Thursday, September 20, 2012

সত্য কে জানুন ,কি ঘটছে, আরো কি কি ঘটতে পারে!!!!

আমি একজন মুসলিম তাই আমি সব ধর্মকেই সন্মান করি । সব ধর্মেই বলা হয়েছে শান্তির কথা, কিন্তু আজ হচ্ছে টা কি । কেউ তাদের ধর্মের মধ্যে নেই,হিন্দুরা বলছে মুসলমানরা খারাপ, মুসলমানরা বলছে হিন্দুরা খারাপ। সব গুলো ধর্মের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে।
ইতিহাস বলে আজ থেকে ৫০০-৭০০ বছর আগেও মুসলমানরা জীবনের সকল দিকে পৃথিবীর অন্য সকল জাতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিল। কিন্তু আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন,
মুসলমানরা আজ পথভ্রষ্ট , তারা আজ অতি সহজে নিজেকে আধারের মাজে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
'ইনোসেন্স অব মুসলিম' নিয়ে আমার একান্ত কিছু কথা:
'ইনোসেন্স অব মুসলিম' এটাকি সত্যি একটা চলচ্চিত্র !!!!! নাকি মুসলমানদের রক্তের মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দেয়া। আমরা জানি ,এটা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের তৈরী,তারা জানে একজন মুসলমান মানুষকে আঘাত করলে সে যতনা কষ্ট পাবে তার চাইতে অনেক বেশী কষ্ট পাবে নবীকে নিয়ে কিছু করলে। তাই তারা তৈরী  করে ফেলল তাদের নতুন ষড়যন্ত্র 'ইনোসেন্স অব মুসলিম' নামের ক্ষমার অযোগ্য চলচ্চিত্রটি। এটা দেখার পর মুসলিম উম্মাহ পাগল হয়ে গিয়েছে। কারন আমাদের কে কষ্ট দিলে আমরা তা সহ্য করব কিন্তু আমাদের নবীকে কেউ কিছু বললে তা সহ্য করা সম্ভব না। এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশ গুলোতে কিছু মারামারি কাটাকাটি হবে ও এবং আমেরিকা এই সুযোগের সৎ ব্যবহার করবে এটাই ছিল তাদের লক্ষ । তাই তো  আজ মানবাধিকার ও মত প্রকাশের অধিকারের দোহাই দিয়ে হিলারি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী এ চলচ্চিত্রের পক্ষে কথা বলেছেন ।আমরা জানি,আগুনে কেরোসিন ঢাললে আগুন আরো বাড়বেই এবং সেই কেরোসিন তারা ঢালছে আমাদের উপর ।
আবারও  সেই কার্টুন:
১৯/০৯ /২০১২ ফ্রান্সের একটা ম্যাগাজিন এ আবারও রাসূল (সা.)-কে অবমাননা করে কার্টুন তৈরি করা হয়েছে। ফেসবুকে মুসলমানদেরকে নিয়ে এমন অনেক খারাপ খারাপ পেইজ তৈরি করা হয়েছে। আর এখানে হিলারি ক্লিনটন বলছেন যে এর বিরুদ্ধে কিছুই করা সম্ভব নয়। তাহলে কি মুসলমান দের জন্যে আপনাদের ভিন্ন আইন । তাহলে আমি যদি বলি লাদেন এর সৃষ্টি আপনাদের জন্যেই। আর এমনটা হতে থাকলে আরও হাজারো লাদেন এর জন্ম হবে। আপনারা এই ভেদাভেদ তৈরি করা ছেড়ে দিন।
কেন এত অশান্তি :
মুসলমান মানে জঙ্গি, তালেবান এই সবের তৈরিও আমেরিকার। অনেকেই বলেছে লিবিয়া যা করল তা কি ঠিক হলো ? নাহ আমি বলবনা যে ঠিক হলোনা । কিন্তু আমেরিকা জানত এমন কিছুই হবে আর তারা চায় এমন কিছু ঘটনার পুনঃ আবৃত্তি । যাতে করে তারা সব গুলো দেশের রাজত্ব করতে পারে। লিবিয়া যা করেছে তা ঠিক হয়নি কিন্তু আমেরিকা যা করল তা কি ঠিক হলো!! এক লাদেনের জন্যে পুরা আফগান শেষ করে ফেলল, ইরান, ইরাক,সিরিয়া, ফিলিস্তানে যে তারা রণক্ষেত্র তৈরি করছে তা কি ঠিক হচ্ছে। আবূ গারীব আর গওয়ান্তানামোর বন্দি শিবির গুলো লাখো লাখো ফাতেমা আর আব্দুল্লাহদের আর্তনাদে প্রতি মুহূর্ত ভারী হয়ে উঠছে, কিন্তু তাদেরকে এই দূরাবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য বিশ্বের কোন প্রান্ত থেকেই আজ আর কেউ এগিয়ে আসছে না। আগ্রাসন শুরুর সময় সেখানে মুসলিমদের সারি সারি লাশ, ছিন্ন-ভিন্ন দেহ আর রক্তস্রোত বইছে।
আমি ওদের মত সমস্ত আমেরিকা কে খারাপ বলবনা, তাদের মধ্যেও অনেক ভালো আছেন। আমেরিকায় রমস ক্লার্কের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিও আছেন, যিনি এক পাকিস্তানি ডাক্তার আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তির জন্য আন্দোলন করছেন। সবাই যদি রমস ক্লার্কের মত হতো তবে কোন দেশেই মারামারি খুনাখুনি হতনা । আজ আমাদের মুসলমানদের ৫৭ টি দেশ কিন্তু কোথাও ইসলামী রাষ্ট্র নেই। প্রতিটি দেশেই সেনা করমকরতা আছেন কিন্তু তবু আমাদের নিরাপত্তা নেই। কারন তাদের উপর নির্দেশ নেই। আপনারা আরো জেনে থাকবেন তুরস্ক সিরিয়াকে দেখতে পারে না ,অন্যদিকে সৌদিআরব ইরান কে দেখতে পারে না, এই হলো মুসলিম দেশ গুলোর অবস্থা। আজ আমাদের মধ্যে কোনো ঐক্য  নাই তাই তারা এটা কে হাতিহার হিসাবে বেছে নিয়েছে ।
তৈরী হতে যাচ্ছে আরো উস্কানিমূলক নতুন নতুন ছবি:
শুধু 'ইনোসেন্স অব মুসলিম' তৈরি করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি,আমেরিকা ও হল্যান্ডে এমন আর ও দুটি ফিল্ম বানানো হচ্ছে যাতে করে মুসলমানদের শিয়া-সুন্নি মতাদর্শের বিরোধকে উস্কে দেয়া হবে। এর মধ্যে একটি ফিল্ম ইরানের বিরুদ্ধে। এতে শিয়া-সুন্নি বিরোধ উস্কে দেয়ার পাশাপাশি ইরান ও আরবের মধ্যে বংশীয় বিভেদ নতুন করে তাজা করার চেষ্টা চলছে। দ্বিতীয়টি সিরিয়ার শিয়া-সুন্নি মতপার্থক্যের ব্যাপারে।একটি পশ্চিমা টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের অবস্থার ওপর একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানানো হচ্ছে। এতে বালুচ ও পশতুদের মধ্যে বিভেদ উস্কে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এইসকল ঘটনা যদি চলতে থাকে তাইলে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় আগামী পৃথিবী মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এক ভয়াবহ সংঘাতের দিকে।আমরা চাই ,যে যে  তার ধর্ম সুন্দর ভাবে পালন করুক। বিশ্ব শান্তি বজায় থাক।
মুসলমান ভাইদের কে অনুরোধ করব জেগে উঠুন। নিজের অস্তিত্ব কে রক্ষা করুন। বিশ্ব এর মাঝে ইসলাম কে শান্তির ধর্ম হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিন। মারামারি কাটাকাটি কোন সমাধান নয়। যারা এমন করছে তাদের সাথে প্রমান নিয়ে এগিয়ে আসুন। অন্যদের ভুল গুলো ধরিয়ে দিন। পৃথিবীর সবাই খারাপ না, তাই নিজেদের কে ভালভাবে প্রচার করুন, একদিন সবাই বুজতে পারবে ইসলাম সত্য, ইসলাম শান্তি ।
আপনাদের সবার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

