যারা লম্বা ভূত’ ছড়াটি মনে রাখা যেতে পারে। এর অর্থ দাঁড়ায়, সাইন=লম্ব/অতিভুজ (সাগরে লবণ আছে), কস=ভূমি/অতিভুজ (কবরে ভূত আছে), ট্যান=লম্ব/ভূমি (ট্যারা লম্বা ভূত)। মেডিকেলে আমরা ভেগাসনার্ভের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা মনে রাখতে একটি পদ্য লাইনের সাহায্য নিতাম। তা হলো ঃ ‘মেরিনা আমার প্রাণের বেদনা শুনিয়া রাগিয়া কাঁদিয়া কাঁটিয়া ওযে পালায়ে চলে গেল হায়’। এতে  ভেগাসনার্ভের সবগুলো শাখাকে মনে রাখা যায়। যেমন ঃ মেরিনাতে- মেনিনজিয়াল, আমার-অরিকুলার, প্রাণের- ফেরিনজিয়াল এভাবে সবগুলোর শাখা আমরা ছড়ার মাধ্যমে মনে রাখতে পারি। মেধাবী ছাত্ররা নিজেই নিজের মতো করে নানা রকম ছড়া তৈরি করে নেবে।

৪. কালরেখা বা ইতিহাস মনে রাখার কৌশল
ইতিহাস মনে রাখায় এ কৌশলটি কাজে দেবে। বইয়ের সব অধ্যায় সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা নিয়ে গত ৪০০ বছরের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা বানাতে হবে। সেখান থেকে কে, কখন, কেন উল্লেখযোগ্য ছিলেন, সেটা সাল অনুযায়ী খাতায় লিখতে হবে। প্রতিদিন একবার করে খাতায় চোখ বোলালে খুব সহজে পুরো বই সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হবে। ফলে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন কষ্টকর মনে রাখার বিষয় হলো বিভিন্ন সাল। এগুলোকে কালো রেখার মাধ্যমে চর্চা করে মনে রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে। এখানে কনসেপ্ট ট্রি বা ধারণা গাছ পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা সত্যি যে আলাদা আলাদাভাবে ইতিহাস মনে রাখাটা কষ্টকর বটে!

৫. উচ্চস্বরে পড়া
পড়া মুখস্থ করার সময় উচ্চস্বরে পড়তে হবে। এই পদ্ধতিতে কথাগুলো কানে প্রতিফলিত হওয়ার কারণে সহজে আয়ত্ত করা যায়। শব্দহীনভাবে পড়ালেখা করলে একসময় পড়ার গতি কমে গিয়ে শেখার আগ্রহ হারিয়ে যায়। আর আগ্রহ না থাকলে পড়া শেখার কিছুক্ষণ পরই তা মস্তিষক থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। শেখা হয়ে যাওয়ার পর বারবার সেটার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এটাও পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে। যেমন করে বাচ্চা বাচ্চা ছেলে পুরো কোরআন শরিফ মুখস্থ করে বা হাফেজ হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এই ধারণার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হয় পড়ার বস্তুতে লাইন দিয়ে ধরে ধরে পড়ে শব্দ না করে পড়া ভালো। অথবা মুখে ফিসফিস করে শব্দ করা যায় বা শব্দের মতো করে ঠোঁট উচ্চারণ করা যায়। তবে শব্দ করে পড়ার পদ্ধতিতে ছাত্র-ছাত্রীরা দ্রুত কাহিল হয়ে যায়।

৬. নিজের পড়া নিজের মতো করে
সাধারণত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রযোজ্য। তারা নিজের মতো করে একটি বিষয় বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে একটি নোটের মতো করে। এবং ওই নোটই তারা পরবর্তীতে পাঠ্যবই হিসেবে ব্যবহার করে। এতে করে সুবিধা হচ্ছে নোট করার সময় ছাত্র বা ছাত্রীকে ওই বিষয়টি বিভিন্ন পুস্তক থেকে একাধিকবার পড়তে হয়। ফলে বিষয়টি সম্পর্কে একটি ধারণা পরিষকার হয়। এবং এই পরিষকার ধারণার ওপরে সৃজনশীল পদ্ধতি ব্যবহার করে একজন ছাত্র অনেক বেশি পড়া মনে রাখতে পারবে এবং অনেক বেশি মেধাবী বলে প্রমাণিত হবে। মেডিকেল শিক্ষায় আমরা অনেক সময় বিভিন্ন বই থেকে নোট টুকে নিতাম এবং পরবর্তীতে মূল পাঠ্যবইয়ের সাথে রেখে প্রশ্নের উত্তর পড়তাম। এতে করে মনে রাখা আমাদের সময় অনেক সহজ ছিল। বিভিন্ন বই থেকে সাহায্য নেয়ার পাশাপাশি আমাদের অধ্যাপক মহোদয়দের বিভিন্ন লেকচার ক্লাস সুচারুরূপে নোট করে নিজস্ব নোটের পাশে রাখতাম। নিজের তৈরি করা লেখা নিজের পড়তে অনেক সহজ মনে হতো। তবে এতে ছাত্রকে প্রতিটি ক্লাস করতে হবে, প্রতিটি অধ্যাপকের লেকচারগুলো শুনতে হবে, নোট করতে হবে এবং প্রতিদিন পড়ার অভ্যাস বজায় রাখতে হবে। ইদানীং দেখা যায় বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি লেভেলে কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থী পড়ার আগে নীলক্ষেত মার্কেট থেকে নোট ফটোকপি করে নেয়। তাতে তারা পাস করতে পারে কিন্তু মেধাবী ছাত্র হিসেবে প্রমাণিত হয় না।

৭. নতুন-পুরনোর সংমিশ্রণ ও নিজের নোটের পাশাপাশি অন্য কিছু গ্রহণ করা
নতুন কিছু পড়া শেখার সময় নিজস্ব নোটের পাশাপাশি নতুন ধারণাটিকে কোথাও নোট করতে হবে বা সযত্নে লালন করতে হবে। নতুন কিছু শেখার সময় একই রকম আরো বিষয় মিলিয়ে নিতে হবে। কারণ একেবারে নতুন কোনো তথ্য ধারণ করতে মস্তিষেকর বেগ পেতে হয়। কিন্তু পুরনো তথ্যের সঙ্গে নতুন তথ্য সংযোজন করতে পারে খুব সহজে। উদাহরণস্বরূপ ‘সিডি’ শব্দটি শেখার ক্ষেত্রে পুরনো দিনের কলের গানের কথা মনে রাখলে শব্দটা সহজেই মনে থাকবে। শুধু মনে রাখতে হবে, শব্দ দুটোর মধ্যে পার্থক্যটা কী। ফিজিক্স বা কেমিস্ট্রির নতুন কোনো সূত্র শেখার সময় মনে করে দেখতে হবে এ ধরনের সূত্র আগে পড়া কোনো সূত্রের সঙ্গে মেলে কি না।

৮. কেনর উত্তর খোঁজা
এটি একটি ভালো অভ্যাস। প্রতিটি অধ্যায়ের মধ্যে কী, কেন, কবে, কোথায়, কীভাবে এই জিনিসগুলো নিজে প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে। অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন সংযোগে পানি হয় এই ফর্মুলাটিকেই কী, কেন, কীভাবে এরূপে মেধাবী ছাত্ররা মনে রাখার সহজ ফর্মুলা হিসেবে নিতে পারে। নিজের মনকে সব সময় নতুন কিছু জানার মধ্যে রাখুন। নতুন কিছু জানার চেষ্টা করুন এবং নিজস্ব নোটের পাশাপাশি এর বিভিন্ন উত্তর নোট করে নিন। এ নিয়মটা প্রধানত বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের মনে সব সময় নতুন বিষয় জানার আগ্রহ প্রবল হতে হবে। অনুসন্ধানী মন নিয়ে কোনো কিছু শিখতে চাইলে সেটা মনে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর কোনো অধ্যায় পড়ার পর সেটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ল্যাবে ব্যবহারিক ক্লাস করতে হবে। তবেই বিজ্ঞানের সূত্র ও সমাধানগুলো সহজে আয়ত্ত করা যাবে।

৯. কল্পনায় ছবি আঁকা বা কাল্পনিকভাবে
গল্পের বিষয়ের সাথে মূল ধারণাটি নিয়ে একটি কাল্পনিক ছবি বেশকিছু বার পড়লে অনুমান করা যায়। এই ছবিটির আকার, কৃতিত্ব একেক ছাত্রের জন্য একেক রকম। বিষয়টিকে কল্পনার ছবি আকারে যত বেশি বিস্তারিতভাবে আনা যাবে, বিষয়টির খুঁটিনাটি তত বেশি করে প্রকাশ হবে এবং ছাত্র তত বেশি নম্বর পাবে। এটি বিভিন্ন রচনামূলক বিষয়ে ব্যবহার করা যায়। বিষয়সদৃশ একটি ছবি আঁকতে হবে মনে। গল্পের প্রতিটি চরিত্রকে আশপাশের মানুষ বা বস্তুর সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই বিষয়টি নিয়ে পড়তে বসলে মানুষ কিংবা বস্তুটি কল্পনায় চলে আসবে। এ পদ্ধতিতে কোনো কিছু শিখলে সেটা ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। আর মস্তিষককে যত বেশি ব্যবহার করা যায় তত ধারালো হয় ও পড়া বেশি মনে থাকে।

১০. পড়ার সঙ্গে লেখা
কোনো বিষয় পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে সেটি খাতায় লিখতে হবে। একবার পড়ে কয়েকবার লিখলে সেটা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। পড়া ও লেখা একসঙ্গে হলে সেটা মুখস্থ হবে তাড়াতাড়ি। পরবর্তী সময়ে সেই প্রশ্নটির উত্তর লিখতে গেলে অনায়াসে মনে আসে। এ পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে হাতের লেখা দ্রুত করতে সাহায্য করে। পড়া মনে রাখতে হলে শেখার সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি লেখার অভ্যাস করতে হবে। সাধারণত কোনো বিষয়ে পড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একবার লিখতে হয়। আবার ২৪ ঘণ্টা পরে ওই বিষয়টি আবারও পড়তে হয় এবং পরে লিখতে হয়। কিছুদিন পরপর বিষয়টি পড়া বা লেখার ওপরেই নির্ভর করে কতটুকু মনে রাখার সামর্থ্য রয়েছে। তবে লেখার চেষ্টা করা প্রতিটি পড়ার সাথে সাথে অত্যন্ত উপকারী পদক্ষেপ।

১১. অর্থ জেনে পড়া
ইংরেজি পড়ার আগে শব্দের অর্থটি অবশ্যই জেনে নিতে হবে। ইংরেজি ভাষা শেখার প্রধান শর্ত হলো শব্দের অর্থ জেনে তা বাক্যে প্রয়োগ করা। বুঝে না পড়লে পুরোটাই বিফলে যাবে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে ইংরেজি বানিয়ে লেখার চর্চা করা সব থেকে জরুরি। কারণ পাঠ্যবইয়ের যেকোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ইংরেজি শব্দের অর্থভাণ্ডার সমৃদ্ধ হলে কোনো পড়া ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। শুধু ইংরেজি নয় বাংলা কিংবা অন্য ভাষাতেও অর্থ বুঝে না পড়লে পড়া মনে থাকে না এবং সৃজনশীল হওয়া যায় না। পড়া মনে রাখার জন্য পাঠ্যপুস্তকের অক্ষরগুলোর মানে জানা ছাড়াও মেধাবী ছাত্র সব সময় প্রতিদিন ৫টি করে নতুন শব্দ মনে রাখার চেষ্টা করবে মানে সহকারে। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীদের শব্দভাণ্ডার বিশাল হবে, সৃজনশীলতা প্রকাশে অনেক সাহায্যকারী হবে। দেখা যায়, মেধাবী ছাত্ররা একটি ভাবকে নানা রকম শব্দে প্রকাশ করতে পারে।

১২. গল্পের ছলে পড়া বা ডিসকাশন
যেকোনো বিষয় ক্লাসে পড়ার পর সেটা আড্ডার সময় বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের মতো করে উপস্থাপন করতে হবে। সেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের মনের ভাবগুলো প্রকাশ করতে পারবে। সবার কথাগুলো একত্র করলে অধ্যায়টি সম্পর্কে ধারণাটা স্বচ্ছ হয়ে যায়। কোনো অধ্যায় খণ্ড খণ্ড করে না শিখে আগে পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে। পরে শেখার সময় আলাদাভাবে মাথায় নিতে হবে। তাহলে যেকোনো বিষয় একটা গল্পের মতো মনে হবে। এখানে উচ্চতর বিদ্যায় গ্রুপ ডিসকাশন একটি অন্যতম ব্যাপার। বিভিন্ন ভার্সিটিতে টিউটোরিয়াল ক্লাস এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মেডিকেলে পড়ার সময় আমরা এক বা একাধিক বন্ধুর সাথে গ্রুপ ডিসকাশন করে পড়তাম। আমি যা জানতাম তা বলতাম এবং অন্যরা যা জানত তা শুনতাম। একে অপরের মধ্যে কে কাকে পড়ার মাধ্যমে আটকাতে পারে এটি একটি প্রতিযোগিতা ছিল। তবে প্রতিযোগিতাটি অবশ্য মানসমমত ও স্বাস্থ্যকর হতে হবে। এর সবচেয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল যে ছেলে এবং মেয়ে একসাথে গ্রুপে পড়লে পরে তাদের মধ্যে বিশিষ্ট সম্পর্কের জন্ম নিত।

১৩. মুখস্থবিদ্যাকে ‘না’
মুখস্থবিদ্যা চিন্তাশক্তিকে অকেজো করে দেয়, পড়াশোনার আনন্দও মাটি করে দেয়। কোনো কিছু না বুঝে মুখস্থ করলে সেটা বেশিদিন স্মৃতিতে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু তার মানে এই নয়, সচেতনভাবে কোনো কিছু মুখস্থ করা যাবে না। টুকরো তথ্য যেমন-সাল, তারিখ, বইয়ের নাম, ব্যক্তির নাম ইত্যাদি মনে রাখতে হবে-কী মনে রাখছেন, এর সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের কী সম্পর্ক তা খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া বিজ্ঞানের কোনো সূত্র কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আয়ত্ত করতে সেটা আগে বুঝে তারপর মুখস্থ করতে হবে। মুখস্থবিদ্যা একেবারেই যে ফেলনা তা নয়। এটি অনেক কার্যকরও বটে। তবে সৃজনশীলতার যুগে মুখস্থবিদ্যার চেয়ে কাল্পনিকভাবে লেখা, নিজের মতো করে লেখা অত্যন্ত মেধাবী কাজ। তবে কিছু কিছু বিষয় মুখস্থ অবশ্যই রাখতে হয়। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুখস্থকে ‘না’ বলুন এবং সৃজনশীল পদ্ধতি গ্রহণ করুন।

ছাত্র-ছাত্রীগণ যেকোনো বিষয়ে বলা যত সহজ ব্যবহারিকভাবে প্রয়োগ করা ততটা সহজ নয়। এখানে যেসব পদ্ধতির কথা বলা হলো সবগুলোই যে তোমরা নিজেদের মতো করে প্রয়োগ করতে পারবে তা নয়। আস্তে আস্তে চেষ্টা করলে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে লেখাপড়া মনে রাখা যায়। মনে রাখতে হবে জিনিসটা বুঝে পড়া আর মুখস্থ পড়ার মধ্যে অবশ্যই তফাৎ রয়েছে। যারা বুঝে পড়ে তারা মুখস্থ পড়ার ছাত্রের চেয়ে বেশি মনে রাখতে পারে এবং মেধাবী হয়।

সাবলীল বক্তৃতা দিতে চান ?

সাদেক সাহেব একটি প্রতিষ্ঠানের স্টোরকিপার। বড় মনের একজন লোক। অফিসের পিয়ন হতে শুরু করে একদম বড় সাহেব পর্যন্ত সবার সাথে প্রচণ্ড খাতির। এ বাড়তি খাতিরের কারণে সাদেক সাহেবকে অনেক সময় নানা কিছু খেসারত দিতে হয়। যেমন কেউ ছুটিতে গেলে দায়িত্ব তাকেই নিতে হয়। প্রতিবারেই এমনটি ঘটে। সাদেক সাহেব এটিকে তেমন বেশি একটা কষ্টের মনে করেন না। কিন্তু সব দিন তো আর সমান হয় না। সেদিন তিনি দায়িত্বে ছিলেন অফিসের পাবলিক রিলেশন অফিসারের। ছুটির ঠিক ওইদিনই ঢাকায় একটা প্রাইভেট ভার্সিটির এমবিএর ছাত্ররা এসেছে প্রতিষ্ঠানটি সফরে, তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড বোঝাতে হবে। পনেরো জন ছাত্রের সামনে বক্তৃতা দিতে হবে। এমনটি তো তিনি ইতিপূর্বে কখনো করেননি। তার তো বক্তৃতাদানের অতীত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাহলে কী হবে? শরীর খারাপের অজুহাতে তিনি কোনো রকমে সে যাত্রা রেহাই পেলেন। লোকের সামনে বক্তৃতা দেয়া কি আসলেই ভয়ের? সবার দ্বারা কি তা সম্ভব হয়ে ওঠে না? এ ক্ষমতা কি জন্মগত? কেউ কি চেষ্টা আর সাধনা করে এ ক্ষমতা অর্জন করে নিতে পারে? যারা পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে গবেষণা করে থাকেন তাদের একদম সাদামাটা জবাব-একটু উদ্যোগী হলেই আপনিও ভালো বক্তা হয়ে উঠতে পারেন। অনেক লোকের সামনে একদম সহজ স্বাভাবিক থেকে সাবলীল বক্তৃতা দেয়ার ক্ষমতা আপনিও রপ্ত করে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

বিষয়বস্তু
আপনি যদি শিক্ষানবিশ বক্তা হয়ে থাকেন তাতে সাবলীল বক্তব্যের ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হলো বক্তব্যের বিষয়বস্তু হতে হবে একদম সহজ-সরল। যে কোনো বক্তব্যের মূল লক্ষ্য হলো শ্রোতাদের তথ্য দেয়া। তাতে বড়জোর দুই বা একটা নতুন তথ্য থাকাই যথেষ্ট। ভারী বক্তৃতা কেবল শ্রোতাদের মনাকর্ষণ হারায় না, বক্তা এতে সাবলীলতা হারিয়ে ফেলে। বক্তাকে দুটো দিক অবশ্যই জানা থাকা চাই। প্রথমে আপনাকে পরীক্ষা করে নিতে হবে এক বা দুটি বাক্য দিয়ে পুরো প্রসঙ্গ উপস্থাপন করতে পারেন কি না, মানে মন্তব্য প্রসঙ্গটা একদম স্বচ্ছ তথ্যনির্ভর আর লক্ষ্য অভীষ্ট হওয়া চাই। আপনি যা বলতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে যদি আপনার একদম স্বচ্ছ পরিষকার ধারণা না থাকে সে ক্ষেত্রে বক্তৃতা দেয়ার চেষ্টাই করা উচিত নয়। এতে আপনি শ্রোতাদের কাছে হাস্যাসপদ পাত্র হয়ে দাঁড়াবেন। সুতরাং বক্তৃতা দেয়ার শুরুতে বিষয়বস্তু একবার পরখ করে নিন, তা হতে হবে সরল, অনেক বেশি তথ্য সম্ভার করে তা যেন ভারি হয়ে না যায়, অল্প কথায় বোঝানো যায় আর শ্রোতাদের শোনানোর আগে বক্তা যেন এ আত্মবিশ্বাস রাখেন, যা বলতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অবহিত।

সুবিন্যস্ত পরিকল্পনা
আপনার বক্তব্য নাতিদীর্ঘ বা অনেক বড় যেমনই হোক আপনাকে আগে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে কোন পয়েন্টের পর কোন প্রসঙ্গ আনবেন। সামনে পুরো লিখিত বক্তব্য রেখে বক্তৃতা দেয়ার চেয়ে মঞ্চে না যাওয়াটাই শ্রেয়। বক্তব্য দেয়াকালে আপনার দৃষ্টি থাকবে দর্শকের দিকে। সাথে ছোট কাগজ বা চিরকুট থাকবে। তাতে শুধু পয়েন্টগুলো সাজানো থাকবে। এতে করে বিষয়বস্তু উপস্থাপনার বিন্যাস আর সাবলীলতা অক্ষুণ্ন থাকবে।

পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট সাইকোলজিস্টরা এ শিরোনামে একটা অদ্ভুত উপদেশ দিয়ে থাকেন। তাদের উপদেশ, বক্তব্যের একদম শেষ কথা ছোট কাগজের ওপরে লিখে রাখা। এর কারণ বহুবিধ। বক্তব্যের একদম শেষ কথা শ্রোতারা সবচেয়ে বেশি স্মরণে রাখে। এ মন্তব্যই শ্রোতাদের সর্বাধিক প্রতিক্রিয়ান্বিত করে। কোনোভাবেই তা যেন বাদ পড়ে না যায় বা তাড়াহুড়োর কারণে খণ্ডিত হয়ে না যায়। চিরকুটের একদম মাথায় লিখে রাখার কারণে পয়েন্ট ভিত্তি করে বক্তা যেটাই বলুক কিন্তু বক্তব্য সম্ভাব্যমুখী থাকে, এটি সব সময় স্মরণে থাকে। এটি বক্তার আত্মবিশ্বাস অনেক মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়।
বক্তব্য সংক্ষিপ্ত রাখুন
সাবলীল বক্তৃতা দেয়ার তৃতীয় শর্ত হলো তা সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ শ্রোতারা দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না, এমনকি বক্তৃতার বিষয়বস্তু যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন। কারণ দীর্ঘক্ষণ বক্তৃতার ক্ষেত্রে শ্রোতাদের মাঝে বিরক্তির প্রকাশ শুরু হয়ে যায়। তা আপনার বক্তব্যদানের আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে আপনার নার্ভাসনেস ভাব আরো প্রকট হয়ে দাঁড়ায়।

গবেষকদের উপদেশ, ভালো বক্তা হতে চাইলে যে কোনো বক্তব্য বারো মিনিটের বেশি দীর্ঘায়িত করা কোনোভাবেই উচিত নয়। সময়, পরিস্থিতি, পরিবেশভেদে এতেও বাড়তি কাটছাঁটের দরকার হতে পারে। সিডিউল বক্তব্য, হলঘরে এয়ারকন্ডিশনার নষ্ট, শ্রোতারা গরমে অস্থির- এ ক্ষেত্রে বক্তব্য যত ছোট করবেন, ততই লাভ আপনার। দর্শকদের করতালি আপনাকে আশ্বস্ত করে তুলবে, পাশাপাশি মঞ্চে আপনি অনেক বেশি সাবলীল আর স্বাচ্ছন্দ্য থাকতে পারবেন।
কৃত্রিমতা পরিহার করুন
বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের কৃত্রিমতা একদম সচেতনভাবে পরিহার করা চাই। তবেই আপনি স্বচ্ছন্দ্য থাকতে পারবেন। অভিনয় করতে গেলে এ বানানো কৃত্রিমতা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে আপনার কাছে। আপনি হতাশ হবেন, আত্মবিশ্বাস কমে আসবে। যে গল্প আপনি নিজ অন্তর হতে হাসির মনে করেন না, কখনোই আশা করতে যাবেন না শ্রোতাদের কাছে তা হাসির হবে। বক্তব্যে পরিবেশিত তথ্য যদি আপনার কাছে চমকপ্রদ মনে না হয়, দর্শকদের কাছে তা চমকপ্রদ হবে কখনোই এমনটি ভেবে বসবেন না।

লেখক রবার্ট ফ্রস্ট একটা সুন্দর কথা বলেছিলেন ‘যে হৃদয়বিদারক কাহিনী লেখকের চোখের জল ঝরায় না, পাঠকদের বেলায়ও তেমনটি ঘটে।’ ঠিক এ প্রসঙ্গ চলে পাবলিক সিপকিং-এর বেলাতে। বক্তব্যের বিষয়বস্তু যদি আপনাকে সত্যি সত্যিই কান্নাতুর করে, শ্রোতারাও তাতে আপনার অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেবে। আসলে বক্তার মনে বিশেষ অনুভূতি সঞ্চারের দরকার। আপনি বক্তা, সামনে একরাশ শ্রোতা, আপনি মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন শ্রোতাদের এমন কোনো অভিজ্ঞতা শোনানোর জন্য যেটি আপনি জানেন কিন্তু শ্রোতারা অজ্ঞ। এ ক্ষেত্রে শ্রোতাদের তথ্য জানালেই চলবে না, আপনার পুরো অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেয়া চাই। এ ক্ষেত্রে ‘আমি’ ব্যবহার করুন, প্রকাশ করুন, এ অভিজ্ঞতার অনুভূতি থ্রিল, ভয়, অনুশোচনা।
সূচনার পর্ব
বক্তব্যের শেষের মন্তব্যের মতো সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ হলো সূচনা অংশ। কারণ বক্তার সাথে শ্রোতার যে সম্পর্ক গড়ে উঠবে তা নির্ধারিত হয় এর দ্বারা। তারা আপনার সম্পর্কে একটা ইমপ্রেশন গড়ে নেয়। এটি অনেকমাত্রায় প্রভাবিত করবে বক্তার প্রতি শ্রোতার মিথস্ক্রিয়তার ধরন। এ ক্ষেত্রে কয়েক দিক নজর রাখতে পারেন।

মঞ্চে উঠে অবশ্যই দর্শকদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসবেন। মনে রাখবেন হাসিমুখে তাকালে আশপাশের লোকজন এমন অভিব্যক্তিই উপহার দেবে। যদি আপনি মুখ গোমড়া, ভারি করে রাখেন সে ক্ষেত্রে শ্রোতারা আপনার বক্তব্য শুরু হওয়ার আগ হতেই একটা নেতিবাচক ধারণা গড়ে নেবে মনের মাঝে।
উপস্থাপকের পরিচিতিকালে মাথা হেলিয়ে তাকে সম্বোধন করবেন। ধন্যবাদ দিতে যেন ভুল না হয়। হতে পারে এগুলো একদম মামুলি ব্যাপার কিন্তু শ্রোতারা সূচনাপর্বের এসব সূক্ষ্ম দিক গভীরভাবে দেখে থাকে।
অতঃপর বক্তৃতা দেয়ার পালা। যতই তাড়া থাকুক একটু বিলম্ব দিন। অন্তত ত্রিশ সেকেন্ডের নীরবতা, এর লক্ষ্য একটাই শ্রোতারা যেন আপনার ওপর পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারে। সামান্যক্ষণ বিরতি দেয়া হলে ক্ষণিককালের জন্য শ্রোতার মনে অনুভূতি খেলে যায়- ‘বক্তা কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন যা কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের কানে এসে পৌঁছবে।’ বক্তার মনের কথাও এটিই। ক্ষণিকের নীরবতাকালীন আপনার জন্য করণীয়তা হলো শ্রোতাদের সাথে চোখে চোখ রাখা। এক্ষেত্রে সামনের শ্রোতাদের মধ্য হতে গুটিকতক ঠিক করে নিন-একজন ডান দিকে, একজন বাম দিকে, একজন ঠিক মাঝখানের। এ চোখ মেলানো হবে ক্ষণিকের। অতঃপর আপনার দৃষ্টি হাজার শ্রোতার চোখের মাঝে হারিয়ে যাবে।
বক্তৃতা মানে পাঠদান নয়
বক্তাকে প্রথমে বক্তা আর সংবাদ পাঠক এই দুটোর মধ্যকার ফারাক বুঝতে হবে। লিখিত বক্তব্য পড়া হলে বক্তার সাবলীলতা, অনুভূতি চাপা পড়ে যায়, শ্রোতার সাথে চোখে চোখ মেলানো হয় না বলে বক্তব্য কেমন যেন নীরস বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। সার্থক বক্তারা কখনোই লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন না। তার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চিরকুট লিখে নেয়াকে শ্রোতারাও কামনা করে। কারণ এতে কোনো প্রসঙ্গ বাদ যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না, বক্তব্য অনেক বেশি সুবিন্যস্ত আর গোছালো হয়ে থাকে।

রিলাক্স থাকা চাই
বক্তৃতা দেয়ার সময় যতই কাছে চলে আসে, নতুন বক্তার মনের শিহরণ, ভয় ক্রমেই বেড়ে যায়। বুক ধড়ফড় করতে থাকে। শরীর, হাত-পা ঘামতে শুরু করে। মনের অজান্তে কোনো সময়ে হাতের নখ আমাদের দাঁতের মাঝে চলে যায়। অনেক লোকের সামনে দাঁড়ানো অনেকটা মানসিক চাপের, বিশেষ করে আপনি যদি এতে অভ্যস্ত না থাকেন। এ ক্ষেত্রে একদম রিলাক্স থাকার চেষ্টা করবেন। আপনার একদম জোরে জোরে লম্বা দম নেয়ার দরকার নেই। হাল্কা সুস্থমাত্রার দম নিন, তবে তা হতে হবে নিয়মিত ছান্দিক। দেখবেন আপনি অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এটি নিশ্চিত করতে পারলে কে আর আপনাকে ঠেকায়? তবে মনে রাখবেন- লোকের সামনে বক্তৃতা দেয়া, যেটিকে সহজ ইংরেজিতে বলা হয় ‘পাবলিক সিপকিং’-এটি অবশ্যই একটা স্কিল বা বিশেষ গুণ। কিন্তু মিউজিক্যাল ক্ষমতা বা অঙ্কন উৎকর্ষতার মতো এটি কোনো জন্মনির্ভর ট্যালেন্ট নয়। চর্চা আর উদ্যোগ আপনার মাঝেও এ স্কিল গড়ে দিতে পারে। শর্ত একটাই যেখানেই সুযোগ পান দু’চারটি কথা বলতে পিছপা হবেন না। তা হোক বিজনেস মিটিং, লাঞ্চ পার্টি বা খেলার মাঠ।

জন মে বলেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাড়াজাগানো সাইকোলজিস্ট হলেন জন মে। তার সারাজীবনের গবেষণার মূল বিষয়বস্তু হলো ‘পাবলিক সিপকিং’। তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে তিনি মূলত এটি শিখিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে তার উপদেশ-শ্রোতার সামনে একদম বন্ধুর ভূমিকা নিন। হাসুন। অনুভূতি, অভিব্যক্তি প্রকাশ করুন। এমনভাবে নিন যেন সামনের শ্রোতামহল আপনার অনেক দিনের চেনা।

মঞ্চে দাঁড়ালে কমবেশি নার্ভাসনেস সবারই আসে। আপনার করণীয়তা হলো এ নার্ভাসনেস সামাল দেয়া। লৌহ  মানবী বলে পরিচিত ব্রিটেনের প্রাইম মিনিস্টার মার্গারেট থ্যাচার প্রায়ই বলতেন, ‘যখন কোনো জায়গাতে আমাকে বক্তৃতা দিতে হবে এমন অবস্থার সমমুখীন হলে আমার মাঝে কমবেশি মাত্রার নার্ভাসনেস দেখা দেয়।’
যারা বক্তৃতা দিতে গিয়ে খুব বেশি নার্ভাস হয়ে যান তাদের প্রতিকার হতে পারে-আপনি ধরে নিন আপনি নন অন্য কেউ বক্তৃতা দিচ্ছে। মনে মনে ভাবতে পারেন-এমনি একজন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে, যাকে আপনি তার বক্তৃতার জন্য প্রশংসা করে থাকেন। শ্রোতাদের ওপর আপনার কর্তৃত্ব বজায় রাখা চাই। শুরুতে ক্ষণিক বিরতি দিয়ে বক্তব্য শুরু করুন যেন শ্রোতারা আপনার ওপর মনোনিবেশ করতে পারে, মাঝে মাঝে শ্রোতাদের মধ্যকার কয়েকজনের সাথে একদম সোজাসুজি চোখে চোখ মেলান। আপনাকে বুঝিয়ে দিতে হবে আপনি বক্তব্য নিয়ে এসেছেন শ্রোতাদের জন্য, যাদের কাজ হলো তা মন দিয়ে শোনা। আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ চাই। মঞ্চে আপনার দাঁড়ানোর ভঙ্গিমাতে যেন এর প্রকাশ ঘটে। যখন শ্রোতা পুরোমাত্রায় দেখা যায় সে ক্ষেত্রে শ্রোতাদের অংশগ্রহণেও বাড়তি সক্রিয়তা চাই। এর সুযোগ নিতে আপনি উঁচু ডেস্কের পেছনে না থেকে সিপকার হাতে একদম খালি মঞ্চে চলে আসুন।
বক্তৃতায় কোন প্রসঙ্গের পর কোন প্রসঙ্গ আনবেন সে ব্যাপারে আগাম পরিকল্পনা নিন। ভালো হয় যদি পয়েন্টগুলো একটা ছোট কাগজে লিখে নেন। বক্তৃতার বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্ত, সরল ও বোধগম্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। আপনার বক্তৃতার মাঝে স্বতঃস্ফূর্ততার প্রকাশ থাকা চাই। এতে অনুভূতির প্রকাশ প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে ও বক্তৃতা হয়ে ওঠে প্রাণময়। গলার স্বরের দিকেও লক্ষ রাখা চাই। মাঝারি মাত্রাই সর্বোত্তম। তবে ঠোঁট, জিহ্বা, দাঁত আর গলবিলের সর্বোচ্চ ব্যবহার চাই যেন বাচনভঙ্গি প্রাণময়তা পায়। যতক্ষণ বক্তব্য রাখবেন, ততক্ষণই দর্শকের দিকে দৃষ্টি দেবেন। কেউ যেন দৃষ্টির বাইরে না যায়, এমনকি মঞ্চের বিপরীতে কেউ থাকলেও অন্তত একবারের জন্য হলেও তার দিকে তাকাবেন।
সময়ের দিক ভুলে গেলে চলবে না। বিজনেস কনফারেন্সে বড়জোর সর্বোচ্চ একঘণ্টাকাল বক্তৃতা রাখা যায়। সামাজিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা যেন কোনোভাবেই দশ মিনিটের বেশি দীর্ঘায়িত করা না হয়। সব কথার শেষ কথা এর চর্চা আর অনুশীলন। এর কোনো বিকল্প নেই, সুতরাং আর বিলম্ব কেন।

Saturday, August 25, 2012

মুখ দেখে মানুষ চেনো!


ধরো কলেজের রঙিন দিনগুলোতে তোমার একটি মেয়েকে ভালো লেগে গেল। তারপর শুরু হলো তাকে নিয়ে রঙিন সব স্বপ্ন দেখা। বলি, একটু দাঁড়াও। কারণ তোমার মনের সঙ্গে পছন্দের মানুষের মনটা তো নাও মিলতে পারে। তখন নিশ্চয়ই খুব বিশ্রী ব্যাপার হবে। তাই প্রথম থেকেই তার মন-মানসিকতা সম্পর্কে একটা ধারণা নেয়ার চেষ্টা করো। ভাবছ উপায় কী? কথা বলাতে যে অনেক ঝামেলা! ভয় নেই, কারণ এমন একটা উপায় আছে যাতে করে শুধু মানুষের মুখ এবং শরীরের বিভিন্ন বাহ্যিক অঙ্গ দেখেও তার মানসিকতা সম্পর্কে আন্দাজ করা যায়! আশ্চর্য লাগছে তো? কিন্তু এ রকম একটা বিদ্যা সত্যিই আছে এবং সেটা রীতিমতো জনপ্রিয়ও, নাম ফিজিওনমি।
ফিজিওনমির চেহারা
ফিজিওনমির ব্যাপারটার প্রাচীনকাল থেকেই চল ছিল এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। প্রথম এটির চর্চা শুরু হয় ভারতে, তারপর সেটা ছড়িয়ে পড়ে ইরান, মস্কো আর ফ্রান্সে। তখন অবশ্য সেভাবে এটা নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। কিন্তু ফিজিওনমির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় বিভিন্ন দেশের আগ্রহী মানুষেরা এটা নিয়ে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এভাবেই ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়ে চেহারা দেখে মানুষ চেনার এই কায়দা।

মুখের মায়ায়
ফিজিওনমি যদিও মানুষের বাইরের সম্পূর্ণ অবয়ব দেখে তাকে বিশ্লেষণ করার বিদ্যা, তবে এর মধ্যে মুখমণ্ডলের গড়ন একটা প্রধান ভূমিকা পালন করে। ফিজিওনমিতে বলে, যাদের মুখ লম্বা হয় তারা সাধারণত উচ্চতাতেও বেশ বড় হয়। তাদের মুখে মেদের চেয়ে হাড়ই বেশি থাকে। এই লম্বা মুখের লোকজন বাস্তববাদী, ধীরস্থির এবং কর্মঠ হয়। তবে এই বিদ্যামতে এরা নাকি স্বার্থপর টাইপের হয়। অর্থাৎ কর্মঠ হয়ে উপার্জিত সব অর্থ কেবল নিজের কাজেই লাগায়। এ ধরনের মুখের অধিকারীরা বেশ আবেগপ্রবণও হয়। কখনো পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হলে খুবই হতাশায় ভুগতে থাকে। তবে তাদের খাবার ব্যাপারে বেশ উৎসাহ থাকে। সামনে যা পায় তাই গপাগপ! আর সবচেয়ে বেশি আবেগপ্রবণ হয় গোলমুখো মানুষজন ।

বাড়ির অশান্তি, বন্ধুর বিপদ কিংবা পাড়ার রাস্তা মেরামত আন্দোলন-সবখানেই এরা থাকে সোচ্চার। তাই বন্ধুমহলে এদের জনপ্রিয়তাও থাকে আকাশছোঁয়া। এসব মানুষের প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের নিয়ে বেশ সুখে থাকে। এদের সমস্যা হলো কোথাও সামান্য সমস্যা দেখলেই এরা বিচলিত হয়ে পড়ে আর এসব মানুষ নিজেদের একদমই সময় দেয় না। তাই গোল মুখের বন্ধুরা, একটু সচেতন হয়ে যাও। এরপর বলা যায় চৌকো মুখের মানুষদের কথা। আদতে এরা খেলোয়াড়ি মনোভাবের। চেহারাতেও সেই পেশিবহুল ভাবটা উপস্থিত। এরা কাজেকর্মে খুব চটপটে আর কথাবার্তায় খুব সোজাসাপ্টা। তাই মাঝেমধ্যেই এর-ওর সঙ্গে ঝগড়াঝাটি বাধিয়ে বসে। তাছাড়া এদের মধ্যে লাজুক ভাবটা একদমই নেই। তাই প্রেমের ব্যাপারটা বেশ তাড়াতাড়িই শুরু করতে পারে। সবশেষে বলা যাক ত্রিকোণ মুখের মানুষগুলোর কথা। এরা দেখতে রোগা রোগা হলেও ভেতরে রয়েছে যথেষ্ট বুদ্ধি আর চিন্তা-ভাবনার সামঞ্জস্য। এদের শরীরে শক্তি কম থাকলেও গলার স্বর বেশ উঁচুই হয়। সুতরাং তারা জোরে কথা বলে!
কাণ্ড যত উচ্চতা, চুল নিয়ে
উচ্চতা আর চুল নিয়ে ছেলেমেয়ে কারোরই চিন্তার শেষ নেই। এই দুটোর পার্থক্য দেখে ফিজিওনমি অনুসারে অনেক কিছু বলে দেয়া সম্ভব। আর এসব ব্যাপারে ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য থাকায় ব্যাপারটা হয়ে ওঠে বেশ মজারও। যেমন লম্বা ছেলেদের সবাই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আর আকর্ষণীয় ভাবলেও মেয়েদের ব্যাপারটা হয় একেবারে উল্টো।  খুব লম্বা মেয়েদের ঠ্যাঙ্গা বলে উড়িয়ে দেয়া হয়। তবে উচ্চতায় খাটো মেয়েরা জীবনে খুব আশাবাদী টাইপের হয়, আর এরা ভীষণ গানভক্ত হয়। মাঝামাঝি উচ্চতার মেয়েরা সবার কাছে লক্ষ্মী বলে পরিচিতি পায়। উচ্চতার পর আর একটা চোখে পড়ার জিনিস হলো চুল। যেসব মেয়ের প্রকৃতিগতভাবে চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা হয় তারা নাকি হিংসুটে আর অহঙ্কারী স্বভাবের হয়। লালচুলোরা হয় রগচটা এবং কুচক্রী মনোভাবের। তবে কালো আর কোঁকড়া চুলের অধিকারিণীরা সৌভাগ্যবতী আর সম্পদশালিনী হয়ে থাকে। এর ঠিক উল্টোটা হয় যাদের চুল থাকে রুক্ষ, পাতলা এবং খাটো। কিন্তু জয়জয়কার নরম, সিল্কি, ঘন কালো এবং লম্বা চুলের মেয়েদের। পৃথিবীতে এরা সৌন্দর্য আর সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে আসে! ছেলেদের মধ্যেও যাদের চুল ঘন কালো এবং পাতলা তারা মহৎ গুণাবলীর অধিকারী হয়! যাদের চুলের রঙ হালকা লালচে থাকে তারা মোটুমটি সুখী জীবন-যাপন করে। তবে যাদের চুলের রঙ পুরোপুরি লাল তাদের অনেকেই কর্মজীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব পায়। আবার ফিজিওনমি মতে, পাতলা, রুক্ষ চুল সবসময় মানুষের দরিদ্রতা এবং অসুস্থতাকে প্রমাণ করে।