Sunday, September 16, 2012

বিভিন্ন দেশে আনলক iphone 5 এর মূল্য !!!

>> মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেআনলক আইফোন ফাইভের মূল্য শুরু হয়েছে $৬৪৯ মার্কিন ডলার (প্রায় ৫৪,০০০ টাকা) থেকে। এটি ১৬ গিগাবাইট সংস্করণটি। এরপর ৩২ গিগাবাইটের মূল্য $৭৪৯ (প্রায় ৬২,০০০ টাকা) এবং ৬৪ গিগাবাইটের মূল্য $৮৪৯ (প্রায় ৭০,০০০ টাকা)হিসেবে ধার্য করা হয়েছে।
>> যুক্তরাজ্যে১৬ গিগাবাইটের মূল্য £৫২৯পাউন্ড বা ৭০, ১৩৯ টাকা; ৩২ গিগাবাইটের মূল্য £৫৯৯ পাউন্ড বা ৭৯, ৪২০ টাকা; আর ৬৪ গিগাবাইটের মূল্য £৬৯৯ পাউন্ড বা ৯২, ৬৭৯ টাকা।

undefined>> সিংগাপুরে ১৬ গিগাবাইট আইফোন ফাইভের মূল্য ৯৪৮ সিংগাপুর ডলার হিসেবে ধার্য করায় তা বাংলাদেশী টাকায় পরছে ৬৩, ৫২৮ টাকা। অর্থাৎ মার্কিন বাজার থেকে প্রায় ১০ হাজার টাকা বেশি। ৩২ গিগাবাইটের মূল্য ১০০৮ সিংগাপুর ডলার বা ৬৭,৫৪৯ টাকা এবং ৬৪ গিগাবাইটের মূল্য ৮২, ৯৬২ টাকা।
>> হংকং এর বাজারেও আইফোন ২১ তারিখে মুক্তি পাচ্ছে বলে জানালেও অ্যাপলস্টোরের হংকং সাইটটিতে মূল্য আলাদাভাবে এখনো দেয়া হয় নি। শুধু ১৬ গিগাবাইটের মূল্য এখানে প্রদান করা হয়েছে। সেই হিসেবে আইফোন ফাইভ ১৬ গিগাবাইটের মূল্য হচ্ছে ৫৫৮৮ হংকং ডলার বা ৫৮,৯৮৯ টাকা প্রায়।

Saturday, September 1, 2012

ক্লান্তি দূর করবেন কিভাবে


সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করা কিংবা অবসন্নতায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকা এক বিরক্তিকর অনুভূতি। কোনো কাজ ঠিকমতো সমাধা করা যায় না, কাজ করতে ইচ্ছা হয় না, সারাক্ষণ শরীরে থাকে ম্যাজম্যাজ ভাব। পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের মধ্যে এ সমস্যটা বেশি মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। এই অবসাদগ্রস্ততার জন্য রাতের ঘুম ব্যাহত হয়, ক্ষুধার পরিবর্তন হয়, মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে ওঠে- কোনো কিছুর ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে যায়। যারা বিষণ্নতায় ভোগেন তাদের মধ্যেও ভর করে ক্লান্তি বা অবসাদগ্রস্ততা। শারীরিক অসুস্থতায় ক্লান্ত অনুভূত হওয়া স্বাভাবিক। অতিরিক্ত চা বা কফি, ধূমপান, অ্যালকোহল অবসাদগ্রস্ততার অন্যতম কারণ। মহিলাদের অবসাদগ্রস্ততার প্রধান কারণ হলো শরীরে লৌহের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা।
অবসাদ দূর করার উপায়
ব্যায়াম করুন
অবসাদ দূর করার জন্য চমৎকার ওষুধ হলো ব্যায়াম। যখনই আপনি ক্লান্তি অনুভব করবেন, যাবেন খোলা বাতাসে। ব্যায়াম করবেন। দেখবেন কী ঝরঝরে লাগছে আপনার শরীর। নিয়মিত ব্যায়াম আপনার শরীরে কোষ থেকে বর্জ্য দূর করে দেয়, মস্তিষেক সঞ্চালন করে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত, হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে, শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলে চর্বি, মাংসপেশিকে করে মজবুত, উদ্বেগ কমায় এবং আপনার মেজাজটাকে করে তোলে প্রফুল্ল।

খাবারের দিকে মনোযোগ দিন
আপনি লৌহসমৃদ্ধ খাবারের দিকে বেশি মাত্রায় নজর দেবেন। গমের ভুসি, কলিজা, কলা, শুকনো ফল, সার্ডিন মাছ, গরুর গোশত, যব প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে লৌহ থাকে। আপনি এসব খাবার খাবেন। তবে একবারে প্রচুর খাবেন না। অল্প পরিমাণ ঘনঘন খাবেন- এতে শক্তি ধরে রাখা সম্ভব হয়। যথাসম্ভব চর্বি বাদ দেবেন। ডাল, বাদাম প্রভৃতি খাবার খেতে পারেন।

ঘুম নিশ্চিত করুন
একজন মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের পরিমাণ হলো ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। কেউ কেউ ৭ ঘণ্টাও ঘুমায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে এর কম বা বেশি ঘুমানো যাবে না। অপর্যাপ্ত ঘুমে আপনার মাথাব্যথা, মাথা ভার হওয়া, চোখ জ্বালা করা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। ফলে আপনি সুস্থতা অনুভব করেন না। আবার অতিরিক্ত ঘুমে শরীরের কোষগুলো বেশি মাত্রায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে, যা ক্ষতিকর। সুতরাং দৈনিক ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা গভীর ঘুমে তলিয়ে যান। তবে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাবেন না। মন স্থির রেখে একটি চমৎকার ঘুম দিন- দেখবেন কেটে গেছে সব অবসাদ।

বদ অভ্যাস ত্যাগ করুন
অনেকে ক্লান্তি দূর করার জন্য চা এবং কফি পান করে থাকেন। চা ও কফি উত্তেজক পানীয়, সন্দেহ নেই। কিন্তু শরীর থেকে ক্যাফিনের প্রভাব দূর হওয়া মাত্র আপনার কর্মশক্তি কমে যাবে এবং আপনি আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। বেশি মাত্রায় চা ও কফি পান করলে তা নিদ্রাহীনতা ঘটায়। সুতরাং চা কিংবা কফি ত্যাগ করাই শ্রেয়। কিংবা খুবই পরিমিত মাত্রায় পান করবেন।

ধূমপানের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা চলে। ধূমপানের ফলে আপনার শরীরের কোষসমূহ অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হয়। নিকোটিন ও কার্বন মনোক্সাইডের প্রভাবে নিঃশেষিত হয় আপনার শক্তি। যারা অ্যালকোহল পান করেন-সাময়িকভাবে অ্যাকোহল শরীরকে চাঙ্গা করলেও পরবর্তীতে তা আপনাকে অবসাদগ্রস্ত করে তোলে। সুতরাং এই বদ অভ্যাসগুলো আপনি ত্যাগ করুন। তার চেয়ে ফলের রস খান। নিয়মিত ফলের রস খেলে আপনার চমৎকার অনুভূতি হবে, কেটে যাবে আপনার ক্লান্তি।

শিশুর স্কুল ভীতি

ভোরের কাঁচা সর্য পূর্বাকাশে উঁকি দিচ্ছে, জানালার ফাঁক গলিয়ে সরু আলোক রেখা ঢুকছে রুমে। মা ডাকছে, উঠতে হবে, স্কুলে যেতে হবে, চোখ খুলতে ইচ্ছা করছে না, তবুও চোখ মেলে তাকাল সজীব। উহ ‘স্কুলের কথা মনে হলেই যেন শরীর অবশ হয়ে আসে, ঝিঁঝিঁ করে মাথা, ঝিনঝিন অবসন্নতা যেন চেপে ধরে চলনশক্তি
 