কপালের নাম গোপাল
লম্বা আর চওড়া কপাল যেসব মেয়ের থাকে তাদের জীবনে বারবার দুর্ভাগা এসে ভর করে। কিন্তু যাদের কপালের গড়ন হয় অর্ধচন্দ্রাকৃতির আর মাথার চুলগুলো থাকে আনুভূমিক তাদের সৌভাগ্যবতী বলে ধরে নেয়া হয়। যাদের মাথার সমমুখভাগ থাকে সোজা তারাও এই দলের অন্তর্ভুক্ত। আর মাথা যদি একটু উঁচু-নিচু মানে বাঁকা টাইপ হয় তবে তাদের জীবন সুখের হয়! কিন্তু যাদের মাথা বৃত্তের মতো গোলাকার তাদের অনেক দুঃখ পোহাতে হয়। কিন্তু কোনো ছেলের যদি গোলাকার মোটা মাথা থাকে তবে সে কর্মক্ষেত্রে ভালো প্রশাসক হয়। ছেলেদের মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল মানেই বুদ্ধি আর নানা গুণের সমন্বয়। আর যদি মাথা লম্বার চেয়ে চওড়ায় বেশি হয় কিংবা মাথা ছোট হয় তবে তাদের জীবনে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। যাদের কপাল চওড়া থাকে তারা পরবর্তী জীবনে হয় বুদ্ধিমান এবং শিক্ষিত। আর ছোট কপালের অধিকারীরা বেশ গরিব হয় এবং তারা নাকি বেশিদিন বাঁচে না।

নানা রকম ব্যাপার-স্যাপার
যে মেয়ের চোখ বড়, চওড়া এবং লাল বহিরাবরণের মধ্যে কালো মণি সে সৌভাগ্যবতী এবং সমাজে নেতৃত্ব দেয়। আর এর উল্টো বৈশিষ্ট্যের চোখের অধিকারিণীরা জীবন কাটায় নানা যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে। কালো এবং গোল চোখের মেয়েরা ছেলেদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়। কিন্তু এদিকে আবার লাল চোখের ছেলেরা সবার কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হয়। যাদের চোখটা কোটরের বেশ গভীরে থাকে তারা খুবই দুষ্টু হয়। যেসব ছেলের ভ্রূ ধনুকের মতো বাঁকা হয় তারা সম্পদশালী হয় এবং তাদের জীবন বেশ আরামে কাটে। আর যাদের ভ্রূ মাছের মতো দেখতে হয় তাদের মধ্যে চুরির প্রবণতা দেখা যায়! যদি ভ্রূতে চুল কম থাকে তবে সে হয় গরিব আর দুর্ভাগা। আর মেয়েদের ক্ষেত্রেও ধনুকের মতো বাঁকা যাদের ভ্রূ তারা অনেক গুণে গুণান্বিত থাকে। আর সৌন্দর্য তো আছেই। এবার আসা যাক নাক প্রসঙ্গে। যে মেয়ের নাক তোতাপাখির মতো ঝোলানো সে চালাক-চতুর আর পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়। ছেলেদের নাকের ক্ষেত্রেও একথা সত্যি। তবে যে ছেলের নাক খুব বেশি লম্বা সে নাকি নির্লজ্জ হয়! আর নাক ছোট হলে হয় ধর্মপরায়ণ, মহৎপ্রাণ, নিপাট ভালো মানুষ। আর কানের ব্যাপার বললে নরম, লম্বা কানের মেয়েরা জীবনকে ভালোভাবে উপভোগ করে। কিন্তু লম্বা কানওয়ালা ছেলেরা খুব কমই বুদ্ধিমান হয়। তবে ছোট কানওয়ালা ছেলেরা বোকা হয়। যেসব ছেলের কান পাতলা গড়নের হয় তারা নেতা হয়।

মিষ্টি হাসির রহস্য
ফিজিওনমিতে চিবুক, ঠোঁট, দাঁত, জিহ্বা আর গলার স্বর নিয়েও আছে মজার মজার সব তথ্য। যেসব মেয়ের চিবুকের রঙ লাল হয় তাদের সবাই খুব পছন্দ করে। আর উঁচু চিবুকের ছেলেরা হয় স্বার্থপর। চিবুকের পরে আসুক ঠোঁটের কথা। আর মেয়েদের ঠোঁট নিয়ে যে কত কথা প্রচলিত তার কোনো ইয়ত্তা নেই। যদি কোনো মেয়ের ঠোঁট হয় রক্তিম, পাতলা, নরম এবং দুই ভাগ সমান্তরাল গড়নের তবে সে খুব আকর্ষণীয় হয় ছেলেদের কাছে। আর বিয়ের পর তারা স্বামীর অনেক ভালোবাসা পায়। পাতলা ঠোঁটের ছেলেরাও বুদ্ধিমান হয়। কিন্তু ঠোঁট লম্বা হলে ছেলেদের দুর্ভাগা থাকে পদে পদে। দুর্ভাগা সেসব মেয়েরও যাদের দাঁতের মধ্যে ফাঁক থাকে। তবে তার জিহ্বার রঙ যদি লাল হয় তাহলে কিন্তু সৌভাগ্য ফেরার সম্ভাবনা আছে।

আপাদমস্তক
যেসব মেয়ের বাহু সোজাসুজি, নরম, চুলহীন এবং সুগঠিত থাকে তারা প্রায় সব কাজেই ভালো করে। কিন্তু যাদের হাত খুব বেশি লম্বা তাদের অবশ্য চিন্তার কারণ আছে। তবে হাতের আঙুল যদি হয় লম্বা, পাতলা আর নরম তাহলে সৌভাগ্য তাকে হাতছানিতে ডাকছে। একথা তাদের জন্যও প্রযোজ্য যাদের পায়ের পাতা হাঁটার সময় মাটি সপর্শ করে। কিন্তু হাঁটু যদি লম্বা আর শক্ত হয় তবে ধরে নিতে হবে সে দরিদ্র! তবে ফিজিওনমি ঘেঁটে ছেলেদের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিশ্লেষণের আগে
ফিজিওনমি ব্যাপারটা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আরো অনেক বিষয় নিয়েই বিশ্লেষণ চলে এ বিদ্যায়। ফিজিওনমির জন্য তো মেয়েদের শরীরকেই ভাগ করা হয় ৩২ ভাগে! কাজেই বুঝতেই পারছো আরো কত কী বাকি থেকে গেল। তবে একটা কথা বলে দেয়া দরকার, ফিজিওনমি ব্যাপারটা যে সবসময় পুরোপুরি মিলে যাবে তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো একটু এদিক-সেদিক তো হতেই পারে। জেনে তো নিলে ফিজিওনমির মজার মজার তথ্য। সুতরাং এসব কিছুই মিলিয়ে নাও তোমাদের পরিচিত-অপরিচিত মানুষগুলোর সঙ্গে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই তোমার নিজের সঙ্গেও।

বুদ্ধি বাড়াবেন কী করে


বুদ্ধি নিতান্ত কম ছিল বলেই না কালিদাস যে ডালে বসেছিলেন সেই ডালই কাটছিলেন! কিংবা আইনস্টাইন কলেজের এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন! অথবা রবীন্দ্রনাথ স্কুলের গণ্ডিই পেরোতে পারলেন না! এরা সবাই মনীষী বলে এখন দিব্যি লুটছেন, কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েদের বেলায় এরকম ঘটলে যে আমরা কী করতাম ভেবে দেখেছেন? হয় বলব তারা বোকা কিংবা তাদের বোধবুদ্ধি এক্কেবারেই নেই, তাই তো? ঠিক তাই! তবে মন্তব্যটা হবে আংশিক সত্যি। কারণ বুদ্ধি কোনো একটা নিদিষ্ট বিষয় নয় যা কিনা কয়েকটি বিশেষ আচরণে গণ্ডিবদ্ধ করা যায়। যেমন কালিদাসের বাস্তব বুদ্ধি ছিল না বলেই তিনি যে ডালে বসেছিলেন সেই ডালই কাটছিলেন! কে জানে তখন হয়তো তিনি গাছের ওপর বসে মেঘের কাছাকাছি গিয়ে সে দিকে তাকিয়ে তার আগামী কাব্যের ভাবনা কুড়োচ্ছিলেন।
যে মানুষটা থিওরি অব রেলেটিভিটি আবিষকার করেছিলেন, তার মগজ হয়তো প্রাত্যহিক পড়াশোনার জন্য তৈরি ছিল না! অন্যদিকে বেঙ্গল রেনেসাঁসের ফার্স্ট ফ্যামিলি ঠাকুর পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্যটি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে না পারলেও তার মনীষার স্ফূরণ বিচ্ছুরিত হতে শুরু করেছিল নেহাতই ছোটবেলা থেকে নানা সৃষ্টিতেই। এরা প্রচলিত পথে এগোননি বলেই এদের বুদ্ধি কম তা অবশ্যই বলা যাবে না। আসলে বুদ্ধি মগজের কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় নিহিত থাকলেও তার প্রকাশ ঘটে নানা স্তরে, নানাভাবে।
বুদ্ধির মানে
বুদ্ধি কেবল জন্মসূত্রে পাওয়া যায়-এই ধারণাটা ঠিক নয়।

স্মরণশক্তি লোপের ১০টি কারণ


পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই মনে হয় তাদের স্মরণশক্তি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। কারো কারো মধ্যে সব সময়ই একটি ধারণা কাজ করে, তার স্মরণশক্তি কম। অনেক স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রী আছে যারা একটি বিষয় দু-একবার পড়ে স্মরণ রাখতে না পেরে অগত্যা স্মরণশক্তিকে দায়ী করে। অনেকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। কিছু কিছু অভিভাবক আছেন যারা তাদের সন্তানদের স্মরণশক্তির ব্যাপারে অতি উৎসাহী এবং এ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা না থাকার পরও তা বৃদ্ধি করার মহৌষধ খুঁজতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করার সে রকম কোনো মহৌষধ নেই। কোনো মানুষ যদি নিজের স্মরণশক্তির ব্যাপারে সন্তুষ্ট না হন এবং যদি সব সময়ই একটি ধারণা করেন যে তার স্মরণশক্তি কম, তাহলে এটা থেকে ধীরে ধীরে হতাশা এবং বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। আর এ হতাশা এবং বিষণ্নতা দীর্ঘস্থায়ী হলে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে। অবশ্য এ সমস্ত ক্ষেত্রে হতাশা এবং বিষণ্নতার সঠিক চিকিৎসা করলে স্মরণশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তা আগের অবস্থায় ফিরে আসে। স্মরণশক্তিহীনতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি বৃদ্ধ বয়সের রোগ। তবে ক্ষেত্রবিশেষে কম বয়সেও এ রোগ দেখা দিতে পারে।
যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি তারা অধিক হারে স্মরণশক্তি লোপজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্মরণশক্তি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬৫ বছরের অধিক বয়সের মানুষ কমপক্ষে ১০ শতাংশ স্মৃতিশক্তি লোপজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। বয়স বৃদ্ধি পাবার সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যাটিও আরো বৃদ্ধি পায়। আশি বছরের অধিক বয়সী বৃদ্ধরা ২০ শতাংশ স্মৃতিশক্তি লোপজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। স্মৃতিশক্তি লোপ সমস্যা সাধারণত দুই ধরনের। একটি হলো মস্তিষেকর নিজস্ব কারণজনিত সমস্যা। অপরটি মস্তিষেকর বাইরের অন্য কোনো অঙ্গ বা সিস্টেম আক্রান্ত হবার ফলে মস্তিষেক সৃষ্ট সমস্যা। মানুষের মস্তিষককে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। বাইরের স্তরকে বলে কর্টেক্স এবং ভেতরের স্তরকে বলে মেডুলা। মানুষের স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে প্রধানত বাইরের কর্টেক্স স্তরটি। যে সমস্ত অসুখে কর্টেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে সমস্ত অসুখেই স্মরণশক্তি লোপ পায়। স্মরণশক্তি লোপ পাওয়া শুধু একটি রোগ নয়। এটি একটি সামাজিক সমস্যাও। স্মৃতিশক্তি লোপ পেলে মানুষের আচার-আচরণ, আবেগ-ব্যক্তিত্ব সব কিছুতে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে নানাবিধ সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। অনেক কারণেই স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে। নিচে স্মরণশক্তি লোপ পাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি কারণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
কারণ-১
মস্তিষেকর ক্ষয়রোগঃ কিছু কিছু অসুখ আছে যাতে মস্তিষেকর স্মরণশক্তি নিয়ন্ত্রণকারী কর্টেক্স ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে। ফলে স্মরণশক্তি লোপ পায়। আলঝেইমারস এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ। আলঝেইমারস একটি দীর্ঘস্থায়ী মস্তিষক ক্ষয়কারী রোগ, যেটি হলে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পেতে একজন মানুষ সম্পূর্ণ স্মরণশক্তিবিহীন হয়ে যেতে পারে। আলঝেইমারসের সঠিক কোনো কারণ আবিষকৃত হয়নি, তবে জিনঘটিত সমস্যা এবং অধিক বয়সকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আলঝেইমারস ছাড়া আরো কিছু রোগ আছে যেগুলো মস্তিষেকর ক্ষয়সাধন করে থাকে। এদের মধ্যে হানটিংটনস, পারকিনসন্স, লিউয়িবডি ডিমেনশিয়া প্রভৃতি রোগের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


কারণ-২
মস্তিষেকর রক্তনালির রোগঃ মস্তিষেকর ছোট অথবা বড় যে কোনো ধরনের রক্তনালি ব্লক হয়ে গেলে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। রক্তনালি ব্লক হয়ে যাওয়ার ফলে মস্তিষেকর কর্টেক্স অংশে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। এছাড়া স্ট্রোক করার পর অথবা মস্তিষেক রক্তনালির প্রদাহের ফলে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে।

কারণ-৩
ব্রেন টিউমারঃ ব্রেন টিউমারকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো ব্রেনের নিজস্ব কোষে সৃষ্ট টিউমার এবং অন্যটি শরীরের অন্য কোনো জায়গার টিউমার রক্ত বা লসিকা দ্বারা বাহিত হয়ে ব্রেনে জমা হওয়ার ফলে সৃষ্ট টিউমার। ব্রেনের নিজস্ব কোষে টিউমার হলে স্মৃতিশক্তি সাধারণত তেমন লোপ পায় না। কিন্তু রক্ত বা লসিকা দ্বারা বাহিত ব্রেন টিউমার হওয়ার ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। ব্রেন টিউমার ছাড়াও ব্রেনের ভেতর রক্তক্ষরণের পর জমাট বাঁধা রক্তের কারণে কর্টেক্সে চাপ পড়লে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে।

কারণ-৪
মস্তিষেক আঘাতঃ সড়ক দুর্ঘটনার ফলে অথবা অন্য যে কোনো দুর্ঘটনায় মস্তিষক মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। অনেক সময় বক্সিং খেলায় একজন বক্সার তার প্রতিপক্ষের মাথায় জোরে আঘাত করে থাকেন। আর এভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে।

কারণ-৫
ভিটামিনের অভাবঃ ভিটামিনের অভাবে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে। যে সমস্ত ভিটামিনের অভাবে স্মরণশক্তি লোপ পায় সেগুলো হলো- ভিটামিন বি১ বা থিয়ামিন, ভিটামিন বি১২ এবং নিয়াসিন। যেসব পরিবারের খাদ্যতালিকায় এসব ভিটামিন দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকে তাদের পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিশক্তি লোপজনিত সমস্যায় ভুগতে পারেন।

কারণ-৬
মস্তিষেক বিষক্রিয়াঃ যারা দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকোহল সেবন করেন তাদের দেহে ভিটামিন বি১ বা থিয়ামিনের অভাব দেখা দেয়। ফলে স্মরণশক্তি হ্রাস পায়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকোহল সেবন করলে মস্তিষেকর কর্টেক্সের আকার হ্রাস পায়। ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। অ্যালকোহল ছাড়াও যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানায় কাজ করেন তাদের মস্তিষেক বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ জমা হয়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে এবং স্মরণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। যারা সিসার ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন তাদের মস্তিষেক সিসা জমা হওয়ার ফলে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে।

কারণ-৭
মস্তিষেক রোগজীবাণুর আক্রমণঃ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক দ্বারা মস্তিষেক প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। ফলে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে। সিফিলিস হলে যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয় তাহলে দুই থেকে তিন বছর পর মস্তিষক আক্রান্ত হতে পারে। এটিকে বলা হয় ‘নিউরোসিফিলিস’। নিউরোসিফিলিসে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। তাছাড়া এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও স্মরণশক্তি লোপজনিত সমস্যায় ভুগতে পারেন।

কারণ-৮
মস্তিষেক অক্সিজেনের ঘাটতিঃ যেসব রোগ হলে মস্তিষেক রক্ত সরবরাহ কমে যায়, সেসব রোগে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে। হার্টফেইলর এ রকম একটি রোগ। তাছাড়া ফুসফুস বিকল হয়ে গেলে কিংবা কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার ফলে মস্তিষেক অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে এ থেকে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে।

কারণ-৯
হরমোনের ঘাটতিঃ থাইরয়েড এবং প্যারাথাইরয়েড হরমোনের অভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। তাই হাইপোথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতাজনিত রোগ এবং হাইপোপ্যারাথাইরয়েডিজম বা প্যারাথাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতাজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মরণশক্তি হ্রাস পেতে পারে।

কারণ-১০
প্রিয়ন রোগঃ প্রিয়ন রোগ মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীরও হয়ে থাকে। এ রোগ হলে মস্তিষক সপঞ্জের মতো হয়ে যায় এবং মস্তিষেকর নিউরনের সংখ্যা হ্রাস পায়। মানুষ আক্রান্ত হয় এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রিয়ন রোগের নাম হলো ক্রোজফেল্ট জ্যাকব রোগ। বিশ্বব্যাপী রোগটির প্রাদুর্ভাব রয়েছে। প্রতি দশ লাখে একজন লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ হলে খুব দ্রুত স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। এর কোনো চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত ৪-৬ মাসের মধ্যে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