ভোরের কাঁচা সর্য পূর্বাকাশে উঁকি দিচ্ছে, জানালার ফাঁক গলিয়ে সরু আলোক রেখা ঢুকছে রুমে। মা ডাকছে, উঠতে হবে, স্কুলে যেতে হবে, চোখ খুলতে ইচ্ছা করছে না, তবুও চোখ মেলে তাকাল সজীব। উহ ‘স্কুলের কথা মনে হলেই যেন শরীর অবশ হয়ে আসে, ঝিঁঝিঁ করে মাথা, ঝিনঝিন অবসন্নতা যেন চেপে ধরে চলনশক্তি। হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে সমস্যাটি-স্কুলের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়েছে, যেন স্কুল থেকে দরে থাকতে পারলেই রক্ষা, স্কুলে যাওয়ার সময় যতই এগোতে থাকে, বুকের ধরফড়ানিও বেড়ে যায়, বমি বমি লাগে, মাথা ঘুরায়, পেট ব্যথা কিংবা শরীরে ম্যাজম্যাজ অনুভূতি জেগে ওঠে। মজার ব্যাপার হলো স্কুল বন্ধের দিন এসব সমস্যা থাকে না।
কখনো কখনো স্কুলে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সজীব, বেঁকে বসে। কখনো রওনা হয় বাসা থেকে, স্কুলে পৌঁছার আগেই ফিরে আসে, আবার কখনো হয়ত স্কুলে গিয়ে হাজির হয়েছে, কিছুক্ষণ পরই চলে এল বাসায়। জোর করলেই নানা অজুহাত দেখাবে সে-কখনো বাসা থেকে বেরুতেই ভয়ের কথা বলবে, কখনো বলবে পথ চলার ভীতির কথা, অথবা স্কুলের নানা ভয়ের ব্যাখ্যা দাঁড় করাবে সজীব। তাই জোরাজুরি করলেই ক্ষেপে ক্ষেপে উঠবে, হয়ত কান্না শুরু করে দেবে, অথবা শারীরিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, অনড় প্রতিরোধ। নিত্যই ঘটছে এমন, তবে স্কুলে না যাওয়ার কথা গোপন রাখে না সে, মা-বাবাও নিশ্চিত স্কুলে না গেলেও আশপাশে নিরাপদ কোথাও আছে সজীব।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে স্কুলে যাওয়ার অনীহা কোনো মানসিক রোগ নয়, বলা যায় এটি এক ধরনের আচরণ যার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে অনেক কারণ।
বয়সের কয়েকটি স্তরে স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা জাগতে পারে। ৫-৭ বছরঃ স্কুল জীবনের শুরু থেকে। ১১ বা প্রায়ই এগারো বছরঃ যখন একটি শিশু প্রাইমারী থেকে সেকেন্ডারি স্কুলে প্রবেশ করে। টিনএজের শুরু ১৪ বছর থেকে অপেক্ষাকৃত কম বয়সের বাচ্চাদের সাধারণত হঠাৎ করেই শুরু হতে পারে সমস্যাটি। বয়োসন্ধিক্ষণে শুরু হয় ধীরে ধীরে বন্ধুদের সাথে মেলামেশা, খেলাধুলা, হৈ চৈ কমিয়ে দেবে ছেলে বা মেয়েটি। পূর্বে এমনটি ছিল না সে, বরঞ্চ আনন্দপূর্ণ আচরণই ছিল তার চরিত্রের মলধারা।
সাধারণত শিক্ষকের পরিবর্তন, বাড়ি বদল, বন্ধু হারানো কিংবা শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি ঘটনাগুলো সমস্যাটি উসকে দিতে পারে। দীর্ঘদিন ছুটির কারণে স্কুলে যাওয়া হয় না, অথবা শারীরিক অসুস্থতার কারণেও অনেক সময় লম্বা লম্বা সময় অনুপস্থিত থাকতে হয়-এমনকি পরিস্থিতিতে স্কুল যাওয়ার দিনই অনীহা জাগতে পারে, অথবা আগে ছিল এমন সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
দাদা-দাদীর সাথে একটি শিশুর নিবিড় বন্ধন গড়ে ওঠে। অনেক সময় দেখা যায়, এদের কারও অসুস্থতা থাকলে শিশুটি স্কুলে যেতে চাইবে না। এমনও হতে পারে কোনো কোনো মা ইচ্ছাকৃতভাবেই সন্তানটিকে স্কুলে না যাওয়ার ব্যাপারে ইন্ধন দিয়ে থাকেন নিজের অজান্তেই, হয়ত বা অবচেতনভাবেই শিশুটির সান্নিধ্য কামনা করেন ভেতরে ভেতরে, অথবা ভাবেন স্কুলে যাওয়াটি অর্থহীন, কিংবা শিশুটি দরে থাকুক মানতে পারেন না।
অপেক্ষাকৃত কম বয়সের শিশুর স্কুলে না যাওয়ার পেছনে লুকিয়ে থাকে সেপারেশন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার। যেমনটি ঘটেছে সজীবের ক্ষেত্রে। মাত্র ৮ বছর বয়স ওর। বাবার সাথে আছে নিবিড় বন্ধন। বাবা সরকারি কর্মকর্তা, বদলি হয়েছেন কক্সবাজার। বাবা চলে যাওয়ার পরই সজীবের ভেতরে স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা শুরু হয়ে গেছে, অথচ এমনটি আগে কখনো ছিল না।
বয়স্ক শিশুদের স্কুলে যেতে না চাওয়ার কারণগুলো হলো- স্কুল ফোবিয়া বা স্কুল ভীতি, যাওয়া-আসার পথের সমস্যা, অন্য দুরন্ত শিশুদের দ্বারা অত্যাচারিত, পীড়িত বা সমালোচিত হওয়া, আশানুরূপ ফলাফলে ব্যর্থতা। টিনএজারদের স্কুলে না যাওয়ার সাথে জড়িত থাকে বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন। স্কুলের প্রতি অনীহার সাথে সাইকোসিস বা বড় ধরনের মানসিক রোগের সংশিস্নষ্টতা তেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
স্কুল পালানো শিশু আর স্কুলে যেতে চায় না এমন একটি শিশুর মাঝে রয়েছে সুসপষ্ট সীমারেখা। পালানো শিশুর মা-বাবা জানে না যে সন্তান স্কুলে যায়নি; স্কুলে যাওয়ার নাম করে বের হবে সে, এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াবে, সিনেমায় যাবে, বাজে ছেলেদের সাথে আড্ডা দেবে, ছুটির সময় হলে বাসায় ফিরে আসবে অথবা ফিরতে দেরি করবে। এসব শিশুর পরীক্ষার ফলাফল খারাপ তার কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডারই অন্তর্নিহিত মল কারণ। পারিবারিক সমস্যা যেমন-মা-বাবার দাম্পত্য কলহ-দুষকর্ম, বড় পরিবার, আর্থিক অনটন, দেখা শোনার নিয়মানুবর্তিতার অভাব স্কুল পালানো মনোভাব গড়ে তুলতে পারে একটি শিশুর ভেতর এর চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্নতর।
পক্ষান্তরে স্কুলে যেতে চায় না এমন শিশুর পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়ে থাকে-সমস্যাটির সাথে জড়িত থাকে পারিবারিক বৈশিষ্ট্য, ইমোশনাল ডিসঅর্ডার।
চিকিৎসা ব্যবস্থা
১. দ্রুত স্কুলে ফেরত পাঠাতে হবে শিশুটিকেঃ হঠাৎ করে শুরু হওয়া সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হওয়ার আগেই এই ব্যবস্থা নিতে হবে, পুরো স্কুল পিরিয়ডই শিশুটিকে স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। মা ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে তাকে স্কুলে পাঠাতে পারলে ভালো ফল দেবে, শিশুটির মঙ্গলের জন্যই দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। মা-বাবাকে এক্ষেত্রে ছাড় দেয়া যাবে না। মা-বাবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং শিক্ষকের সমর্থন, সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
টিচারের উচিত হবে স্কুলে পড়া ধরা কিংবা বাড়ির কাজ থেকে কিছুদিনের জন্য ছাত্র বা ছাত্রীটিকে রেহাই দেয়া, মমতা দিয়ে ধীরে ধীরে স্কুলের নিয়ম-শৃখলার সাথে তাকে একাত্ম করে নিতে হবে। স্কুলে অন্য ছাত্র-ছাত্রীর দ্বারা নাজেহাল হওয়ার ঘটনা থাকলে, উদঘাটন করতে হবে-ব্যবস্থা নিতে হবে শিক্ষককে। যাওয়া-আসার পথে কোনো সমস্যা আছে কিনা খুঁজে দেখতে হবে।
২. যদি সমস্যাটি ইতিমধ্যেই দীর্ঘায়িত হয়ে যায়, ধীরে ধীরে স্কুলের প্রতি সন্তানকে আগ্রহী করে তুলতে হবেঃ প্রথম প্রথম স্কুল থেকে ঘুরিয়ে আনতে হবে, ক্রমান্ব্বয়ে একটা ঘন্টা... দুই ঘন্টা... তিন ঘন্টা... এভাবে স্কুলে অবস্থানের সময় বাড়াতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষ একই ক্লাসের অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে টিউটোরিয়াল ক্লাসের আয়োজন করে সমস্যায় আক্রান্ত শিশুটির অনীহা কমিয়ে আনা যায়, স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব।
স্কুল বদলানোর প্রয়োজন হতে পারে অনেক সময়। এ্যাংজাইটি তীব্রতর হলে হাসপাতালেও ভর্তির প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। তবে এমন ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনা কমই থাকে।
৩. পারিবারিক থেরাপিঃ শিশুর প্রতিটি কাজে, গতিবিধিতে মা-বাবার ভূমিকা কমিয়ে আনতে হবে। সন্তানের এই অনীহাকে কোনো অজুহাতেই ছাড় দেয়া যাবে না, সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে স্কুলে ফেরার ব্যাপারে এক্ষেত্রে বাবা-মার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ফলাফল
দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে সফলতা আসে
যদি শিশুটির বয়স থাকে কম, সমস্যাটি যদি হঠাৎই শুরু হয়ে থাকে, সমাধানের পদক্ষেপ যদিও নেয়া দ্রুত ফলাফল আশাব্যঞ্জক। স্কুলে ফেরানো গেলেও আবেগীয় ও সম্পর্কজনিত সমস্যা সাধারণত থেকেই যায়, অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক সম্পর্ক সীমাবদ্ধতায় আটকে যায়, এক তৃতীয়াংশ নিউরোটিক ডিসঅর্ডারে ভুগে থাকে। খুবই কম সংখ্যকের মধ্যে বাইরে যাওয়ার ভীতি কিংবা কাজ করার অনীহা জাগতে পারে।

সন্তানের যত্ন নিতে

সন্তানের যত্ন নিতে...