টেনশন কমানোর ২৩টি উপায়


উদ্বেগ সমস্যার পাশাপাশি প্যানিক শব্দটা চলে আসে। এটি উদ্বেগের একটা পুঞ্জীভূত রূপ। ব্যক্তি মনে করে বসেন পুরো শরীর দুর্বল আর ভেঙে আসছে, হৃদকম্প থেমে আসছে। মৃত্যুর সময় যেন আসন্ন। ঘাবড়ে যাবার কোনো কারণ নেই। আতঙ্ক প্রবলভাবে চেপে বসলেও তা কখনোই প্রাণে মারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ সমস্যাগ্রস্তদের অ্যাসোসিয়েশন কতগুলো গোল্ডেন রুল শিখিয়ে থাকে। আপনিও তা চর্চা করতে পারেন। যদি এ সমস্যা থাকে তাহলে দেখবেন কতটা স্বাচ্ছন্দ্য আর সাবলীলভাবে তা অতিক্রম করে যাচ্ছেন। মাত্র দশটা নির্দেশনা আজই মনে গেঁথে নিন।
১. সব সময় আশ্বস্ত থাকবেন এজন্য যে, এ সময়কালীন অনুভূতি আর উপসর্গগুলো বেশ ভীতিপ্রদ মনে হলেও তা মারাত্মক ও ক্ষতিকর কোনোটাই নয়।
২. অনুধাবন করুন এর শ্বাসক্রিয়া বা হৃদকম্পন হার বেড়ে যাওয়া উদ্দীপকে দেহজ স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার অতিরঞ্জন। এতে বিপদ ঘটতে যাবে কেন? কিছুক্ষণ দৌড়াতে হলে বা সিঁড়ি দিয়ে দশ কদম উঠলেই তো আগের শ্বসনহার বা হৃদকম্পন বেড়ে যায়। এ জরুরি অবস্থা তো আসলে সে ধরনের ঘটনা।
৩. স্থির হোন। হৃদকম্পন বা শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যাওয়া এ জাতীয় উপসর্গগুলোর ওপর মনস্থির করুন, দেখবেন এগুলোর তীব্রতা বা হার ক্রমশ কমে আসছে।
৪. কখনোই চিন্তা করতে যাবেন না এর ক্রমপরিণতি কেমন হবে। যদি মনে প্রশ্ন আসে, কী হবে? মনকে বুঝ দিন তাতে কি এসে-যায়!
৫. পরিণতির কথা চিন্তা না করে বর্তমান সমসাময়িক চিন্তা মাথায় আনুন। উপসর্গগুলোর ওপর মন দিন। দেখবেন আশঙ্কার চিন্তার অনেকটা কমে এসেছে।
৬. প্রথম হতেই নিশ্চিত ধরে নিন উপসর্গ ক্রমশ বাড়তে থাকলেও একটা নির্দিষ্ট মুহূর্ত হতে তা কমতে থাকবে। এমনকি আপনি মনোনিবেশ করতে পারেন-উপসর্গ ক্রমশ পর্যায়ক্রমিক ধারায় বেড়ে যাচ্ছে আর এক সময় কমতে শুরু করেছে।
৭. যখনই আপনার মনে হবে ভয় ক্রমশ পুঞ্জীভূত হচ্ছে তখন মনকে অন্য কাজে নিবিষ্ট করুন। তা হতে পারে স্রেফ শার্টের বোতামগুলো পুনর্বার লাগানো, শার্ট-প্যান্ট ঠিক করে নেয়া।
৮. প্রাক নির্দেশনা হতে অনুধাবন করে নিন যে কোনোভাবে আতঙ্কের উদ্দীপনাকে সরিয়ে দিলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে। সুতরাং উদ্বেগ-উদ্দীপনাকে তাড়ানোর বিকল্প বের করে আনুন।
৯. মনের মাঝে চলে আসা ভয়কে যখন কোনোভাবেই তাড়ানো যাচ্ছে না তখন তাকে স্বাগত জানান, পর্যবেক্ষণকারীর ভূমিকায় তাকে দেখুন, নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কিন্তু অল্প সময় ব্যবধানে তা ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে। উদ্বেগ আতঙ্কের ক্ষমতা সীমিত, আর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা অবলম্বন করে আরো দুর্বল করে দেয়। ব্যাপারটা অনেকটা পুলিশের নীরব পর্যবেক্ষণের ভূমিকা নেয়ার মতো। চোর তখন প্রাণ বাঁচাতে চুপিসারে সরে যায়।
১০ নিজেকে পুরস্কৃত করুন। গর্ববোধ করতে পারেন, উদ্বেগ আপনাকে আর কাবু করতে পারছে না। বরঞ্চ আপনিই তাকে ঘায়েল করতে বসেছেন। এ মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করুন। দেখবেন উদ্বেগ আর কাছে ভিড়ছে না।
কিছু বাড়তি উপদেশ
যখন উদ্বেগ উপসর্গগুলো যেমন হাত কাঁপা, ঘামানো, হৃদকম্পন হার বেড়ে যাওয়া ঘটতে থাকে তখন নিচের নির্দেশনাগুলো প্রয়োগ করুন। দেখবেন উপসর্গের তীব্রতা কমে আসছে ক্রমশ।

১১.        নাক দিয়ে হাল্কা মাত্রায় দম নিন-ছাড়তে থাকুন।
১২. আপনার আশপাশের কোনো জিনিস যেমন-দেয়াল, হাত দিয়ে সপর্শ আর অনুভব করতে পারেন।
১৩. নিজেকে আশ্বস্ত করতে থাকুন-এতে ভয় বা ক্ষতি বা বিপদের কোনো ঝুঁকি নেই।
১৪. নিজেকে আশ্বস্ত করুন-এগুলো ক্ষণস্থায়ী, আপনা হতে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
১৫. দূরের নীলাকাশের দিকে মনোনিবেশ করুন।
১৬. মন হতে সবকিছু বের করে দিন। একদম ফাঁকা, কিছুই নেই। কোনো অনুভূতিই নেই।
১৭. মেডিটেশন চর্চা করুন।
১৮. গুন গুন গুঞ্জন শুরু করে দিন।
১৯. হাতের বইটা পড়া শুরু করে দিতে পারেন।
২০. পাশের বন্ধুর সাথে আলাপচারিতা শুরু করে দিন।
২১. হাঁটতে শুরু করুন।
২২. গরম পানিতে গোসলে নেমে পড়তে পারেন।
২৩. বাড়ির দেয়াল বা গাড়ি পরিষকারের কাজে নেমে পড়ুন।
মানে এমন কিছু করুন যা আপনার মনোযোগকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাবে। সমস্যা তো মনের, সুতরাং তাৎক্ষণিক উপশম!

শিশুর বাড়তি খাবার কেন দরকার


  • ৬ থেকে ৮ মাস বয়সী শিশুকে দিনে অন্তত ২-৩ বার বাড়তি খাবার খাওয়ান, পাশাপাশি বুকের দুধ খাওয়ানো অবশ্যই চালিয়ে যাবেন।
  • ৯ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুকে দিনে অন্তত ৩-৪ বার বাড়তি খাবার খাওয়ান। পাশাপাশি বুকের দুধ খাওয়ানো অবশ্যই চালিয়ে যাবেন।
  • পরিবারের স্বাভাবিক খাবার থেকে শিশুর বাড়তি খাবার তৈরি করে খাওয়ান।
  • বাড়তি খাবার হিসেবে শিশুকে চাল-ডাল-তেল-সবজি দিয়ে নরম খিচুড়ি তৈরি করে অথবা পরিবারের স্বাভাবিক খাবার থেকে নরম করে সঙ্গে এক চামচ অতিরিক্ত তেল মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
  • সহজে পাওয়া যায় এমন ফল-কলা, পেঁপে, আম ইত্যাদি শিশুকে সাধ্যমতো খাওয়াতে হবে।
  • প্রতি মাসে শিশুর ওজন বাড়ে। তাই শিশুর ওজন ঠিকমতো বাড়ছে কি না জানার জন্য প্রতি মাসে শিশুকে পুষ্টি কেন্দ্রে নিয়ে ওজন করে নিন। বৃদ্ধি সম্পর্কে জানুন ও পরামর্শ গ্রহণ করুন।
  • অসুস্থ শিশুকে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে পারেন।
  • ৬ মাসের কম বয়সী শিশুর জন্য বুকের দুধই সেরা খাদ্য।
  • অসুস্থ শিশুকে তার প্রিয় খাবারগুলো বারবার খেতে দিন।
শিশুর খাদ্য কীভাবে রাখবেন
শিশু একবারে যে খাবার খেতে পারে সেই পরিমাণ খাদ্য তৈরি করতে হবে। তৈরি অতিরিক্ত খাবার পরিবারের অন্যরা খেয়ে নেবে। শিশুদের খাবার-দাবার সহজেই নষ্ট হয়ে যায়, বিশেষ করে দুধ। মায়ের দুধে অবশ্য এসব ঝামেলা নেই। তবে যেসব মা চাকরি করেন বা বেশির ভাগ সময় ঘরের বাইরে কাটান তারা বুকের দুধ হাত দিয়ে চেপে বের করে কাপ বা বাটিতে রেখে যেতে পারেন। মায়ের বুকের দুধ বাইরে রাখলে ৮ ঘণ্টা এবং ফ্রিজে রাখলে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে। গরুর দুধ খাওয়ানোর আগে প্রতিবারই অন্তত ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। খোলা রাখলে কৌটার গুঁড়োদুধ সহজে নষ্ট হয়ে যায়। কৌটার গায়ে ‘ব্যবহার সীমার তারিখ’ দেখে নেবেন এবং কৌটা সর্বদা শুকনা ও ঠাণ্ডা জায়গায় রাখবেন। নতুন কৌটা খোলার পর ৩ সপ্তাহের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয় এবং প্রতিবার খোলার পর ভালোভাবে ঢাকনা লাগিয়ে বন্ধ করে রাখবেন। কৌটার দুধ শিশুকে খাওয়ানোর আগে প্রতিবার তৈরি করবেন। ২-৩ বার খাওয়ানোর জন্য একবারে দুধ তৈরি করবেন না। তরল বা গুঁড়োদুধে কখনো হাত লাগাবেন না। তরল দুধে কখনো আঙুল ডুবিয়ে গরম পরীক্ষা করবেন না। নিজের হাতের পিঠে কয়েক ফোঁটা দুধ ঢেলে গরম পরীক্ষা করুন।

সুজি, খিচুড়ি ইত্যাদি বা অন্যান্য রান্না করা খাবার ফ্রিজে না রাখলে রান্নার ২ ঘণ্টা পর থেকে নষ্ট হওয়া শুরু করে। অতএব রান্না করা খাদ্য ২ ঘণ্টা পর শিশুকে খাওয়াবেন না। আর রান্নার ২ ঘণ্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখলে ভাত ব্যতীত অন্যান্য খাবার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে খাওয়ানো যায়, তবে ২৪ ঘণ্টার বেশি না রাখাই ভালো। ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার বেশি সময় রেখে কোনো খাবার খাওয়ানোর ইচ্ছা থাকলে তা ডিপফ্রিজে রাখুন। মনে রাখবেন বারবার ফ্রিজ খুললে বা ফ্রিজের দরজা অনেকক্ষণ ধরে খুলে রাখলে ফ্রিজের ভেতরের ঠাণ্ডা তাপমাত্রা সঠিক থাকে না। খাওয়ানোর আধঘণ্টা আগে ফ্রিজ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য বের করে ঢেকে রাখুন, ঠাণ্ডা কেটে গেলে শিশুকে খেতে দিন অথবা ফ্রিজ থেকে বের করার পর খাবারের পাত্রটি একটি গরম পানির পাত্রে আধাআধি ডুবিয়ে রেখে ঠাণ্ডা কাটিয়ে নিন। অবশেষে মনে রাখবেন আপনি যত যত্ন করেই শিশুর খাবার বানান না কেন বা সংরক্ষণ করুন না কেন খাওয়ানোর সময় অপরিষকার হাতের সপর্শ, দূষিত পানিতে ধোয়া, অপরিষকার পাত্র বা চামচ দিয়ে খাওয়ালে শিশুর পেটে অসুখ হবে। আরো লক্ষ করুন, ডিপফ্রিজে রাখা খাদ্যের মধ্যেও কিন্তু জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। তাই কাটা মাছ-মাংস ইত্যাদি ডিপফ্রিজ থেকে বের করে রেখে পুরোপুরি ঠাণ্ডা কাটিয়ে নেবেন, তা না হলে রান্না করার সময় মাছ বা মাংসের বড় টুকরার মধ্যবর্তী স্থানে ঠাণ্ডার কারণে ভালোভাবে তাপ নাও পৌঁছাতে পারে। তাপ ভালোভাবে না পৌঁছার কারণে ওই মধ্যবর্তী স্থানের জীবাণু ধ্বংস হবে না এবং ওই খাদ্য শিশু খেলে অচিরেই পেটের অসুখে আক্রান্ত হবে।

Tuesday, August 7, 2012

মাহে রমজানের অন্যতম অনুষঙ্গ ইতিকাফ




undefined

আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের মাধ্যমে আত্মোন্নয়নের মাস মাহে রমজান। খতমে তারাবিহ্র মতো ইতিকাফও মাহে রমজানের ইবাদতের আরেকটি অন্যতম অনুষঙ্গ। এ মাসে মোমিন বান্দারা যেমনি সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বপ্রকার পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে রিবত থেকে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের প্রত্যাশা করেন, তেমনি গুনাহ্ মাফ ও অধিকতর সওয়াব লাভের প্রত্যাশায় এ মাসের শেষ ১০ দিন পার্থিব সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করে খোদার একান্ত সান্নিধ্য অন্বেষণ করেন।
ইতিকাফ বলা হয় পুরুষের ক্ষেত্রে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয় এমন কোনো মসজিদে ইতিকাফের নিয়তে নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করা। আর নারীদের ক্ষেত্রে, নিজ গৃহের নামাজ আদায়ের স্থানে অথবা নির্জন কোণে অবস্থান গ্রহণ করা। মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন দুনিয়াবি সব কাজকর্ম এবং লেনদেন পরিত্যাগ করে মসজিদে অবস্থান করে সার্বক্ষণিক আল্লাহ্র ইবাদত-বন্দেগি, তসবিহ-তাহলিল, তিলাওয়াত-জিকির ইত্যাদি কাজে নিমগ্ন থাকার নাম ইতিকাফ।
ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, রমজান মাসের শেষ ১০ দিন পার্থিব সব কাজকর্ম, লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে সার্বক্ষণিকভাবে মসজিদে আল্লাহ্র ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন থাকার নিয়তে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। অর্থাৎ একটি মসজিদের সঙ্গে যত মুসল্লি নিয়মিতভাবে সংযুক্ত, তাঁদের মধ্য থেকে যেকোনো একজন ইতিকাফ আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। তবে কোনো একজনও যদি ইতিকাফ আদায় না করেন, সে জন্য ওই মুসল্লিদের সবাইকে সুন্নত ইবাদত ত্যাগের গুনাহ্র অংশীদার হতে হবে।
ইতিকাফকালে মুতাকিফ ব্যক্তির অপ্রয়োজনে মসজিদের বাইরে অবস্থান করা বাঞ্ছনীয় নয়। শুধু প্রাকৃতিক কর্মাদি সম্পাদন ও ওজু-গোসল ছাড়া তাঁর বাইরে অবস্থান করা যাবে না। ইতিকাফকারী ব্যক্তি খাওয়াদাওয়া, ঘুম ইত্যাকার কাজ মসজিদের ভেতরই সম্পন্ন করবেন। ভালো, জনকল্যাণকর ও সওয়াব পাওয়া যায় এমন কথাবার্তার বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে কথাবার্তা বলা উচিত নয়। ইতিকাফকারী ব্যক্তি ইতিকাফকালীন স্বীয় স্ত্রীর সঙ্গেও মেলামেশায় লিপ্ত হতে পারবেন না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেছেন, ‘যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা কোরো না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৭)
সম্ভব হলে সবচেয়ে ভালো ফজিলতপূর্ণ মসজিদে গিয়ে, যেমন মক্কা শরিফ কিংবা মদিনা শরিফে গিয়ে ইতিকাফ করা উত্তম। মহিলারা ঘরের কোনো একটি কোণে কাপড় অথবা চাদর দিয়ে আড়াল সৃষ্টি করে সেখানেই সার্বক্ষণিক অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। মহিলাদের ইতিকাফকালীন সাংসারিক কর্মকাণ্ড, পার্থিব কথাবার্তায় যত দূর সম্ভব কম অংশ নেওয়া উচিত।
ইতিকাফকারী ইতিকাফরত অবস্থায় জাগতিক কোলাহল থেকে নিজেকে মুক্ত করে সার্বক্ষণিক ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্র সান্নিধ্যে পৌঁছে দেন। তাই তাঁর ইতিকাফকালীন পুরো সময়টিই (ঘুমসহ) ইবাদতে অতিবাহিত হয়েছে বলে গণ্য হয়। রাসুল (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতিকাফে কাটাতেন। হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর অভ্যাস ছিল তিনি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারি) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর সহধর্মিণীরাও সেই সুন্নত পালন করতেন। (বুখারি) ইতিকাফের গুরুত্ব উল্লেখ করতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন সওয়াবের প্রত্যাশায় ইবাদতের নিয়তে ইতিকাফ করল, সে যেন ওই দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে গেল, যেদিন সে প্রথম পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।’
হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) ইতিকাফকারীদের মর্যাদা সম্পর্কে বলেন, ইতিকাফকারীরা পাপ থেকে বেঁচে থাকে এবং তার জন্য তার আমলনামায় সম্ভাব্য সব রকমের নেক আমলের সওয়াব লিখে দেওয়া হয়।’ (ইবনে মাজা)
রোজাদার ব্যক্তি যেমন দিনভর পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে মুক্ত থাকার সাধনা করবেন, তেমনি তারাবিহ্, তাহাজ্জুদ, কিয়ামুল লাইল ও ইতিকাফের মতো বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে কৃত পাপ মোচন করে নিষ্পাপ আত্মার ইনসানে কামেল তথা পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হওয়ার সাধনাও করবেন। এটিই মাহে রমজানের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে রোজাদার ব্যক্তির জন্য মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ উত্তম নিয়ামত। আমাদের যাঁদের রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে গিয়ে ইতিকাফ করার সুযোগ রয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই এই সৌভাগ্য অর্জন করতে পারি। ব্যস্ততার কারণে যাঁদের ১০ দিন সময় বের করা কঠিন, তাঁরা শেষ তিন দিন অথবা অন্তত এক দিন ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন হতে পারি। আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের প্রত্যেককেই এই সৌভাগ্য নসিব করুন।

Sunday, August 5, 2012

পরীক্ষা নিয়ে শারীরিক ও মানসিক চাপ

যেকোনো পরীক্ষাই টেনশনের উদ্রেক করে। পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা টেনশন কিংবা চিন্তা হওয়াটা দোষের কিছু নয়। পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা বা টেনশনের দরকারও রয়েছে। পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা টেনশন বা চিন্তাভাবনা পরীক্ষার প্রস্তুতিকে বেগবান করে তোলে, পড়াশোনায় গতি ফিরিয়ে আনে। সবকিছু মিলিয়ে একটি পরীক্ষা পরীক্ষার্থীর ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। পরীক্ষার প্রস্তুতিপর্বে শারীরিক চাপটাই প্রধান হলেও পরীক্ষার ঠিক আগে সাথে মানসিক চাপটাও যোগ হয়।
পরীক্ষাভীতি
কেউ কেউ পরীক্ষা নিয়ে বাড়তি মানসিক চাপের মধ্যে পড়েন। এই মানসিক চাপ অনেক পরীক্ষার্থীকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। পরীক্ষা নিয়ে টেনশন করেন না এমন পরীক্ষার্থী পাওয়া যাবে না। এই বিষয়টিকে বলা হয় পরীক্ষাভীতি। পরীক্ষা নিয়ে টেনশনের বিষয়টি নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। যেমন-যার প্রস্তুতি ভালো থাকবে তার টেনশনও কম থাকবে। প্রস্তুতি ভালো থাকার পরও কিছুটা টেনশন থেকেই যায়। কিন্তু অনেকে আছেন যারা অযথাই টেনশনে ভোগেন। প্রস্তুতি শত ভালো হওয়ার পরও এদের টেনশনের অন্ত নেই। এ রকম টেনশন মাস্টারদের নিয়েই বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। তবে পরীক্ষা শুরুর পর পর যখন পরীক্ষাগুলো ভালো হতে থাকে তখন এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের টেনশন ক্রমান্বয়ে কমে যায়।