বয়সসীমা ২ থেকে ৮ বছর
  • একদম শৈশব থেকেই যেসব সমস্যা শুরু হয় তার মধ্যে অন্যতম বাচ্চা খেতে চায় না।
  • বাচ্চাকে তার মতো করে খেতে দিন।
  • খাবার টেবিলে বসে খাওয়ান। বাড়ি ঘুরে কিংবা টিভি দেখিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করবেন না।
  • ক্ষিদে লাগতে দিন। প্রয়োজনে দিনের এক বেলার খাবার বাদ দিন। ক্ষিদে পেলে এমনি খাবে।
  • বাড়ির তৈরি সুস্বাদু খাবার দিন। তবে এক খাবার প্রতিদিন দেবেন না।
  • নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ান।
চিপসের মতো স্ল্যাকস যত পারবেন কম খাওয়াবেন। এই বয়সে আরো একটি গুরুতর সমস্যা হলো বাচ্চা কথা শোনে না।
  • বাচ্চাকে পরিণত মানুষ হিসেবে দেখুন।
  • বাচ্চাদের মতামতকে গুরুত্ব দিন। ‘ও তো বাচ্চা, কিছু বোঝে না’ এ ধরনের মন্তব্য ওদের সামনে করবেন না।
  • নিজেদের আচরণ ঠিক রাখুন। কারণ এই বয়স থেকেই বাচ্চারা অনুকরণ করতে শেখে।
  • বাচ্চার সমস্যার কথা মন দিয়ে শুনুন। তুচ্ছ মনে হলেও শুনুন। কারণ ওখানেই লুকিয়ে বড় বড় সমস্যার বীজ।
  • অতিরিক্ত শাসন থেকে কখনো যেন সন্তান কষ্ট না পায় অর্থাৎ যাতে হতাশাগ্রস্ত না হয়।
  • অফিস অথবা ব্যবসার টেনশন বাড়িতে আনবেন না।
  • এই বয়সে বাচ্চার আঙুল চোষার মতো বিভিন্ন বদ অভ্যাস সৃষ্টি হয়।
  • মনে থাকা উদ্বেগ, আকাঙ্ক্ষা, নিরাপত্তার অভাবে দুই-আড়াই বছর বয়সে মুদ্রাদোষ তৈরি হয়।
  • বাবা-মায়ের একাকিত্বে অনেক বাচ্চা মনে করে তারা আর তাদের ভালোবাসা পাচ্ছে না।
  • রাতারাতি মুদ্রাদোষ ছাড়ানো সম্ভব নয়। মুদ্রাদোষ ছাড়ানোর জন্য ছোটখাটো উপহার দিন।
  • বিছানা ভেজানোর সমস্যা এড়াতে পেপার টয়লেট ট্রেনিং দিন। সন্ধ্যার পর পানি খাওয়ানোর পরিমাণ কমান। মাঝরাতে একবার উঠিয়ে টয়লেট করান।
  • ৫ বছরের পরও বিছানা ভেজালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বাচ্চারা যখন প্রথম স্কুলে ভর্তি হয় তখন অস্বস্তিবোধ করে। এটা খুবই স্বাভাবিক।
  • নিজে সঙ্গে করে নিয়ে বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।
  • স্কুলের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
  • পরীক্ষাভীতি এড়াতে তাকে বোঝান পরীক্ষাটি তেমন ভয়ের কিছু না।
  • ভয় কাটাতে ভয় দেখাবেন না। কাঁটা দিয়ে সব সময় কাঁটা তোলা যায় না।
  • যুক্তি দিয়ে ভয় কাটানো যায় না। বাচ্চাদের সাহস দিন।
  • যে জিনিসে বাচ্চা ভয় পায় সেটা নিয়ে আলোচনা বা হাসাহাসি করবেন না।
  • চাকরিজীবী মায়েরা বাচ্চার আয়া সম্পর্কে সচেতন থাকুন। অসময়ে বাড়িতে ফিরে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন।
ছোট মেয়ের বাবা যারা তাদের জন্য রয়েছে বোঝার কিছু বিষয়
  • পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ছোট মেয়েটির ধারণা শেখা শুরু হয় বাবার মাধ্যমেই।
  • মায়ের বিকল্প হতে চাইবেন না। বরং পার্কে গিয়ে মজা করুন। বাচ্চার প্রিয় কার্টুন বা হিরোর মতো মজা করে গান গেয়ে শোনান।
  • আগে বন্ধু হবেন পরে অভিভাবক।
  • বাচ্চা যদি গান, ছবি আঁকা শেখে তার সাথে আপনিও করুন।
  • আপনি বাবা বলে, পুরুষ বলে কোমল মনোভাব থেকে বিরত থাকবেন না। এর ফলে দূরত্ব বাড়বে। স্নেহ মমতা প্রকাশ করুন। মেয়েরা ভালোবাসা ও যত্ন পেতে পছন্দ করে। বন্ধন দৃঢ় হবে।
  • বাবা বলে প্রভুত্ব না খাটিয়ে খোলাখুলি কথা বলে সমস্যার সমাধান করুন।
  • আপনার যথাযথ সঙ্গ আপনার মেয়ের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে।
  • মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মধ্যে একটি সমস্যা দেখা দেয়, যা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার নামে পরিচিত
  • স্কুলে সদ্য ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে অন্যমনস্কতা ও দূরন্তপনা লক্ষ করা যায়।
  • আড়াই থেকে চার বছর বয়সের মধ্যে এডিএইচএডি হয়।
  • উদ্বেগ, অবসাদ থেকেই এই রোগ হয়।
  • পুরো প্রশ্ন না শুনেই উত্তর দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
  • একটি কাজ শেষ না করে আরেকটি কাজ শুরু করা।
  • খেলনা, পেনসিল, বই ইত্যাদি কোথায় রেখেছে তা মনে রাখতে না পারা।
  • পরিবারে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখুন।
  • ধৈর্যহারা হবেন না।
  • বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
বয়সসীমা ৮ থেকে ১২ বছর
শিশুদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ খুব প্রখর। এ জায়গায় বিভিন্ন সমস্যা হয়
  • অন্যের সামনে বকাবকি করবেন না।
  • আপনি ওর সম্মানের ব্যাপারে সচেতন, সেটা ওকে বুঝতে দিন।
  • স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে শ্রদ্ধা করুন। তাতে আপনার মিশুও শ্রদ্ধাবোধ শিখবে।
  • ছোট ভুল স্বীকার করতে শেখান।
  • অন্যের প্রতি দায়িত্ববান হতে শেখান।
  • ভালো কাজে বাচ্চাদের উৎসাহ দিন।
  • সাফল্য না পেলে হতাশাজনক কথা বলবেন না।
  • সিদ্ধান্ত নিতে শেখান। সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করুন। তবে চাপিয়ে দেবেন না।
অনেক শিশুর মধ্যে মারধর বা আক্রমণাত্মক আচরণ দেখা যায়
  • আড্ডার ছলে ক্ষোভ ও অপ্রাপ্তির কথা বোঝার চেষ্টা করুন।
  • সন্তানের বন্ধুদের সাথেও বন্ধুর মতো শিশুন।
  • সারাক্ষণ ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবেন না। ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দিন।
  • জ্ঞান না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বোঝান।
  • আমরা তোমার জন্য এত করছি এ ধরনের কথা বলবেন না।
  • টেলিভিশন বা সিনেমার প্রভাব খুব প্রত্যক্ষ। তাই বলে দেখা বন্ধ করে দেবেন না। যুক্তি দিয়ে বোঝান।
অনেক বাচ্চা বাসার কাজের লোকের সাথে দুর্ব্যবহার করে
  • এ জন্য অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিক পরিবেশ দায়ী।
  • বাড়ির অন্য কেউ যাতে কাজের লোকের সাথে খারাপ ব্যবহার না করে।
  • বাচ্চা করে ফেললে কাজের লোকের সামনে বকাবকি না করে পরে তাকে বোঝান।
  • কাজের লোককে সম্বোধন করতে শেখান।
  • বোঝার চেষ্টা করুন যে কাজের লোক এখানে চাকরি করতে এসেছে।
  • কাজের লোক নয় কারো সাথেই খারাপ ব্যবহার করতে হয় না বোঝান।
  • বাচ্চাকে নিজের কাজ নিজে করতে শেখান।
অনেক বাচ্চার মধ্যে তোতলামি করার প্রবণতা দেখা যায়
  • দুই থেকে দশ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে সাধারণত এই সমস্যা দেখা যায়।
  • আপনজনদের সাথে স্বাভাবিক থাকলেও শিক্ষক, অপরিচিত মানুষ দেখলে তোতলায়।
  • অতিরিক্ত আদর ও শাসনও এর কারণ হতে পারে।
  • জন্মের পর অপুষ্টি, অসুখ, অন্য সন্তানের প্রতি বেশি আদর ইত্যাদি থেকেও তোতলামি হতে পারে।
বয়সসীমা ১২ থেকে ১৬ বছর
এই বয়সে শিশুদের মধ্যে অনেক সময় সবজান্তা ভাব দেখা যায়।
  • এই বয়সে আমাকে কেউ বোঝে না এমন মনোভাব খুব সহজেই সৃষ্টি হয়।
  • আত্মসম্মানে লাগে এমন কথা বলবেন না।
  • বাচ্চা বয়সের মতো এ বয়সেও বাবা-মায়ের সাহচর্য প্রয়োজন।
  • স্কুল থেকে ফেরার পর মায়েরা সময় দিন।
  • বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিশতে দেবেন কিন্তু খেয়াল রাখবেন যেন আপনি দূরে সরে না যান।
  • খারাপ আচরণে না বকে বোঝার এবং বোঝানোর চেষ্টা করুন।

আপনি কি ভালো বক্তা হতে চান?

লোকের সামনে বক্তৃতা দেয়া কি আসলেই ভয়ের? সবার দ্বারা কি তা সম্ভব হয়ে ওঠে না? এ ক্ষমতা কি জন্মগত? কেউ কি চেষ্টা আর সাধনা করে এ ক্ষমতা অর্জন করে নিতে পারে? যারা পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে গবেষণা করে থাকেন তাদের একদম সাদামাটা জবাব-একটু উদ্যোগী হলেই আপনিও ভালো বক্তা হয়ে উঠতে পারেন। অনেক লোকের সামনে একদম সহজ স্বাভাবিক থেকে সাবলীল বক্তৃতা দেয়ার ক্ষমতা আপনিও রপ্ত করে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

মিজান সাহেব!  একটি প্রতিষ্ঠানের স্টোরকিপার। বড় মনের একজন লোক। অফিসের পিয়ন হতে শুরু করে একদম বড় সাহ্বে পর্যন্ত সবার সাথে প্রচন্ড খাতির। এ বাড়তি খাতিরের কারণে মিজান সাহেবকে অনেক সময় নানান কিছু খেসারত দিতে হয়। যেমন কেউ ছুটিতে গেলে দায়িত্ব তাকেই নিতে হয়। প্রতিবারেই এমনটি ঘটে। মিজান সাহেব এটিকে তেমন বেশি একটা কষ্টের মনে করেন না। কিন্তু সব দিন তো আর সমান হয় না। সেদিন তিনি দায়িত্বে ছিলেন অফিসের পাবলিক রিলেশন অফিসারের। ছুটির ঠিক ঐদিনই ঢাকায় একটা প্রাইভেট ভার্সিটির এমবিএর ছাত্ররা এসেছে প্রতিষ্ঠানটি সফরে। তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড বোঝাতে হবে। পনেরো জন ছাত্রের সামনে বক্তৃতা দিতে হবে। এমনটি তো তিনি ইতিপূর্বে কখনো করেননি। তার তো বক্তৃতা দানের অতীত কোনো অভিজ্ঞতা  নেই। তাহলে কি হবে? শরীর খারাপের অজুহাতে তিনি কোনো রকমে সে যাত্রা রেহাই পেলেন। লোকের সামনে বক্তৃতা দেয়া কি আসলেই ভয়ের? সবার দ্বারা কি তা সম্ভব হয়ে ওঠে না? এ ক্ষমতা কি জন্মগত? কেউ কি চেষ্টা আর সাধনা করে এ ক্ষমতা অর্জন করে নিতে পারে? যারা পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে গবেষণা করে থাকেন তাদের একদম সাদামাটা জবাব-একটু উদ্যোগী হলেই আপনিও ভালো বক্তা হয়ে উঠতে পারেন। অনেক লোকের সামনে একদম সহজ স্বাভাবিক থেকে সাবলীল বক্তৃতা দেয়ার ক্ষমতা আপনিও রপ্ত করে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিষয়বস্তু
আপনি যদি শিক্ষানবিশ বক্তা হয়ে থাকেন তাতে সাবলীল বক্তব্যের ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হল বক্তব্যের বিষয়বস্তু হতে হবে একদম সহজ সরল। যে কোনো বক্তব্যের মল্য লক্ষ হল শ্রোতাদের তথ্য দেয়া। তাতে বড়জোর দুবা একটা নতুন তথ্য থাকাই যথেষ্ট। ভারি বক্তৃতা কেবলমাত্র শ্রোতাদের মনাকর্ষণ হারায় না, বক্তা এতে সাবলীলতা হারিয়ে ফেলে। বক্তাকে দুটো দিক অবশ্যই জানা থাকা চাই। প্রথমে আপনাকে পরীক্ষা করে নিতে হবে এক বা দুইটি বাক্য দিয়ে, পুরো প্রসঙ্গ উপস্থাপনা করতে পারেন কিনা মানে মন্তব্য প্রসঙ্গটা একদম স্বচ্ছ তথ্যনির্ভর আর লক্ষ্য অভীষ্ট হওয়া চাই। আপনি যা বলতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে যদি আপনার একদম স্বচ্ছ পরিষ্কার ধারণা না থাকে সে ক্ষেত্রে বক্তৃতা দেয়ার চেষ্টাই করা উচিত না। এতে আপনি শ্রোতাদের কাছে হাস্যসপদ পাত্র হয়ে দাঁড়াবেন। সুতরাং বক্তৃতা দেয়ার শুরুতে বিষয়বস্তুত একবার পরখ করে নিন-তা হতে হবে সরল, অনেক বেশি তথ্য সম্ভার করে তা যেনো ভারি হয়ে না যায়, অল্প কথায় বোঝানো যায় আর শ্রোতাদের শোনানোর আগে বক্তা যেনো এ আত্মবিশ্বাস রাখেন যা বলতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে তিনি সম্পর্ণ অবহিত।
সুবিন্যাস্ত পরিকল্পনা
আপনার বক্তব্য নাতিদীর্ঘ বা অনেক বড় যেমনই হোক আপনাকে আগে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে কোন পয়েন্টের পর কোন প্রসঙ্গ আনবেন। সামনে পুরো লিখিত বক্তব্য রেখে বক্তৃতা দেয়ার চেয়ে মঞ্চে না যাওয়াটাই শ্রেয়। বক্তব্য দেয়াকালে আপনার দৃষ্টি থাকবে দর্শকের দিকে। সাথে ছোট কাগজ বা চিরকুট থাকবে। তাতে শুধুমাত্র পয়েন্টগুলো সাজানো থাকবে। এতে করে বিষয়বস্তু উপস্থাপনার বিন্যাস আর সাবলীলতা অক্ষুণ্ন থাকবে।
পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট সাইকোলজিস্টরা এ শিরোনামে একটা অদ্ভুত উপদেশ দিয়ে থাকেন। তাদের উপদেশ বক্তব্যের একদম শেষ কথা ছোট কাগজের ওপরে লিখে রাখা। এর কারণ বহুবিধ। বক্তব্যের একদম শেষ কথা শ্রোতারা সবচেয়ে বেশি স্মরণে রাখে। এ মন্তব্যেই শ্রোতাদের সর্বাধিক প্রতিক্রিয়ান্ব্বিত করে। কোনোভাবেই তা যেনো বাদ পড়ে না যায় বা তাড়াহুড়োর কারণে খন্ডিত হয়ে না যায়। চিরকুটের একদম মাথায় লিখে রাখার কারণে পয়েন্ট ভিত্তি করে বক্তা যেটাই বলুক কিন্তু্তু বক্তব্য সম্ভাব্যমুখী থাকে, এটি সবসময় স্মরণে থাকে। এটি বক্তার আত্মবিশ্বাস অনেক মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়।