নিজের ওপর আস্থা রাখতে হবে
নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্যই এদের টেনশন আর থাকে না। আর এক ধরনের পরীক্ষার্থী আছেন যারা সব সময়েই সবকিছু নিয়ে একটু কম টেনশন করেন। এরা প্রকৃতিগতভাবেই এই টেনশনহীনতা অর্জন করে থাকেন। এরা অল্প প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষা ভালো করেন কারণ এরা যা জানেন তা পরীক্ষার খাতায় লিখে আসতে পারেন। আরেকটা গ্রুপ আছেন যাদের প্রস্তুতি একেবারেই ভালো থাকে না, এদের কাছে যে কারণেই হোক পরীক্ষা কোনো গুরুত্ব বহন করে না। ফলে পরীক্ষা নিয়ে এদের কোনো টেনশনও হয় না। যাই হোক শরীরের ওপর পরীক্ষা মানসিক ও দৈহিক চাপ সৃষ্টি করে থাকে।

পরীক্ষার প্রভাবে প্রথমে আক্রান্ত হয় মন, পরে শরীর
পরীক্ষার সময় পড়াশোনা করতে হয়, প্রস্তুতির প্রায় পুরো ঘটনাটা ঘটে মস্তিষককে নিয়ে। মস্তিষ্কের প্রভাব পড়ে গোটা শরীরে। এ সময় মস্তিষ্কেকে একটু বেশি কাজ করতে হয়। অন্য সময় মস্তিষ্ক যে কাজ ছাড়া বসে থাকে তা কিন্তু নয়। মস্তিষ্ককে যে যত বেশি ক্রিয়াশীল রাখবে সে পরীক্ষায় তত বেশি ভালো করবে। অর্থাৎ যে নিয়মিত পড়াশোনা করবে তার মস্তিষক তত বেশি ক্রিয়াশীল থাকবে।

  • পরীক্ষার সময়ে মানসিক চাপের অন্যতম কারণ হচ্ছে এডরেনালিন নামক হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ। এডরেনালিন শরীরের জন্য একটি প্রয়োজনীয় হরমোন, যা শরীরকে সক্রিয় হওয়ার কাজে উদ্দীপনা জোগায়। কিন্তু অতি মানসিক চাপ এই এডরেনালিন হরমোনের নিঃসরণকে বাড়িয়ে দেয় এবং কিছু অস্বস্তিকর উপসর্গের সৃষ্টি করে। তবে শারীরিক পরিশ্রমে এই এডরেনালিন ব্যবহৃত হয়। তাই শারীরিক পরিশ্রমে এই এডরেনালিনের মাত্রা কমে আসে। সুতরাং অতি মানসিক চাপের ফলে নিঃসরিত এডরেনালিনের মাত্রা কমাতে হাল্কা ব্যায়াম করতে হবে। এই ব্যায়াম শরীরে উদ্যম ফিরিয়ে এনে মনকে চাঙ্গা করে তুলবে এবং অতি এডরেনালিনজনিত উপসর্গ যেমন-বুকের ধুকপুকানি, ঘনঘন শ্বাস, মাংসপেশির খিঁচুনি ভাব ইত্যাদি কমিয়ে আনবে।
  • পরীক্ষার সময় কায়িক পরিশ্রম না হলেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ক্ষুধা পায়। কিন্তু সাথে মানসিক চাপ যোগ হওয়ার ফলে মুখে রুচি থাকে না অনেকের। খাওয়ার সময় গিলতে অসুবিধা হয়, মুখ শুকিয়ে থাকে।
  • পরীক্ষার টেনশনে অনেকের মুখে এক ধরনের আলসার দেখা দেয়। এই আলসার খুবই কষ্টদায়ক। এই আলসারের নাম অ্যাপথাস আলসার। অন্যান্য মানসিক চাপ থেকেও অ্যাপথাস আলসার হতে পারে। তবে পরীক্ষার্থীদের মধ্যেই এটি বেশি দেখা যায়।
  • পরীক্ষার সময় অনেকেরই ঠিকভাবে ঘুম হয় না কিংবা নিদ্রাহীনতায় পেয়ে বসে অনেকের। এই নিদ্রাহীনতা পরীক্ষার্থীর জন্য সুফল বয়ে আনে না।
  • পরীক্ষার ঠিক আগে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে থাকে টেনশন আর ডায়রিয়ায়। এই ডায়রিয়া জীবাণুঘটিত ডায়রিয়া নয়। পরীক্ষার টেনশনের ফলে পরিপাকতন্ত্রের সংকোচন-প্রসারণ বেড়ে যায়। ফলে বারবার বাথরুমের চাপ দেখা দেয়, ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হতে থাকে।
পরীক্ষার সময় কেউ কেউ অমনোযোগী হয়ে পড়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছে এটিও একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। যার নাম অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিসঅর্ডার উইথ হাইপার অ্যাকটিভিটি। এই সমস্যায় আক্রান্ত পরীক্ষার্থী অমনোযোগিতার পাশাপাশি অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। এ জন্য সত্বর মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

টেক এক্সট্রা কেয়ার
এ সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শরীরে যাতে কোনো রোগ আক্রমণ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগ যেমন-ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বা জন্ডিস সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এই সব রোগ থেকে দূরে থাকার জন্য কোনোক্রমেই বাসি খাবার, বাইরের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে ফুটানো বিশুদ্ধ পানি।
  • পরীক্ষার সময় শরীরের জন্য বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। তবে যারা নিয়মিত সুষম খাবার গ্রহণ করে থাকে তাদের জন্য খুব বেশি বাড়তি খাবারের দরকার নেই। কিন্তু মস্তিষ্ককে সুস্থ ও কার্যকর রাখার জন্য শস্যদানাজাতীয় খাবার, দুধ, সবজি, ডিম গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • পরীক্ষার সময় পড়াশোনার সময়টি নির্দিষ্ট করে অতিরিক্ত রাতজাগা থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত রাত জেগে পড়াশোনা অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। মনে রাখতে হবে পড়াশোনায় মনোনিবেশের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ঘুমেরও প্রয়োজন রয়েছে।
  • প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে পড়াশোনার পর্ব শেষ করে কিছুক্ষণ রিলাক্স করতে হবে। কিছুটা সময় নিজের মতো উপভোগ করতে হবে। এতে রাতের ঘুমটা ভালো হবে।
নো টেনশন
  • পরীক্ষার আগে নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি অতি এডরেনালিনজনিত মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। তাই হাঁটতে হবে।
  • টেনশন কমানোর জন্য ইয়োগা বা যোগব্যায়াম কিংবা মেডিটেশন করা যেতে পারে। এতে শরীর কিছুটা রিলাক্স হয়। মেডিটেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এ সম্পর্কে আগে থেকে খোঁজখবর থাকলে ভালো। মেডিটেশন সম্পর্কে জানা না থাকলে দৈনিক ১৫ মিনিট চিৎ হয়ে শুয়ে চোখ বুজে বুকভরে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে ইতিবাচক চিন্তায় বা কল্পনায় আপন মনে হারিয়ে যেতে হবে।
পরীক্ষার টেনশন কমাতে অনেক সময় ট্র্যাংকুলাইজার জাতীয় ওষুধ গ্রহণের দরকার পড়তে পারে। যে কোনো ওষুধই এ সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা উচিত। না বুঝে বন্ধুর দেয়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করা এ সময়ে ঠিক হবে না। তাতে বিপদ হতে পারে।

রিভিশন ইজ দ্য বেস্ট
কোন বিষয়গুলো রিভিশন দিতে হবে তার একটা তালিকা তৈরি করে এ বিষয়ে একটা সাপ্তাহিক রুটিন তৈরি করে ফেলতে হবে।
পড়াশোনার ফাঁকে দৈনিক আধা ঘণ্টার একটা সেশন রাখা যেতে পারে রিভিশনের জন্য। রিভিশন পর্বে প্রশ্ন-উত্তরের ব্যবস্থা রাখা ভালো। একজন প্রশ্ন করবে অন্যজন উত্তর দেবে-এমনটি হলে ভালো হয়। শিক্ষকের সঙ্গে এই কাজটি করলে আরো ভালো। অবসর সময়ে বন্ধুর সঙ্গে এই কাজটি করা যেতে পারে। রিভিশনের সময় যে বিষয়গুলো মনে থাকছে না বলে মনে হবে সেগুলো নোট করে রেখে পরবর্তী সেশনে ওগুলো আলোচনা করতে হবে। রিভিশনের সময় শুধু উত্তরই নয় বিষয়টি আলোচনা করতে হবে।

পরীক্ষা নিয়ে নানা মিথ
অনেকেই মনে করেন পরীক্ষার আগে ডিম খেলে পরীক্ষায় গোল্লা পাবে। আসলে বিষয়টি একেবারেই মনগড়া। পরীক্ষার আগে ডিমের প্রয়োজন আছে শরীরের পুষ্টির জন্য।

পরীক্ষার আগে অনেকেই বেশি বেশি খেয়ে থাকেন। মনে করেন এ সময় বেশি খেলে মেধা বাড়বে। প্রকৃতপক্ষে এই ধারণা ঠিক নয়। এ সময়ে অতিভোজন অনেক সময় শরীরকে অলস করে তুলতে পারে, অতিরিক্ত ঘুমের উদ্রেক করতে পারে। যা পরীক্ষার প্রস্তুতিকে ব্যাহত করবে।
পরীক্ষার আগে চাঙ্গা থাকার জন্য অনেকেই চা-কফি গ্রহণ করে থাকেন। এই চা-কফি শরীরকে চাঙ্গা রাখে। কিন্তু অনেকেই এ সময় অতিরিক্ত চা-কফি গ্রহণ করে থাকেন, যা কিছুটা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত চা-কফি নিদ্রাহীনতা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি করতে পারে। কাজেই এ সময়ে চা-কফি গ্রহণ করা যাবে, তবে তা যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়। এ সময়ে দৈনিক ৪-৫ কাপ চা-কফি গ্রহণ করলে কোনো সমস্যা নেই। চা-কফির মধ্যে থাকে ক্যাফেইন।  এই ক্যাফেইন মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা চিন্তাশক্তিকে ঘোলাটে করে দিতে পারে।
রাত জেগে পড়াশোনা করার বিষয়টি পরীক্ষার প্রস্তুতির একটি প্রচলিত বিষয় হলেও এটি শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার্থীর জন্য সুফল বয়ে আনে না। পড়াশোনার জন্য সকাল বেলা, দুপুর ও সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সময়কে বেছে নেয়া ভালো। রাতে ও বিকেলের সময়টিকে রাখা যেতে পারে ঘুম ও বিশ্রামের জন্য। অনেকে বিকেল বেলা পড়তে অভ্যস্ত। এ সময়টাকে পড়াশোনার কাজে লাগাতে চাইলে একা একা না পড়ে ইতিপূর্বের পড়াগুলোকে যাচাই করে নেয়ার জন্য অন্যদের সাথে আলোচনা করা ভালো। বিকেলে পড়াশোনা নিয়ে ডিসকাশন খুবই কাজে আসে।
শুধু পড়লেই হবে না। পড়ে পড়ে অন্যের পড়া শুনতে হবে, একা লিখতে হবে। এভাবেই সম্পন্ন হবে প্রস্তুতি।

পরীক্ষার পূর্বরাত্রি, নো টেনশন, নো স্ট্রেস

  • পরীক্ষার আগের দিন কখনোই অতিরিক্ত পড়াশোনা করা যাবে না।
  • পরীক্ষার কেন্দ্র এবং পরীক্ষার সময় সম্পর্কে পরিষকার  ধারণা থাকতে হবে। পরীক্ষার দিন যাতে পরীক্ষার কেন্দ্র খুঁজে বের করতে না হয়। আর পরীক্ষার হলে পৌঁছানোর জন্য বাহন এবং পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখতে হবে।
  • পরীক্ষার আগের রাতেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ, প্রবেশপত্র ইত্যাদি একটি বাক্সে তৈরি অবস্থায় দেখে দিতে হবে।
  • আগের দিন বাড়তি ক্যাফেইন এবং নিকোটিন গ্রহণে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে কিছুটা সময় রিলাক্স করতে হবে
  • পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষা নিয়ে কোনো নেতিবাচক চিন্তা মাথায় ঢোকানো ঠিক হবে না। বন্ধুর সঙ্গে এই প্রশ্নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, এটা পড়া হয়নি, প্রশ্ন খুব হার্ড হবে শুনেছি- এ জাতীয় কথা চালাচালি না করাই উত্তম।
পরীক্ষা তো জীবনেরই অংশ, কাজেই...
টেনশন পরীক্ষার্থীদের অন্যতম সমস্যা। এই টেনশন দূর করতে পরীক্ষায় কৌশলগত প্রস্তুতির বিকল্প নেই। এছাড়া পরীক্ষার্থীকে প্রস্তুতি নিয়ে আস্থাশীল থাকতে হবে। পরীক্ষার্থীকে আশ্বস্ত করতে পরিবারেরও একটি ভূমিকা রয়েছে। টেনশন দূর করতে কনফিডেন্স নিয়ে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। মনে রাখতে হবে জীবনে পরীক্ষা থাকবেই। আর এই পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে পরীক্ষাকে জয় করতে হবে। পরীক্ষা ছাড়া জীবন হয় না। পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে না ভেবে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। কারণ জীবন এক চলমান প্রক্রিয়া, এই প্রক্রিয়ার ধাপে ধাপে রয়েছে পরীক্ষা। পরীক্ষা একটি স্বাভাবিক বিষয়। এটি জীবনেরই অংশ। কাজেই এ নিয়ে বাড়তি টেনশনের দরকার নেই। পরীক্ষার মধ্যে চড়াই-উতরাই থাকবে। কোন পরীক্ষা কার জীবনে সাফল্যের দ্বার খুলে দেবে তা কেউই জানে না। সুতরাং পরীক্ষা নিয়ে অযথা টেনশন নয়।

পরীক্ষার টেনশন কমাতে
সাখাওয়াৎ শরীফ
পরীক্ষা শব্দটি যে কোনো মানুষের ক্ষেত্রেই এক ধরনের ভীতি, যা স্বাভাবিক মাত্রায় কাজ করে। এটাই স্বাভাবিক, কারণ পরীক্ষা মানেই প্রত্যাশিত কোনো কিছু অর্জন। এই অর্জন যদি নিজের মতো হয় তাহলে এর যে কী সুখ তা যিনি এরূপ পরিণতির মধ্য দিয়ে অর্জন করেন তিনি সবচেয়ে ভালো উপলব্ধি করতে পারেন, বর্ণনা করতে পারেন, যা অন্যের পক্ষে ততটা যথার্থ হয় না। সুতরাং বুঝতেই পারছেন পরীক্ষা জীবনের সব ক্ষেত্রেই আমাদের প্রভাবিত করে। আর নিজেকে জানা কিংবা নিজেকে অন্যের সামনে উপস্থাপন করার সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম পরীক্ষা, তা তো আমরা বলতে পারি। তার মানে পরীক্ষা শব্দটিকে যদি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভাষায় বলি তাহলে বলতে পারি, পরীক্ষা হলো আমি আগে যা শিক্ষা অর্জন করেছি তা রাষ্ট্রীয় কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত কিংবা আমার জানার ও জ্ঞানের পরিধি পরিমাপ করার অনেক ব্যবস্থার মধ্যে একটি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের জ্ঞানকে প্রকাশ করার সুযোগ পাই, যার মধ্য দিয়ে সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জন করি। এই অর্জন যদি নিজের চাওয়ার মতো হয় তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু যদি পরীক্ষার ফল উল্টো হয় তাহলে তার যে কী কষ্ট তা ভুক্তভোগীরাই জানে। হয়তো এই কষ্ট কারো কারো স্বাভাবিক জীবনকে পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে, কেউ কেউ হয়তোবা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা যাতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে না পড়ি কিংবা মানসিকভাবে নিজেদের স্বাভাবিক রাখার জন্য যে বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের, বিশেষ করে ছোটরা যারা এখনো জীবনের অনেক পথ পাড়ি দেয়নি তারা মনে রাখবে-জীবন মানেই তো পরীক্ষা।
এই পরীক্ষাটাকে যদি আমরা জীবনের অন্যান্য খেলার মতো মনে করি এবং এই খেলা যদি নিজেদের উৎসাহিত করে, আনন্দ দেয়, তাহলে দেখবে এই খেলা খেলতে বেশি ভালো লাগবে। আর বেশি করে খেলা বা অনুশীলন মানেই তো নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং পরিপূরক হিসেবে কাজ করে থাকে। কোনো বিষয় দীর্ঘক্ষণ স্মৃতিতে রাখার উপায় মোটামুটি আমরা সবাই জানি, তা হলো বেশি করে অনুশীলন। এই অনুশীলনের কৌশল তোমরা হয়তো সবাই প্রয়োগ করে থাক। আমরা সবাই লক্ষ করি, যে বিষয়টি আমাদের কাছে ভালো লাগে তাকে আমরা বেশি করে পড়ি এবং মুখস্থও রাখতে পারি এবং অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলে থাকি, এই এই বিষয়ে আমি খুব ভালো করব। কিন্তু দুই-একটি বিষয়ে ভালো করব না। যখনই দু-একটি ভালো না করার বিষয় আসে তখনই আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ভুলে যাই অন্যান্য ভালো লাগার কিংবা ভালো করে পারার বিষয়গুলোর কথা। আবার কেউ দুই-একটি বিষয়ে শত চেষ্টা করেও ভালো কিংবা নিজের চাওয়ার মতো না পারায় সারা বছর মনের কষ্টে দুশ্চিন্তায় ভোগে।
ভালো করে না পারার বিষয়টি যখনই পড়ার প্রসঙ্গে আসে তখনই মাথায় ভর করে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক চিন্তা কিংবা এক ধরনের অস্থিরতা। পাশাপাশি নিজের মধ্যে কাজ করতে পারে-আমি এই বিষয়ে ভালো করতে পারব না কিংবা বুঝি না। এই বিশ্বাসই কিন্তু ওই বিষয়ের প্রতি আমাদের অনুশীলনের মাত্রা এবং মুখস্থ করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। মনে হয় যেন একে না রাখতে পারলেই ভালো। কারণ এক সময় দেখা যায় ওই বিষয়টির প্রতি আমাদের ভালো না লাগার অনুভূতি জন্ম নেয়। আমরা তাকে ঘৃণার চোখে দেখি। বাস্তবে আমরা যাদের ঘৃণা করি কিংবা যাদের দেখলে আমাদের খারাপ লাগে তাদের সঙ্গে আমরা কী রকম আচরণ করি? নিশ্চয়ই যাদের ভালো লাগে, যাদের সান্নিধ্য খুব প্রত্যাশা করি তাদের মতো নয়। মনে কর কোনো খারাপ লোক তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে, যাকে তুমি খুব অপছন্দ করো। সেই মুহূর্তটি কেমন লাগবে যদি মানুষটি প্রত্যাশিত কেউ হয়। এক্ষেত্রে আমরা যদি ব্যক্তিটিকে ঘৃণা না করে ভালোবাসি, ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে তার সঙ্গে মিশতে চেষ্টা করি, তার খারাপ দিকগুলো বিবেচনায় না এনে ভালো দিকগুলো নিয়ে তার সঙ্গে মিশি দেখবে খারাপ লাগার অনুভূতিও কেটে যাবে, এক সময় তার উপস্থিতিও সে রকম প্রত্যাশিত এবং ভালো লাগবে। পরীক্ষাকেও সে রকম ভালো লাগার বিষয় হিসেবে নিলে এর সঙ্গে জড়িত দুশ্চিন্তা, ভয় বা কষ্টের অনুভূতিগুলো সহজেই দূর করা যাবে।

ভালো ছাত্র

শুধুমাত্র পড়ার জন্য নয়, প্রাত্যহিক জীবন যাপনের একটা রুটিন করে ফেলুন। সর্য ওঠার পূর্বেই শয্যা ত্যাগ করুন। সকালে কোমল পরিবেশে স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে। মন তরতাজা থাকে-এ সময়ে পড়াশোনা ভালো হওয়ারই কথা। শ্রেণীকক্ষেপূর্ণ মনোযোগী হবেন। হাতের লেখা সুন্দর, সপষ্ট, দ্রুত করার চেষ্টা করুন। যে কোনো পড়ার পূর্বে নিজের অটুট সংকল্প বা আত্মবিশ্বাস একটু ঝালিয়ে নিন। বুঝে জেনে পড়ার চেষ্টা করুন।

অনুকূল পারিপার্শ্বিকতা
প্রত্যেকটা মানুষই অগাধ সহজাত প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সেই মানুষটি তার চেনা পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা, পারিবারিক প্রকৃতি, সামাজিক, আর্থিক ভেদাভেদ দেখে শেখে এবং এইভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে বড় হতে থাকে।
প্রচলিত একটা বাক্য আছে বনের বাঘে খায় না মনের বাঘে খায়। সহজ তো সহজই। কঠিনকে কঠিন করে দেখলে কঠিন আরো কঠিন হতে থাকে। কঠিন বিষয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। আর পজিটিভ মানসিকতা ‘আমি সব পারি’, ‘আমাকে সব পারতে হবে’। আমি আর দশটা মানুষের মতো মানুষ, তাহলে অন্য কেউ পারলে সেই কাজটি আমিও পারব।
এই কথাগুলো যদি আপনার মনের কথা হয় ছাত্র হিসেবে খারাপ হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।
ছাত্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য
থরে থরে সাজানো বই হরদম মুখস্ত করার চর্চা কিংবা পরীক্ষার খাতায় উগরে দিয়ে আসাই ছাত্রের কাজ নয়। ছাত্র জীবন হচ্ছে-
S-Study
T-Truthfulness
U-Unity
D-Desicipline
E-Education
N-Neatness
T-Tidiness
আপনি বলুন তো এসবের প্রত্যেকটা গুণ আপনি আজ থেকে অর্জন করতে থাকবেন। তাহলে আপনার সামনে সোনালী ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।
সাধনার সময়
ছাত্র জীবন সাধনার সময়। এটা কি কাউকে বলে দিতে হয়? শুধু স্মরণ করলাম।
বিশ্ব সংসারটাই ধ্যান আর জ্ঞানের। (ধ্যান+জ্ঞান=সফল জীবন) লক্ষ্য করুন সাধারণত যারা খোদা ভীরু তার জীবন যাপন একটু ভিন্ন ধাচের নিয়ম নিষ্ঠ। ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে এশার নামাজ পর্যন্ত নিয়ম মেনে চলার কারণে এমন অনেকের নামাজ পড়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নামাজে নিয়মের কারণে নামাজ পড়া হয়ে ওঠে না।
ভালো ছাত্র হওয়ার মন্ত্রজপ নেই। আছে আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায়, নিয়ম নিষ্ঠা, ধৈর্য, মনোযোগ, উচ্চাকাক্ষা, একাগ্রতা, ত্যাগের সুষম ব্যবহারিক বন্টনের মাধ্যমে আত্মোন্নয়ন।
আত্মবিশ্বাস
নিয়মনিষ্ঠা, অধ্যবসায়, মনোযোগ, উচ্চাকাক্ষা, একাগ্রতা উলেস্নখিত বিষয়গুলোকে ফর্মলা হিসেবে নিতে চাইলে নিতে পারেন। আত্মবিশ্বাসে আপনি হারকিউলিস। পড়াশোনার ব্যাপারে আপনার ত্যাগ, নিষ্ঠা, অধ্যবসায়ে আপনি অনমনীয়। অনেক ছাত্রকেই বলতে শোনা যায় ‘আমার মাথা ভালো না, পড়া মনে রাখতে পারি না, বলতে হবে তারা নিজেদেরকে গাইড করতে পারছেন না। সঠিক মনোযোগ ধরে রাখতে না পারার কারণেও এটা হতে পারে।
অধ্যবসায় এমন একটি জীবন গড়ে দিতে পারে-পরবর্তী জীবনে বুকের ছাতি সগৌরবে দু’ ইঞ্চি বেড়ে যাবে। আপনি পারেন না সবাই পারেন।
একথাটাই প্রতিদিন সকাল বিকাল গুনে গুনে ১০০বার করে আউড়ান। কাজ হয় কিনা দেখুন। সঙ্গে আপনার মরচে আত্মবিশ্বাসটাও দেখুন কেমন নড়েচড়ে ওঠছে কিনা দেখুন। আত্মবিশ্বাস আর অধ্যবসায় যিনি ১০০% দিতে পারছেন বাকি সব সমস্যাই ফুৎকারে উড়ে যাচ্ছে। ধৈর্য আর মনোযোগ দুটি ফাঁকা ঘরের মতো সেই ঘরে আপনি যা কিছু আপন করবেন তাই আপনার সম্বল।
উচ্চাকাক্ষা কার না আছে। কি বলুন, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনার নেই! নিয়মনিষ্ঠতা গ্রাহ্যতা যে কোনো মানুষের জন্যই অপরিহার্য। সুস্থতার জন্য হলেও আপনি নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য। সকাল-সন্ধ্যার পড়ার সময়ের হিসাব মেনে চলুন। খাওয়া দাওয়া, নিজের শারীরিক পরিচর্যা, দিবা নিদ্রা, পারিবারিক ও বন্ধুর সঙ্গ সবকিছুই আপনি রুটিনে নিয়ে আসুন। মুখস্ত করে সঙ্গে সঙ্গে না দেখে লিখে ফেলবেন। আজকের কাজ আগামী দিনের জন্য ফেলে রাখবেন না।
শুধুমাত্র পড়ার জন্য নয়, প্রাত্যহিক জীবন যাপনের একটা রুটিন করে ফেলুন। সর্য ওঠার পূর্বেই শয্যা ত্যাগ করুন। সকালে কোমল পরিবেশে স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে। মন তরতাজা থাকে-এ সময়ে পড়াশোনা ভালো হওয়ারই কথা। শ্রেণীকক্ষেপূর্ণ মনোযোগী হবেন। হাতের লেখা সুন্দর, সপষ্ট, দ্রুত করার চেষ্টা করুন। যে কোনো পড়ার পূর্বে নিজের অটুট সংকল্প বা আত্মবিশ্বাস একটু ঝালিয়ে নিন। বুঝে জেনে পড়ার চেষ্টা করুন।
স্মরণশক্তি
নিজের স্মরণশক্তির ওপর অগাধ আস্থা রাখতে শিখুন। ভাবুন আপনি যা পড়ছেন তা আপনি মনে রাখার ক্ষমতা রাখেন। মানুষের মস্তিষক একটা অসীম বড় কুঠুরি। সারা জীবন যা শিখবেন, দেখবেন মনে রাখার মতো ক্ষমতা তার আছে। প্রয়োজনে বিষয়বস্তু ভাষায় কঠিন থেকে ঝরঝরে সহজ সুপাঠ্য করে নেবেন।
বড় রচনাবলী মুখস্ত হতে না চাইলে ভাগ ভাগ করে অন্য কোনো ইন্টারেস্টিং বিষয়ের সঙ্গে মনছবি মিলিয়ে বা তারতম্য করে পড়তে পারেন। একবার ব্যর্থ হলে বারবার চেষ্টা করুন। আন্তরিকভাবে নিজেকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা পড়া মুখস্ত রাখতে পারেন না অথচ স্যাটেলাইট চ্যানেলে একবার শুনেই কোনো মুখস্ত বলে দিতে পারেন।
ভুলে যাওয়ার প্রবণতা
বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন মায়ের ইচ্ছায় ছয় বছর বয়সে বেহালা স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু্তু তার স্মৃতিশক্তি এত দুর্বল ছিলো দ্বিতীয় বারের প্রচেষ্টায় দশ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হতে পেরেছিলেন।
এসএসসি পাস করতেও তার দুবার পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো।
স্মৃতিশক্তি স্বল্পতার জন্য তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে অস্বীকার করেন। স্কুলে চাকরি খোঁজার চেষ্টায় গিয়ে পড়লেন বিপাকে। ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে তিনি কিছুই মনে রাখতে পারেন না। কোথাও তার চাকরি হলো না।
পরবর্তীতে টানা দুই বছর তিনি শুধু স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকলেন। তার পরের ইতিহাস সবার জানা-এর ঠিক ২০ বছর পর তিনি নোবেল বিজয়ী হন। এই রকম কিংবদন্তী হয়েছেন উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। টমাস আলভা এডিসন, ভাস্কর রঁদা, ইমাম গাজ্জালী, রোপদেব, মার্কিন প্রেসিডেন্ট উন্ড্রোউইলসন প্রত্যেকই প্রথম জীবনে স্মৃতিশক্তি নিয়ে বিপর্যস্ত ছিলেন।
মেধা বাড়ানো
মস্তিষক বেশি পরিমাণে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন সুসংহত মানসিক প্রস্তুতি। দৃষ্টিভঙ্গি গড়ূন সেভাবেই। নিজের মনের ইচ্ছাশক্তি ও তৎপরতার সম্পর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। এভাবে কয়েক দিন অনুশীলন করুন। আপনি সফল হবেন।
বুদ্ধি বিকাশ
শুধু পাঠ্য বই নয়, জ্ঞানের হাবিজাবি নয় হাল্কা জোকস, উপন্যাস, কবিতা পড়ূন। টিভি দেখুন, ছুটির দিনে বেরিয়ে পড়ূন একটু বেড়িয়ে আসুন।
আবেগ
আবেগ যদি ইতিবাচক ফলদায়ক হয় তাহলে আপনার আবেগ অতিমাত্রায় বেশি হলে ক্ষতি কি! আপনার সম্পদ হতে পারে এটা। আবেগের সঙ্গে জেদ ধরুন, আজকের পড়া পরিকল্পনা আজকেই নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর শেষ করবেন। জেদ/আবেগের ইতিবাচক চর্চা প্রতিদিন অনুশীলন করুন।
পড়া মুখস্ত করার সহজ উপায়
লেখাপড়ায় যারা অনিয়মিত কিংবা অমনোযোগী, তাদের কাছে মুখস্ত করার ব্যাপারটি বেশ জটিল। আপনি যদি মুখস্ত বিদ্যায় পারদর্শী না হন তাহলে নিচের কিছু নিয়ম মেনে দেখতে পারেন সফলতা সম্পর্ণ আপনার সদিচ্ছার ওপর।
  • হাত পা ধুয়ে, চোখে মুখে পানি দিয়ে কিংবা হাল্কা ব্যায়াম করে আপনি একনিষ্ঠতার প্রথম ধাপটি ঢুকে পড়ূন।
  • চেয়ারে বসে প্রথমে নিজেকে বলুন, এখন আমি চলমান জীবন থেকে অন্য ভুবনে চলে গেছি। এখানে আমার স্বজন বই, খাতা, কলম। যতক্ষণ রুটিন অনুযায়ী পড়বেন স্থির করেছেন পূর্বেই। ততক্ষণ আপনি মাঝে মধ্যে নিজের সঙ্গে কথা বলে নিজের আত্মবিশ্বাস মনোযোগ ঝালাই করে নিন।
  • ভাগ ভাগ করে পড়ূন।
  • অর্থ জেনে বুঝে পড়ূন।
  • মনে রাখার কৌশল হিসেবে তুলনা করে বা তারতম্য করে পড়ূন।
অমূলক ভয়-ভীতি থেকে দরে থাকুন
কোনো কোনো ছাত্রকে বলতে শোনা যায় কোনো একটি বিষয়ে বা কোন কোন বিষয়ের ব্যাপারে দুর্বল। আপনি দুর্বল! আপনি দুর্বল? আপনি দুর্বল এ ধরনের নেতিবাচক ভাবনা কখনোই মনে স্থান দেবেন না।

শিশুর স্কুল ভীতি

ভোরের কাঁচা সর্য পূর্বাকাশে উঁকি দিচ্ছে, জানালার ফাঁক গলিয়ে সরু আলোক রেখা ঢুকছে রুমে। মা ডাকছে, উঠতে হবে, স্কুলে যেতে হবে, চোখ খুলতে ইচ্ছা করছে না, তবুও চোখ মেলে তাকাল সজীব। উহ ‘স্কুলের কথা মনে হলেই যেন শরীর অবশ হয়ে আসে, ঝিঁঝিঁ করে মাথা, ঝিনঝিন অবসন্নতা যেন চেপে ধরে চলনশক্তি
 
ভোরের কাঁচা সর্য পূর্বাকাশে উঁকি দিচ্ছে, জানালার ফাঁক গলিয়ে সরু আলোক রেখা ঢুকছে রুমে। মা ডাকছে, উঠতে হবে, স্কুলে যেতে হবে, চোখ খুলতে ইচ্ছা করছে না, তবুও চোখ মেলে তাকাল সজীব। উহ ‘স্কুলের কথা মনে হলেই যেন শরীর অবশ হয়ে আসে, ঝিঁঝিঁ করে মাথা, ঝিনঝিন অবসন্নতা যেন চেপে ধরে চলনশক্তি। হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে সমস্যাটি-স্কুলের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়েছে, যেন স্কুল থেকে দরে থাকতে পারলেই রক্ষা, স্কুলে যাওয়ার সময় যতই এগোতে থাকে, বুকের ধরফড়ানিও বেড়ে যায়, বমি বমি লাগে, মাথা ঘুরায়, পেট ব্যথা কিংবা শরীরে ম্যাজম্যাজ অনুভূতি জেগে ওঠে। মজার ব্যাপার হলো স্কুল বন্ধের দিন এসব সমস্যা থাকে না।
কখনো কখনো স্কুলে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সজীব, বেঁকে বসে। কখনো রওনা হয় বাসা থেকে, স্কুলে পৌঁছার আগেই ফিরে আসে, আবার কখনো হয়ত স্কুলে গিয়ে হাজির হয়েছে, কিছুক্ষণ পরই চলে এল বাসায়। জোর করলেই নানা অজুহাত দেখাবে সে-কখনো বাসা থেকে বেরুতেই ভয়ের কথা বলবে, কখনো বলবে পথ চলার ভীতির কথা, অথবা স্কুলের নানা ভয়ের ব্যাখ্যা দাঁড় করাবে সজীব। তাই জোরাজুরি করলেই ক্ষেপে ক্ষেপে উঠবে, হয়ত কান্না শুরু করে দেবে, অথবা শারীরিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, অনড় প্রতিরোধ। নিত্যই ঘটছে এমন, তবে স্কুলে না যাওয়ার কথা গোপন রাখে না সে, মা-বাবাও নিশ্চিত স্কুলে না গেলেও আশপাশে নিরাপদ কোথাও আছে সজীব।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে স্কুলে যাওয়ার অনীহা কোনো মানসিক রোগ নয়, বলা যায় এটি এক ধরনের আচরণ যার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে অনেক কারণ।
বয়সের কয়েকটি স্তরে স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা জাগতে পারে। ৫-৭ বছরঃ স্কুল জীবনের শুরু থেকে। ১১ বা প্রায়ই এগারো বছরঃ যখন একটি শিশু প্রাইমারী থেকে সেকেন্ডারি স্কুলে প্রবেশ করে। টিনএজের শুরু ১৪ বছর থেকে অপেক্ষাকৃত কম বয়সের বাচ্চাদের সাধারণত হঠাৎ করেই শুরু হতে পারে সমস্যাটি। বয়োসন্ধিক্ষণে শুরু হয় ধীরে ধীরে বন্ধুদের সাথে মেলামেশা, খেলাধুলা, হৈ চৈ কমিয়ে দেবে ছেলে বা মেয়েটি। পূর্বে এমনটি ছিল না সে, বরঞ্চ আনন্দপূর্ণ আচরণই ছিল তার চরিত্রের মলধারা।
সাধারণত শিক্ষকের পরিবর্তন, বাড়ি বদল, বন্ধু হারানো কিংবা শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি ঘটনাগুলো সমস্যাটি উসকে দিতে পারে। দীর্ঘদিন ছুটির কারণে স্কুলে যাওয়া হয় না, অথবা শারীরিক অসুস্থতার কারণেও অনেক সময় লম্বা লম্বা সময় অনুপস্থিত থাকতে হয়-এমনকি পরিস্থিতিতে স্কুল যাওয়ার দিনই অনীহা জাগতে পারে, অথবা আগে ছিল এমন সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
দাদা-দাদীর সাথে একটি শিশুর নিবিড় বন্ধন গড়ে ওঠে। অনেক সময় দেখা যায়, এদের কারও অসুস্থতা থাকলে শিশুটি স্কুলে যেতে চাইবে না। এমনও হতে পারে কোনো কোনো মা ইচ্ছাকৃতভাবেই সন্তানটিকে স্কুলে না যাওয়ার ব্যাপারে ইন্ধন দিয়ে থাকেন নিজের অজান্তেই, হয়ত বা অবচেতনভাবেই শিশুটির সান্নিধ্য কামনা করেন ভেতরে ভেতরে, অথবা ভাবেন স্কুলে যাওয়াটি অর্থহীন, কিংবা শিশুটি দরে থাকুক মানতে পারেন না।
অপেক্ষাকৃত কম বয়সের শিশুর স্কুলে না যাওয়ার পেছনে লুকিয়ে থাকে সেপারেশন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার। যেমনটি ঘটেছে সজীবের ক্ষেত্রে। মাত্র ৮ বছর বয়স ওর। বাবার সাথে আছে নিবিড় বন্ধন। বাবা সরকারি কর্মকর্তা, বদলি হয়েছেন কক্সবাজার। বাবা চলে যাওয়ার পরই সজীবের ভেতরে স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা শুরু হয়ে গেছে, অথচ এমনটি আগে কখনো ছিল না।
বয়স্ক শিশুদের স্কুলে যেতে না চাওয়ার কারণগুলো হলো- স্কুল ফোবিয়া বা স্কুল ভীতি, যাওয়া-আসার পথের সমস্যা, অন্য দুরন্ত শিশুদের দ্বারা অত্যাচারিত, পীড়িত বা সমালোচিত হওয়া, আশানুরূপ ফলাফলে ব্যর্থতা। টিনএজারদের স্কুলে না যাওয়ার সাথে জড়িত থাকে বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন। স্কুলের প্রতি অনীহার সাথে সাইকোসিস বা বড় ধরনের মানসিক রোগের সংশিস্নষ্টতা তেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
স্কুল পালানো শিশু আর স্কুলে যেতে চায় না এমন একটি শিশুর মাঝে রয়েছে সুসপষ্ট সীমারেখা। পালানো শিশুর মা-বাবা জানে না যে সন্তান স্কুলে যায়নি; স্কুলে যাওয়ার নাম করে বের হবে সে, এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াবে, সিনেমায় যাবে, বাজে ছেলেদের সাথে আড্ডা দেবে, ছুটির সময় হলে বাসায় ফিরে আসবে অথবা ফিরতে দেরি করবে। এসব শিশুর পরীক্ষার ফলাফল খারাপ তার কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডারই অন্তর্নিহিত মল কারণ। পারিবারিক সমস্যা যেমন-মা-বাবার দাম্পত্য কলহ-দুষকর্ম, বড় পরিবার, আর্থিক অনটন, দেখা শোনার নিয়মানুবর্তিতার অভাব স্কুল পালানো মনোভাব গড়ে তুলতে পারে একটি শিশুর ভেতর এর চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্নতর।
পক্ষান্তরে স্কুলে যেতে চায় না এমন শিশুর পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়ে থাকে-সমস্যাটির সাথে জড়িত থাকে পারিবারিক বৈশিষ্ট্য, ইমোশনাল ডিসঅর্ডার।
চিকিৎসা ব্যবস্থা
১. দ্রুত স্কুলে ফেরত পাঠাতে হবে শিশুটিকেঃ হঠাৎ করে শুরু হওয়া সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হওয়ার আগেই এই ব্যবস্থা নিতে হবে, পুরো স্কুল পিরিয়ডই শিশুটিকে স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। মা ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে তাকে স্কুলে পাঠাতে পারলে ভালো ফল দেবে, শিশুটির মঙ্গলের জন্যই দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। মা-বাবাকে এক্ষেত্রে ছাড় দেয়া যাবে না। মা-বাবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং শিক্ষকের সমর্থন, সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
টিচারের উচিত হবে স্কুলে পড়া ধরা কিংবা বাড়ির কাজ থেকে কিছুদিনের জন্য ছাত্র বা ছাত্রীটিকে রেহাই দেয়া, মমতা দিয়ে ধীরে ধীরে স্কুলের নিয়ম-শৃখলার সাথে তাকে একাত্ম করে নিতে হবে। স্কুলে অন্য ছাত্র-ছাত্রীর দ্বারা নাজেহাল হওয়ার ঘটনা থাকলে, উদঘাটন করতে হবে-ব্যবস্থা নিতে হবে শিক্ষককে। যাওয়া-আসার পথে কোনো সমস্যা আছে কিনা খুঁজে দেখতে হবে।
২. যদি সমস্যাটি ইতিমধ্যেই দীর্ঘায়িত হয়ে যায়, ধীরে ধীরে স্কুলের প্রতি সন্তানকে আগ্রহী করে তুলতে হবেঃ প্রথম প্রথম স্কুল থেকে ঘুরিয়ে আনতে হবে, ক্রমান্ব্বয়ে একটা ঘন্টা... দুই ঘন্টা... তিন ঘন্টা... এভাবে স্কুলে অবস্থানের সময় বাড়াতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষ একই ক্লাসের অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে টিউটোরিয়াল ক্লাসের আয়োজন করে সমস্যায় আক্রান্ত শিশুটির অনীহা কমিয়ে আনা যায়, স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব।
স্কুল বদলানোর প্রয়োজন হতে পারে অনেক সময়। এ্যাংজাইটি তীব্রতর হলে হাসপাতালেও ভর্তির প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। তবে এমন ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনা কমই থাকে।
৩. পারিবারিক থেরাপিঃ শিশুর প্রতিটি কাজে, গতিবিধিতে মা-বাবার ভূমিকা কমিয়ে আনতে হবে। সন্তানের এই অনীহাকে কোনো অজুহাতেই ছাড় দেয়া যাবে না, সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে স্কুলে ফেরার ব্যাপারে এক্ষেত্রে বাবা-মার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ফলাফল
দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে সফলতা আসে
যদি শিশুটির বয়স থাকে কম, সমস্যাটি যদি হঠাৎই শুরু হয়ে থাকে, সমাধানের পদক্ষেপ যদিও নেয়া দ্রুত ফলাফল আশাব্যঞ্জক। স্কুলে ফেরানো গেলেও আবেগীয় ও সম্পর্কজনিত সমস্যা সাধারণত থেকেই যায়, অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক সম্পর্ক সীমাবদ্ধতায় আটকে যায়, এক তৃতীয়াংশ নিউরোটিক ডিসঅর্ডারে ভুগে থাকে। খুবই কম সংখ্যকের মধ্যে বাইরে যাওয়ার ভীতি কিংবা কাজ করার অনীহা জাগতে পারে।