বক্তব্য সংক্ষিপ্ত রাখুন
সাবলীল বক্তৃতা দেয়ার তৃতীয় শর্ত হল তা সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ শ্রোতারা দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না, এমনকি বক্তৃতার বিষয়বস্তু যতই আকর্ষণীয় হোক না কেনো। কারণ দীর্ঘক্ষণ বক্তৃতার ক্ষেত্রে শ্রোতাদের মাঝে বিরক্তির প্রকাশ শুরু হয়ে যায়। তা আপনার বক্তব্য দানের আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে আপনার নার্ভাসনেস ভাব আরও প্রকট হয়ে দাঁড়ায়।
গবেষকদের উপদেশ ভালো বক্তা হতে চাইলে যে কোনো বক্তব্য বারো মিনিটের বেশি দীর্ঘায়িত করা কোনোভাবেই উচিত নয়। সময়, পরিস্থিতি, পরিবেশ ভেদে এতেও বাড়তি কাটছাটের দরকার হতে পারে। সিডিউল বক্তব্য, হলঘরে এয়ারকন্ডিশনার নষ্ট, শ্রোতারা গরমে অস্থির। এ ক্ষেত্রে বক্তব্য যতই ছোট করবেন, ততই লাভ আপনার। দর্শকদের করতালি আপনাকে আশ্বস্ত করে তুলবে, পাশাপাশি মঞ্চে আপনি অনেক বেশি সাবলীল আর স্বাচ্ছন্দ্য থাকতে পারবেন।
কৃত্রিমতা পরিহার করুন
বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সবধরনের কৃত্রিমতা একদম সচেতনভাবে পরিহার করা চাই। তবেই আপনি স্বাচ্ছন্দ্য থাকতে পারবেন। অভিনয় করতে গেলে এ বানানো কৃত্রিমতা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে আপনার কাছে। আপনি হতাশ হবেন, আত্মবিশ্বাস কমে আসবে। যে গল্প আপনি নিজ অন্তর হতে হাসির মনে করেন না, কখনোই আশা করতে যাবেন না শ্রোতাদের কাছে তা হাসির হবে। বক্তব্যে পরিবেশিত তথ্য যদি আপনার কাছে চমকপ্রদ মনে না হয়, দর্শকদের কাছে তা চমকপ্রদ হবে কখনোই এমনটি ভেবে বসবেন না।
লেখক রবার্ট ফ্রস্ট একটা সুন্দর কথা বলেছিলেন ‘যে হৃদয়বিদারক কাহিনী লেখকের চোখের জল ঝরায় না, পাঠকদের বেলাতেও তেমনটি ঘটে’। ঠিক এ প্রসঙ্গ চলে পাবলিক স্পিকিং-এর বেলাতে। বক্তব্যের বিষয়বস্তু যদি আপনাকে সত্যি সত্যিই কান্নাতুর করে, শ্রোতারাও তাতে আপনার অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেবেন। আসলে বক্তার মনে বিশেষ অনুভূতি সঞ্চারের দরকার। আপনি বক্তা, সামনে একরাশ শ্রোতা। আপনি মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন শ্রোতাদের এমন কোনো অভিজ্ঞতা শোনানোর জন্য, যেটি আপনি জানেন কিন্তু্তু শ্রোতারা অজ্ঞ। এ ক্ষেত্র শ্রোতাদের তথ্য জানালেই চলবে না, আপনার পুরো অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেয়া চাই। এ ক্ষেত্রে ‘আমি’ ব্যবহার করুন প্রকাশ করুন এ অভিজ্ঞতার অনুভূতি থ্রিল, ভয়, অনুশোচনা।
সূচনার পূর্ব
বক্তব্যের শেষের মন্ত্রব্যের মত সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ হলো সচনা অংশ। কারণ বক্তার সাথে শ্রোতার যে সম্পর্ক গড়ে উঠবে তা নির্ধারিত হয় এর দ্বারা। তারা আপনার সম্পর্কে একটা ইমপ্রেশন গড়ে নেয়। এটি অনেক মাত্রায় প্রভাবিত করবে বক্তার প্রতি শ্রোতার মিথস্তিক্রয়তার ধরন। এক্ষেত্রে কয়েক দিক নজর রাখতে পারেন।
মঞ্চে উঠে অবশ্যই দর্শকদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসবেন। মনে রাখবেন হাসিমুখে তাকালে আশপাশের লোকজন এমন অভিব্যক্তিই উপহার দেবে। যদি আপনি মুখ গোমড়া, ভারি করে রাখেন সে ক্ষেত্রে শ্রোতারা আপনার বক্তব্য শুরু হবার আগ হতেই একটা নেতিবাচক ধারণা গড়ে নেবে মনের মাঝে।
উপস্থাপকের পরিচিতিকালে মাথা হেলিয়ে তাকে সম্বোধন করবেন। ধন্যবাদ দিতে যেনো ভুল না হয়। হতে পারে এগুলো একদম মামুলী ব্যাপার কিন্তু শ্রোতারা সচনা পূর্বের এসব সক্ষ্ম দিক গভীরভাবে দেখে থাকেন।
অতঃপর বক্তৃতা দেয়ার পালা। যতই তাড়া থাকুক একটু বিলম্ব দিন। অন্তত ত্রিশ সেকেন্ডের নীরবতা, এর লক্ষ্য একটাই শ্রোতারা যেনো আপনার ওপর পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারে। সামান্যক্ষণ বিরতি দেয়া হলে ক্ষণিককালের জন্য শ্রোতার মনে অনুভূতি খেলে যায়। বক্তা কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন যা কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের কানে এসে পৌঁছবে। বক্তার মনের কথাও এটিই।
ক্ষণিকের নীরবতাকালীন আপনার অন্য করণীয়তা হল শ্রোতাদের সাথে চোখে চোখ রাখা। এ ক্ষেত্রে সামনের শ্রোতাদের মধ্যে হতে গুটিকতক ঠিক করে নিন-একজন ডান দিকে, একজন বাম দিকে, একজন ঠিক মাঝখানের। এ চোখ মেলানো হবে ক্ষণিকের। অতঃপর আপনার দৃষ্টি হাজার শ্রোতার চোখের মাঝে হারিয়ে যাবে।
বক্তৃতা মানে পাঠ দান নয়