Saturday, August 4, 2012

শিশুদের পড়ার অভ্যাস করাতে হলে...

শিশুদের পড়ার অভ্যাস করাতে হলে...

undefined

আজকাল বাবা-মায়ের শিশুদের নিয়ে একটি কমন অভিযোগ রয়েছে, তাদের শিশুরা পড়তে চায় না। কিন্তু, ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করার জন্য ও কোনো বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভের জন্য পড়ার তো কোনো বিকল্প নেই। আসলে না পড়তে চাওয়া বিষয়টি শুধু শিশু নয়, বর্তমান প্রজন্মের মধ্যেও বিদ্যমান। মন থেকে আন্তরিকভাবে কিছু পড়ার অভ্যাস আমাদের যেন কমেই চলেছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক তরুণ-তরুণী খুব আগ্রহের সঙ্গে পড়ছে পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখকের গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, কিংবা কবিতা। খুব কম সংখ্যা ছেলেমেয়েই পড়ছে নামিদামি সব ম্যাগাজিন, জার্নাল কিংবা রিসার্চধর্মী বই। তাছাড়া এ কথাটি তো কমবেশি সবারই জানা যে, দি মোর ইউ রিড, দি মোর ইউ লার্ন! অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ এ পড়ার অভ্যাসটি যদি শৈশব থেকেই সন্তানের মধ্যে গড়ে তুলে দেয়া যায়, তাহলে প্রথম থেকেই ক্লাসে তাদের রেজাল্ট আশানুরূপ হওয়ার পাশাপাশি তাদের যেমন গড়ে উঠবে নিয়মিতভাবে ভালো ভালো সব লেখাপড়ার অভ্যাস, তেমনি প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকবে তাদের জ্ঞানের পরিধি। আর পড়ার অভ্যাসটি একবার ভালোমতো গড়ে উঠলে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সারা জীবনের জন্য ব্যক্তির মধ্যে রয়ে যায়। এখন তাহলে জেনে নিন, শিশুদের মাঝে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য বাবা-মায়েরা কী করতে পারেন, সেই বিষয়ে সেরা ১০টি টিপস।
১.    সবার আগে নিশ্চিত হোন যে আপনার শিশুর বর্ণমালা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রয়েছে
শিশুকে স্কুলে ভর্তি করার আগেই বাসায় খেলতে খেলতে বর্ণমালা সম্পর্কে ধারণা দিন। তাকে অক্ষর শেখান। ইংরেজি অক্ষরগুলো শেখানোর সময় ছোট ও বড় হাতের অক্ষরগুলোর পার্থক্য ধীরে ধীরে বুঝিয়ে দিন। এতে স্কুলে ভর্তির পর যখন সে দেখবে সে ভালো পারছে, তখন তার আত্মবিশ্বাসও যেমন বাড়বে, তেমনি দূর হয়ে যাবে স্কুলভীতিও। আর পড়ার পূর্বশর্ত তো অবশ্যই অক্ষর ও শব্দগুলো।
২.    প্রতিদিনই শিশুদের সঙ্গে কিছু না কিছু পড়ুন ও পড়ান
প্রতিদিনই শিশুর সঙ্গে কিছু না কিছু পড়ার চেষ্টা করুন। পড়ার জন্য এমন কোনো বিষয় বেছে নিন যা শিশুর সঙ্গে সঙ্গে আপনারও ভালো লাগবে। সেটা হতে পারে অত্যন্ত ছন্দময় মজার কোনো সহজ কবিতা, হতে পারে ছোট কোনো গল্প বা রূপকথা, কিংবা হতে পারে টিনটিনের মতো মজার ও জনপ্রিয় কোনো চরিত্রের কার্টুন বই। তবে অবশ্যই লক্ষ রাখবেন যে, একই বই যেন বারবার না পড়ানো হয়ে যায়। একই বই বারবার পড়ালে তাদের কাছে বিষয়টি বোরিং হয়ে যেতে পারে।
৩.    নার্সারি লেভেলের ছড়াগুলো শিশুদের সঙ্গে পড়ুন ও পড়ান
শিশুকে স্কুলে ভর্তির আগে তাকে নার্সারি লেভেলের ছড়াগুলো শিখিয়ে দিন। তাদের প্রয়োজনে ছড়াগুলো অভিনয় করে পড়ান, সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও অভিনয় করে আবৃত্তি করতে বলুন। বইয়ে ছাপা কবিতার শব্দগুলোতে হাত দিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে পড়তে বলুন। ধীরে ধীরে তাদের কবিতাটি মুখস্থ করে দিন। যখন সে নার্সারিতে ভর্তি হবে, তখন সেই হয়তো এগিয়ে থাকবে সবার চেয়ে বেশি, আর পড়ালেখায় তার আগ্রহও বেড়ে যাবে বহুগুণ।
৪.    শিশুদের জন্য পড়ার পরিবেশ তৈরি করে দিন
যদি সম্ভব হয় তাহলে শিশুর জন্য আলাদা একটি পড়ার রুমের ব্যবস্থা করে দিন। তা সম্ভব না হলে শিশু যে রুমে ঘুমায়, সেই রুমের কোনায় একটি রিডিং টেবিল দিয়ে দিন। রিডিং টেবিলে তাক সিস্টেম থাকলে ভালো হয়। টেবিলের গায়ে শিশুর প্রিয় কার্টুন চরিত্রের স্টিকার লাগিয়ে দিন। অনেক সময় দেখা যায়, মনের মতো পরিবেশের অভাবেও শিশু পড়তে চায় না। এ রুমে তার খেলনাগুলোও রাখতে পারেন। আর সবচেয়ে ভালো তারই সুন্দর সুন্দর সেরা সিঙ্গেল ছবিগুলো বড় করে প্রিন্ট করে ওই রুমের দেয়ালে লাগিয়ে দিন।
৫.    প্রতিদিনই শিশুদের জানান (এবং আপনি নিজেও বিশ্বাস করুন) সে একটি স্মার্ট শিশু ও ভালো পড়ুয়া
কারণে-অকারণে শিশুকে উৎসাহ দিন। শিশুর সার্বিক বিকাশে উৎসাহ দেয়ার বিকল্প কিছু নেই। শিশুকে জানান, সে খুব ভালো পড়তে পারে এবং তার পড়ার আগ্রহ অন্যদের চেয়ে বেশি। তুমি যত বেশি পড়বে, অন্যদের চেয়ে তত বেশি জানবে ও তত বেশি এগিয়ে যাবে। তাকে বলুন, তুমি খুব স্মার্ট। আর স্মার্টদের অনেক কিছু জানতে হয়, তাই তাদের অনেক কিছু পড়তে হয়।
৬.    শিশুকে তার শিক্ষক ও স্কুল সম্পর্কে পজিটিভ কথা বলুন
অনেক শিশুরই স্কুলভীতি থাকে। তারা অনেক সময় ধরে নেয়, স্কুল মানেই কড়া কড়া টিচারের বকুনি আর দুষ্টু ক্লাসমেটদের দুষ্টুমির শিকার হওয়া। এতে করে তাদের মধ্যে শুরুতেই স্কুলের প্রতি অনীহা দেখা দিতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে পড়ালেখার ওপর। তাই শিশুদের স্কুলে দেয়ার আগে স্কুল ও টিচার সম্পর্কে ভালো কথা বলুন। তাদের জানান, স্কুলে তুমি যেমন ভালো ভালো খেলার সাথী পাবে, তেমনি পাবে তোমার যত্ন নেয়ার জন্য ভালো ভালো টিচার।
৭.    পড়ার পাশাপাশি শিশুদের লিখতে উৎসাহ দিন
পড়ার পাশাপাশি তাদের যে কোনো কিছু লিখতে উৎসাহ দিন। তাকে নিজের থেকে ছড়া মিনি গল্প, কিংবা আজ স্কুলে সে কী কী করল তা লিখতে বলুন। এতে করে তার সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। তার লেখায় অনেক ভুল থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই তাকে সবার আগে চমৎকার লেখার জন্য বাহবা দিয়ে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে ভুলগুলো ধীরে ধীরে শুধরে দিন। হতে পারে, আপনার শিশুর মধ্যেই লুকিয়ে আছে বড় কোনো লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি, গীতিকার, জার্নালিস্ট কিংবা কলামিস্টের প্রতিভা!
৮.    শিশুর সঙ্গে কথা বলুন, তাকে প্রশ্ন করুন, তার কাছ থেকে প্রশ্ন শুনুন
শিশুর সঙ্গে তার পছন্দ-অপছন্দ, চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কথা বলুন। সে কী কী বিষয়ে পড়তে উৎসাহবোধ করে অথবা আপনি তাকে কোন কোন বিষয় পড়ালে সে আনন্দ পায়, তাকে প্রশ্ন করে জেনে নিন। তার পছন্দের বিষয়েই আপনি বেশি করে মনোনিবেশ করুন। শিশু যদি পড়ার মধ্যে আনন্দ একবার পেয়ে যায়, তাহলে সেটা হবে আপনার জন্য অনেক বড় একটি প্রাপ্তি। পাশাপাশি আপনি এও তার কাছ থেকে জেনে নিন, কী কী বিষয় পড়তে তার ভালো লাগে না।
৯.    মাঝেমধ্যে শিশুর সঙ্গে তার স্কুলে গিয়ে তার বিষয়ে টিচারদের সঙ্গে কথা বলুন
যখন সময় পাবেন, কিংবা শিশুকে স্কুলে দিয়ে বা নিয়ে আসার সময় তার বিষয়ে টিচারদের সঙ্গে কথা বলুন। তার ক্লাস পারফরম্যান্সের বিষয়ে আলাপ করুন। কিংবা তার বিষয়ে কোনো কথা জানানোর থাকলে তা টিচারদের অবহিত করুন। এতে করে টিচাররা তার বিষয়ে সঠিক যত্নটি নিতে পারবেন। আর আপনার শিশুরও এটা দেখে ভালো লাগবে, তার বিষয়ে আপনি কতটা যত্নবান।
১০.    তাকে পুরস্কৃত করুন
সুযোগ পেলেই শিশুকে পুরস্কৃত করুন। নতুন নতুন খেলনার বায়না তো শিশুদের লেগেই থাকে। আর সেটা তাকে যেহেতু কিনে দিতেই হয়, তাই সে কিছুর বায়না করার আগেই তাকে বলুন-তুমি যদি এ বইটা সুন্দর করে পড়া শেষ করতে পারো তাহলে তোমার জন্য সুন্দর একটি গিফট রয়েছে। নিজ চোখেই না হয় পরখ করে দেখুন যে এ টিপসটা কতটা কার্যকর! কিংবা একটি বই শেষ করার পর হঠাৎই তার সামনে এক বাটি আইসক্রিম দিয়েই দেখুন না! এগুলোই ছিল বাছাই করা সেরা সব টিপস। লেট ইজ বেটার দ্যান নেভার! তাই, আরো দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই শিশুদের পড়ার বিষয়টিতে মনোযোগ দিন।

Thursday, August 2, 2012

মিশতে শিখুন, ভালো থাকুন

অন্যদের সঙ্গে তেমনভাবে মিশতে পারেন না আপনি? কেউ বাড়িতে এলে তার মুখোমুখি হতে বা তার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে লজ্জা বা অস্বস্তি হয় আপনার? এই প্রশ্ন দুটোর উত্তর ‘না’ হলে বুঝতে হবে আপনি সামাজিক মেলামেশায় দক্ষ। সহজেই মিশতে পারেন মানুষের সঙ্গে।
আর উত্তরটা ‘হ্যাঁ’ হলে বুঝতে হবে মিশতে শেখেননি আপনি। অন্যকে এড়িয়ে চলতে গিয়ে প্রায়শই আপনাকে শিকার হতে হয় টেনশনের। হ্যাঁ, মানুষের সঙ্গে মিশতে শেখাটাও জীবনের প্রয়োজনীয় একটা শিক্ষা। মানুষ ছাড়া মানুষের চলে না। মানুষকে এড়িয়ে চলতে চাওয়া আসলে নিজেকে আরও একা করে দেয়া।
আপনি অন্যকে এড়িয়ে চললে আপনাকেও এড়িয়ে চলতে চাইবে আপনার আশপাশের মানুষজন। আরও একা হয়ে যাবেন আপনি। ভুগবেন নিঃসঙ্গতায়। নিঃসঙ্গতা দূর হওয়া বলুন অথবা সবাই মিলে ভালো থাকার আনন্দ, সামাজিক মানুষ মেলামেশা করতে পারেন অনেক। ফাঁকা জীবন সত্যিই বড় যন্ত্রণার, টেনশনের। আজকের এই দ্রুতগতির জীবনে টেনশনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে আপনাকে শিখতেই হবে সামাজিক হতে। শিখতে হবে মানুষের সঙ্গে মিশতে, আদান-প্রদান করতে। যত বেশি করে মিশতে শিখবেন আপনার দিগন্ত তত বড় হতে থাকবে। কমবে দুঃখযন্ত্রণার ভার, জীবন যাপনের গ্লানি। কমবে টেনশন।
অন্যের সঙ্গে মিশতে না পারলে ভুলেও ভাববেন না, আপনি নিঃসঙ্গতা ভালোবাসেন। কিছু কিছু সময় হয়তো নিঃসঙ্গ থাকা দরকার একজন মানুষের, সব সময় নয়। না জানলে শিখে নিন সামাজিক হবার কায়দাকানুন।
একবার মিশতে শিখলেই আর মানুষকে এড়িয়ে যেতে চাইবেন না আপনি। আপনি মিশলে অন্য মানুষও আপনার সঙ্গে মিশবে। কমবে টেনশন। কমবে জীবনযন্ত্রণা। অন্য মানুষের সঙ্গে মিশতে শেখা এক ধরনের সামাজিক দক্ষতা (Social Skill)। এরকম দক্ষতা অর্জন করা যায় সহজেই। আপনার শরীরের ভাষা হলো এই দক্ষতার একটা দিক। আর অন্য দিক সামাজিক আচার আচরণ।
সামাজিক হোন, ভালো থাকুন
  • আপনার চলাফেরা হোক আপনার প্রসন্নতার ভাষা। পরিচিত মানুষকে দেখে হাসতে শিখুন। বলতে শিখুন ‘সালাম’, ‘নমস্কার’, ‘গুড মর্নিং’, ‘সুপ্রভাত’, ‘ভালো থাকুন’। অন্যের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় বা সৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলতে শেখা সামাজিক দক্ষতার বড় একটা দিক। ভেবে দেখুন, বাইরে বেরিয়ে কেউ হাসিমুখে ‘সুপ্রভাত’ বলছে শুনলে কতটা ভালো লাগে আপনার, কত তাড়াতাড়ি কেটে যায় সব জড়তা। সহজেই আপনিও অন্য মানুষের মনে পৌঁছে দিতে পারেন এরকম ভালো লাগার বোধ।
  • পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী, চেহারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জামাকাপড় পরুন। ‘সামাজিক পোশাক’ আর ‘ক্যাসুয়াল পোশাক’কে মিলিয়ে ফেলবেন না। আপনার পোশাক পুরোপুরি না হলেও আপনার অনেকটা পরিচয়। পোশাক ব্যবহারে সতর্ক হোন, সতর্ক হোন পোশাকের রং নির্বাচনে।
  • আপনার চলাফেরা, আপনার আচরণ ব্যবহার, আপনার পোশাক পরিচ্ছদ-এসবই আপনার ব্যক্তিত্বের একেকটা অংশ। দৃঢ় অথচ প্রসন্ন, শক্ত অথচ মোলায়েম ব্যক্তিত্বের মানুষকে সবাই পছন্দ করে।
  • অন্যের কথা শুনতে শিখুন মন নিয়ে। নিজের কথা বলতে শিখুন সংক্ষেপে গুছিয়ে। ভালো কথা বলতে পারা একটা শিল্প। এরকম শিল্পে দক্ষ হলে অন্যরা আপনাকে শুধু ভালোবাসবে না, সম্মানও করবে।
  • শুধু নিজের কথা বলতে থাকা মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। অন্যের কথা গভীরভাবে শোনাও একটা শিল্প। এই শিল্পে রপ্ত হোন।
  • অন্যের কথা শোনা আর নিজের কথা বলার মধ্যে কোনো মারামারি নেই। কথা বলা আর কথা শোনার সঠিক ছন্দ অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায়, কমায় মনের চাপ। কমায় টেনশন। এই ছন্দে অভ্যস্ত হতে শিখুন। একদিনে নয় ধীরে ধীরে।
  • অন্যের সমস্যায় পাশে দাঁড়াতে শিখুন। সাহায্য করতে শিখুন প্রতিবেশীর বিপদে আপদে। সামাজিক হতে শেখা মানে শুধু অন্যের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে শেখা নয়, কঠিন সময়ে অন্যের পাশে দাঁড়াতে শেখা।
  • প্রতিবেশীকে এড়িয়ে চলবেন না, প্রতিবেশীর খোঁজখবর রাখুন। যত এড়িয়ে চলবেন একা হয়ে যাবেন তত। একা হয়ে যাওয়া মানেই উদ্বেগ বাড়তে থাকা।
  • সামাজিক অনুষ্ঠানে যান, সামাজিকতা রক্ষা করে চলতে শিখুন। যত সামাজিক হতে পারবেন তত কমবে টেনশন।
  • বন্ধু বানাতে শিখুন। ভাবনাচিন্তা আর দৃষ্টিভঙ্গির মিল হলে শুধু সমবয়সীরা নন, আপনার চেয়ে ছোট আর বড়রাও আপনার খুব ভালো বন্ধু হতে পারে। বন্ধুদের সময় দিন, খোঁজখবর রাখুন। চাপের মুখে বন্ধুত্বের আশ্রয় সাহায্য করে অনেক।
  • স্বার্থপর হবেন না। শুধু নিজের কথা ভাববেন না। সবার কথা ভাবুন। সবাই মিলে আনন্দে বাঁচতে শিখুন। যত কমবে আপনার স্বার্থপরতা আর আত্মকেন্দ্রিকতা, তত বেশি আনন্দে থাকবেন। বেশির ভাগ স্বার্থপর আর আত্মকেন্দ্রিক মানুষ খুব বেশিমাত্রায় টেনশনে ভোগেন।
দৃঢ় হোন নিজেকে প্রমাণ করতে শিখুন
সামাজিক মেলামেশায় দক্ষ হতে আপনাকে অবশ্যই শিখতে হবে প্রয়োজনে শক্ত হতে। দৃঢ় হোন, একজন মানুষ হিসেবে আপনার অধিকারগুলো রক্ষা করতে আপনাকেই হতে হবে দৃঢ়চেতা। অন্যের অধিকারে আঘাত না করেও ব্যক্তিগত অধিকারগুলোকে রক্ষা করা যায়। সামাজিক দক্ষতার মতো নিজের অধিকারের সুরক্ষার দক্ষতাও জরুরি। একদিক থেকে দেখলে এরকম দক্ষতা হলো নিজেকে প্রমাণ করতে শেখার দক্ষতা।
যা করবেন
(১)    যখন দরকার তখন সাহায্য চাইতে শিখুন
(২)    কেউ অন্যায় বা অন্যায় দাবি করলে ‘না’ বলতে শিখুন
(৩)    কোনো বিষয়ে বুঝতে অসুবিধা হলে সরাসরি বলুন, আরও তথ্য চান
(৪)    এতটুকু লজ্জা বা অস্বস্তিতে না পড়ে সৌজন্য দেখানোর মতো সৌজন্য পেতেও শিখুন
(৫)    কোনো বিষয়ে আপনি বিরক্ত হলে বলতে শিখুন সরাসরি
(৬)    কোনো বিষয় সহ্য করতে না পারলে সরাসরি বলুন
(৭) নিজের উদ্যোগে কথা বলতে শুরু করুন, কথা শেষ করুন নিজের ইচ্ছায়
(৮)    আপনার সম্পর্কে অন্যের বিরূপ মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া মাথা ঠান্ডা রেখে শুনতে শিখুন, বিচার করতে শিখুন আপনার সম্পর্কে অন্যের প্রতিক্রিয়াকে।
যা করবেন না
(১)    প্রয়োজনের সময় সাহায্য না চেয়ে চুপ করে থাকবেন না
(২)    অন্যায় বা অন্যায় দাবির কাছে মাথা নোয়াবেন না
(৩)    কোনো বিষয় বুঝতে না পারলেও চুপ করে থাকবেন না
(৪)    সৌজন্য না পাওয়াকে মেনে নেবেন না
(৫)    কোনো বিষয়ে বিরক্ত হলে তা না বলে চুপ করে থাকবেন না
(৬)    কোনো ব্যাপার অসহ্য মনে হলে নীরব থাকবেন না
(৭)    অন্যের ইচ্ছায় কথা বলবেন না, অন্যে চাইলেই বলতে থাকবেন না
(৮)    আপনাকে নিয়ে অন্যের বিরূপ মন্তব্য শুনতে গিয়ে রেগে যাবেন না।
  • নিজেকে তুলে ধরা বা প্রমাণ করার
  • (Assertion) অর্থ আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চলা নয়। শুধু দিতে নয় পেতে শিখুন। শুধু ‘হ্যাঁ’ নয় ‘নাও’ বলতে শিখুন।
  • অন্যে যা চাইবে তাই দেবার আগে ভাবুন। আপনার পছন্দের মতো অপছন্দের বিষয়টাও অন্যকে সরাসরি জানিয়ে দিন। অন্যের জন্য ভাববেন, অন্যের ইচ্ছায় চালিত হবেন না। গঠনমূলক সমালোচনাকে এড়িয়ে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় শুনুন। নিজের ভুলগুলো শুধরে নিন।
  • শুধু শুনে যাবেন না, বলতে শিখুন। শুধু সহ্য করে যাবেন না, কোনো ব্যাপারকে অসহনীয় মনে হলে সরাসরি বলুন। এ বিষয়ে বলতে দ্বিধা করা মানেই নিজের ওপর চাপ বাড়ানো।
  • সামাজিক দক্ষতার নিয়মগুলোকে কাজে লাগান। কোনো মানুষকে নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে সরাসরি বলুন তাকে। ঠান্ডা মাথায় আস্তে আস্তে তাকে বুঝিয়ে দিন তার সম্পর্কে আপনার মতামত, সরাসরি। চিৎকার-চেঁচামেচি না করে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলুন। দোষারোপ করবেন না, বাড়িয়ে বলবেন না এতটুকু। যা মনে হচ্ছে আপনার, যা ভাবছেন আপনি ঠিক তাই বলুন। সবার সামনে নয়, আলাদা করে কথা বলুন। যখন তখন নয়, ভাবনাচিন্তা করে অবসর সময়ে পরিকল্পনা করে বসুন।
  • বলা শেষ হলে ঠান্ডা মাথায় অন্য পক্ষের বক্তব্য শুনুন। বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। সিদ্ধান্তে অবিচল থাকুন।
  • কেউ আপনার সাহায্য চাইলে প্রয়োজনে অবশ্যই সাহায্য করবেন। তার মানে এই নয় যে কেউ আপনাকে ‘বোকা’ বা ‘দুর্বল’ ভেবে ঠকাতে চাইবে আর আপনি সব জেনে বুঝেও ঠকবেন।
  • মানুষের উপকার করা বা মানুষকে সাহায্য করা মানে নিজেকে ঠকানো নয়।
  • সিরিয়াস কথা সিরিয়াসভাবে বলুন। সিরিয়াস কথা বলতে বলতে ভুলেও হাসবেন না। হাসির কথায় হাসবেন, সিরিয়াস কথা বলবেন সিরিয়াস মুখে।
  • নিজেকে প্রমাণ করতে শেখা আধুনিক মানুষের জরুরি একটা শিক্ষা। নিজেকে জাহির করতে যাবেন না। আপনি ঠিক যা তা অন্যকে বুঝিয়ে দিন সরাসরি। লজ্জায়, সংকোচে, অনুরোধে, উপরোধে ভুলেও এমন কাজ করবেন না যা করতে চাইছেন না আপনি। নিজেকে প্রকাশ করতে শিখুন।
সচেতন হোন নিজের অধিকার নিয়ে
সমস্যা     :    ফলওয়ালাকে বিশ্বাস করে আপেল কিনেছেন। বাড়িতে এসে দেখলেন আপেলগুলো খারাপ, খাওয়া যাবে না।
সমাধান    :    দ্বিধা নিয়ে বসে থাকবেন না। সোজা চলে যান ফলওয়ালার কাছে। উত্তেজিত হবেন না। আপেল ফেরত দিন। দাম ফেরত নিন।
সমস্যা     :    কাজের মধ্যে কেউ একজন বারবার বিরক্ত করছে আপনাকে। বিরক্ত হচ্ছেন আপনি, ক্ষতি হচ্ছে কাজটার। অথচ বলতে পারছেন না।
সমাধান    :    চুপ করে বসে থাকবেন না। সরাসরি বলুন ‘আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি। আপনি বরং পরে অন্য একদিন আসুন’।
সমস্যা     :    একবার ধার করে শোধ দেয়নি এক প্রতিবেশী। অনেক দিন বাদে সেই আবার ধার চাইতে এসেছে।
সমাধান    :    সরাসরি বলুন, ‘আমি আপনাকে এবার আর টাকা ধার দিতে পারছি না বলে দুঃখিত’।
সমস্যা     :    বাড়ির রান্নার লোক খাবারদাবার চুরি করছে বুঝতে পারছেন। হাতেনাতে ধরতে পারছেন না বলে বলতেও পারছেন না।
সমাধান    :    আগে ব্যাপারটায় নিশ্চিত হোন। এবার রান্নার লোককে বলুন, ‘জিনিসপত্র বড্ড বেশি খরচ হচ্ছে। একটু সাবধান হও। তা না হলে তোমাকে আর কাজে রাখা যাবে না’।
সমস্যা     :    কেউ আপনার সামনে পরনিন্দা পরচর্চা করছে। এরকম চর্চা ভালো লাগে না আপনার।
সমাধান    :    সরাসরি বলুন, ‘অন্যকে নিয়ে চর্চা করতে ভালোবাসি না আমি। আমরা বরং অন্য আলোচনা করি। আচ্ছা, স্কুলস্তর থেকে যৌনশিক্ষা চালু করার বিষয়ে আপনার কি মত?
সমস্যা     :    কোনো অপরিচিত বা স্বল্পপরিচিত মানুষ আপনাকে হঠাৎ করে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করছে। ব্যাপারটা পছন্দ নয় আপনার।
সমাধান    :    বলুন, আপনি অনুগ্রহ করে আমাকে ‘আপনি’ বলে ডাকলে আমি খুশি হব।
সমস্যা     :    হুটহাট আপনার বেডরুমে চলে আসছেন কোনো এক পড়শি।
সমাধান    :    সামনাসামনি নরম গলায় অথচ বলিষ্ঠ ভঙ্গিতে বলুন, ‘আমার বেডরুমে অন্য কারও আসা পছন্দ করি না আমি। আপনি কথাটা মনে রাখলে খুশি হব’।
সমস্যা     :    সময়ে-অসময়ে কেউ আপনার বাড়িতে চলে আসছে। বিরক্ত হচ্ছেন আপনি।
সমাধান    :    যিনি আসছেন তাকে বলুন ‘প্রয়োজন হলে আপনি বিকেলের দিকে আসবেন। আশা করি আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না’।
সমস্যা     :    পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা এমন চাঁদা চাইছে যা দিতে গেলে আপনার ওপর চাপ পড়বে।
সমাধান    :    ছেলেদের ডেকে কথা বলুন। মাথা গরম করবেন না। বলুন ‘এত টাকা চাঁদা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনারা আমার কাছ থেকে কিছু টাকা চাঁদা পেতে পারেন’।
সমস্যা     :    আপনার খুব টাকার টানাটানি। আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠ কেউ কারও বিয়ের জন্য সাহায্য চাইতে এসেছে।
সমাধান    :    সহজভাবে বলুন ‘এই সময় টাকাটা দিতে পারলে আমার ভালো লাগত। কিন্তু আমার অসুবিধার জন্য এখন কিছু দিতে পারছি না। আশা করি আমাকে ভুল বুঝবেন না’।
সমস্যা     :    একজন পরিচিত মানুষ আগে আপনার কাছ থেকে একটা বই পড়তে নিয়ে ফেরত দেয়নি। ঐ মানুষটা আবার অন্য একটা বই চাইতে এসেছে।
সমাধান    :    সরাসরি বলুন, ‘বইটা দিতে পারছি না বলে আমি দুঃখিত। আপনি আমার ...বইটি ফেরত দিয়ে গেলে খুশি হব’।
সমস্যা     :    কেউ এমন একটা প্রশ্ন করছে যা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত। বিব্রত হচ্ছেন আপনি।
সমাধান    :    চুপ করে থাকবেন না। বলুন ‘আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমাকে কোনো প্রশ্ন করবেন না। এরকম প্রশ্ন করা আমি পছন্দ করি না’।
সমস্যা     :    কারও ব্যবহার আপনাকে বিরক্ত করছে?
সমাধান    :    সরাসরি বলুন, ‘তোমার এরকম ব্যবহারে আমি বিরক্তবোধ করছি। আশা করি এবার থেকে ব্যাপারটা তুমি মাথায় রাখবে’।
সমস্যা     :    পাশে বসা সহযাত্রীর ধূমপানে আপনার কষ্ট হচ্ছে। অথচ বলতে পারছেন না।
সমাধান    :    সংকোচ ঝেড়ে ফেলুন। পরিষ্কারভাবে বলুন ‘আপনার ধূমপানে আমার কষ্ট হচ্ছে। আপনি অনুগ্রহ করে ফাঁকা জায়গায় গিয়ে ধূমপান সেরে আসুন’।
সমস্যা     :    একজন মানুষ একনাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছেন। শুনতে চাইছেন না আপনি, অথচ পারছেন না উঠতে।
সমাধান    :    উঠে দাঁড়ান। বলুন ‘আমাকে একটু যেতে হবে। আশা করি আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না’।
সমস্যা     :    কোনো একটা বিষয়ে আপনি অসহায়বোধ করছেন। অথচ পারছেন না লজ্জায় অন্যের সাহায্য চাইতে। কষ্ট হচ্ছে আপনার।
সমাধান    :    ভাবুন, কে সবচেয়ে ভালো সাহায্য করতে পারেন আপনার সমস্যায়। তার কাছে যান বা টেলিফোন করুন। বলুন, ‘আপনার সাহায্য আমার দরকার। আপনি আমাকে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকব’।
সমস্যা     :    বন্ধুর সঙ্গে মনোমালিন্য দিন দিন বাড়ছে। একে অন্যকে এড়িয়ে চলছেন।
সমাধান    :    নিজে উদ্যোগ নিন, দুজন একসঙ্গে বসুন। ঠান্ডা মাথায় আগে বন্ধুর বক্তব্য শুনুন মন দিয়ে। এবার নিজের বক্তব্য গুছিয়ে বলুন। রাগারাগি বা উত্তেজনা এড়িয়ে চলুন। আলোচনার পর বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিন। অনেক ভুল বোঝাবুঝি এভাবে মিটে যায় সহজেই। অনেক সময় অবশ্য বাস্তবতার প্রয়োজনে সম্পর্ক শেষ করে দেয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ভাবনাচিন্তা করে, কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্ত নিন। আবেগচালিত হয়ে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেন না।
মিশতে শিখুন ভালো থাকুন
  • সোজা হয়ে হাঁটুন, সামনে তাকিয়ে চলুন। আপনার হাঁটাচলার মধ্যে ধরা পড়ে আপনার ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস আর মানসিক অবস্থা।
  • চোখমুখ কুঁচকে, মাটির দিকে তাকিয়ে চলবেন না। চলাফেরা করুন প্রসন্ন মুখে, মনটাকে খোলা রেখে। আপনার মুখচোখে উদ্বেগের চিহ্ন থাকলে মুছে ফেলুন।
  • সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে শিখুন।
  • সহজসরলভাবে আস্তে আস্তে পরিষ্কারভাবে কথা বলুন। যেখানে জোর দেয়া দরকার সেখানে জোর দিতে শিখুন। অকারণে চিৎকার করে কথা বলবেন না।
  • যখন তখন কথা বলতে বলতে অন্যদের গায়ে হাত দিতে যাবেন না। এরকম অভ্যাস থাকলে বেরিয়ে আসুন এই বদভ্যাস থেকে। অন্যের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে মর্যাদা দিতে শিখুন। স্পর্শ যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ একটা মাধ্যম। সঠিক পরিস্থিতিতে আপনার স্পর্শ অন্যকে পৌঁছে দেবে সহমর্মিতা, উত্তাপ আর বন্ধুত্বের বার্তা।
  • অন্যের সঙ্গে মিশতে গিয়ে তার একান্ত ব্যক্তিগত জায়গায় ঢুকে পড়তে চাইবেন না। এরকম গায়ে পড়া স্বভাব মানুষকে সংগত কারণে অন্যরা এড়িয়ে চলতে চায়।
  • টেনশনে ভুগতে থাকা মানুষ অন্যের কাছাকাছি পৌঁছতে চান না। উল্টোদিকে গায়ে পড়া স্বভাবের মানুষ দুম করে হাত দিয়ে ফেলে অন্যের ব্যক্তিগত জায়গাটায়।
  • এই দুয়ের মাঝামাঝি, সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখতে শিখুন। এরকম দূরত্ব বজায় রাখতে জানলে অন্যরা সহজেই আপনার কাছাকছি চলে আসবে।
সম্পর্ক সুস্থ আর স্বচ্ছ রাখুন
  • সমস্যা দেখা দিলে এড়িয়ে যাবেন না। সরাসরি কথা বলুন।
  • যা পারবেন না বা করবেন না সরাসরি বলুন, ঝুলিয়ে রাখবেন না।
  • কোনো ব্যবহারে আহত হলে সরাসরি জানিয়ে দিন।
  • রাগ বা বিরক্তি বেশি চেপে রাখতে যাবেন না। জমতে জমতে একটা সময় আপনি ফেটে পড়বেন। সম্পর্কটা নষ্ট হবে।
  • রাগ গোপন করে হাসতে যাবেন না।
  • যা মানতে পারছেন না বলুন সরাসরি। মনের ওপর চাপ বাড়িয়ে একটানা কোনো কিছুকে মেনে নিতে যাবেন না।
  • নিজে শক্ত হোন। অন্যের অন্যায় আবদারের কাছে মাথা নোয়াতে গিয়ে খুইয়ে ফেলবেন না আত্মমর্যাদাবোধ। সামাজিক হোন। সামাজিকতার নামে অন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে নিজের ওপর
চাপ বাড়াবেন না।
  • অতিরিক্ত ভদ্রতা ক্ষতিকর। ‘ বেশি ভদ্র’ হতে গিয়ে নিজের টেনশন বাড়াবেন না।
  • নিজেকে সামাজিক বানাতে গিয়ে ভুলেও নিজেকে অপমান করতে যাবেন না। নিজের অধিকার বুঝে নিন। অন্যের অধিকারকে মর্যাদা দিন।
  • অন্যকে বুঝিয়ে দিন কোনটা আপনি পছন্দ করেন, কোনটা করেন না। সব সময় লজ্জায় বা দ্বিধায় চুপ করে থাকা আসলে নিজেকে অপমান করা।
  • আপনার ব্যক্তিগত অধিকারগুলোকে সুরক্ষিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে আপনাকেই। শিখতে হবে প্রয়োজনে শক্ত হতে, নিজেকে প্রমাণ করতে। এটা না পারলে অন্যের অন্যায় দাবি বা আবদার মেটাতে বাধ্য হবেন আপনি। ‘না’ বলতে পারবেন না কিছুতেই। এতে আপনার মনের ওপর চাপ বাড়বেই। বাড়বে টেনশন।
  • রাগ বা বিরক্তির মতো অনুভূতি বেশি চেপে রাখতে যাবেন না। সরাসরি বলুন, ‘এটা আমার ভালো লাগছে না’ বা ‘আমার এতে বিরক্ত লাগছে’। মনের ওপর চাপ কমবে, কমবে টেনশন।
  • জীবনে ঝামেলা থাকবেই। ঝামেলা এড়িয়ে যেতে গিয়ে নিজেকে অন্যের চোখে হাস্যাস্পদ করে তুলবেন না। সব সময় ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চাইলে অন্যদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ বাড়বে না, কমবে। যোগাযোগ কমতে থাকলে মনের ওপর চাপ তো বাড়বেই। প্রয়োজন হলেই ঝামেলার মুখোমুখি হতে শিখুন সরাসরি। ভাবনাচিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিন। মনের ওপর চাপ কমান।