বক্তাকে প্রথমে বক্তা আর সংবাদ পাঠক দুটোর মধ্যেকার ফারাক বুঝতে হবে। লিখিত বক্তব্য পড়া হলে বক্তার সাবলীলতা, অনুভূতি চাপা পড়ে যায়, শ্রোতার সাথে চোখে চোখ মেলানো হয় না বলে বক্তব্য কেমন যেনো নীরস বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। সার্থক বক্তারা কখনোই লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন না। তার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চিরকুট লিখে নেয়াকে শ্রোতারাও কামনা করে। কারণ এতে কোনো প্রসঙ্গ বাদ যাবার ঝুঁকি থাকে না, বক্তব্য অনেক বেশি সুবিন্যাস্ত আর গোছালো হয়ে থাকে।
রিলাক্স থাকা চাই
বক্তৃতা দেয়ার সময় যতই কাছে চলে আসে, নতুন বক্তার মনের শিহরণ, ভয় ক্রমেই বেড়ে যায়। বুক ধড়ফড় করতে থাকে। শরীর, হাত, পা ঘামতে শুরু করে। মনের অজান্তে কোনো সময়ে হাতের নখ আমাদের দাঁতের মাঝে চলে যায়। অনেক লোকের সামনে দাঁড়ানো অনেকটা মানসিক চাপের, বিশেষ করে আপনি যদি এতে অভ্যস্ত না থাকেন। এক্ষেত্রে একদম রিলাক্স থাকার চেষ্টা করবেন। আপনার একদম জোরে জোরে লম্বা দম নেয়ার দরকার নেই। হাল্কা সুস্থমাত্রার দম নিন তবে তা হতে হবে নিয়মিত ছান্দিক। দেখবেন আপনি অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এটি নিশ্চিত করতে পারলে কে আর আপনাকে ঠেকায়? তবে মনে রাখবেন-লোকের সামনে বক্তৃতা দেয়া, যেটিকে সহজ ইংরেজিতে বলা হয় ‘পাবলিক স্পিকিং’ এটি অবশ্যই একটা স্কিল বা বিশেষ গুণ। কিন্তু মিউজিক্যাল ক্ষমতা বা অঙ্কন উৎকর্ষতার মত এটি কোনো জন্মনির্ভর ট্যালেন্ট নয়। চর্চা আর উদ্যোগ আপনার মাঝেও এ স্কিল গড়ে দিতে পারে। শর্ত একটাই যেখানেই সুযোগ পান দু’চারটি কথা বলতে পিছপা হবেন না। না হোক বিজনেস মিটিং, লাংকস পার্টি বা খেলার মাঠ।
জন মে বলেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাড়া জাগানো সাইকোলজিস্ট হলেন জন মে। তার সারাজীবনের গবেষণার মল বিষয়বস্তু হলো ‘পাবলিক স্পিকিং’। তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে তিনি মলত এটি শিখিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তার উপদেশ-
শ্রোতার সামনে একদম বন্ধুর ভূমিকা নিন। হাসুন, অনুভূতি, অভিব্যক্তি প্রকাশ করুন। এমনভাবে নিন যেনো সামনের শ্রোতা মহল আপনার অনেক দিনের চেনা।
মঞ্চে দাঁড়ালে কম বেশি নার্ভাসনেস সবারই আসে। আপনার করণীয়তা হলো এ নার্ভাসনেস সামাল দেয়া। লৌহ মানবী পরিচিত ব্রিটেনের প্রাইম মিনিস্টার মার্গারেট থেচার প্রায়ই বলতেন ‘যখন কোনো জায়গাতে আমাকে বক্তৃতা দিতে হবে এমন অবস্থার সমমুখীন হলে আমার মাঝে কমবেশি মাত্রার নার্ভাসনেস দেখা দেয়।
যারা বক্তৃতা দিতে গিয়ে খুব বেশি নার্ভাস হয়ে যান তাদের প্রতিকার হতে পারে-আপনি ধরে নিন আপনি নন অন্য কেউ বক্তৃতা দিচ্ছে। মনে মনে ভাবতে পানের-এমনি একজন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে যাকে আপনি তার বক্তৃতার জন্য প্রশংসা করে থাকেন।
শ্রোতাদের ওপর আপনার কর্তৃত্ব বজায় রাখা চাই। শুরুতে ক্ষণিক বিরতি দিয়ে বক্তব্য শুরু করুন যেনো শ্রোতারা আপনার ওপর মনোনিবেশ করতে পারে, মাঝে মাঝে শ্রোতাদের মধ্যকার কয়েকজনের সাথে একদম সোজাসুজি চোখে চোখ মেলান। আপনাকে বুঝিয়ে দিতে হবে আপনি বক্তব্য নিয়ে এসেছেন শ্রোতাদের জন্য যাদের কাজ হলো তা মন দিয়ে শোনা।
আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ চাই। মঞ্চে আপনার দাঁড়ানোর ভঙ্গিমাতে যেনো এর প্রকাশ ঘটে। যখন শ্রোতা পুরোমাত্রায় দেখা যায় সে ক্ষেত্রে শ্রোতাদের অংশগ্রহণেও বাড়তি সক্রিয়তা চাই। এর সুযোগ নিতে আপনি উঁচু ডেস্কের পেছনে না থেকে স্পিকার হাতে একদম খালি মঞ্চে চলে আসুন।
বক্তৃতায় কোন প্রসঙ্গের পর কোন প্রসঙ্গ আনবেন সে ব্যাপারে আগাম পরিকল্পনা নিন। ভালো হয় যদি পয়েন্টগুলো একটা ছোট কাগজে লিখে নেন।
বক্তৃতার বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্ত, সরল ও বোধগম্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।
আপনার বক্তৃতার মাঝে স্বতঃস্ফূর্ততার প্রকাশ থাকা চাই। এতে অনুভূতির প্রকাশ প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে ও বক্তৃতা হয়ে ওঠে প্রাণময়।
গলার স্বরের দিকেও লক্ষ্য রাখা চাই। মাঝারি মাত্রাই সর্বোত্তম। তবে ঠোঁট, জিহ্বা, দাঁত আর গলবিলের সর্বোচ্চ ব্যবহার চাই যেনো বাচনভঙ্গি প্রাণজয়তা পায়।
যতক্ষণ বক্তব্য রাখবেন ততক্ষণই দর্শকের দিকে দৃষ্টি দেবেন। কেউ যেনো দৃষ্টির বাইরে না যায়, এমনকি মঞ্চের বিপরীতে কেউ থাকলেও অন্তত একবারের জন্য হলেও তার দিকে তাকাবেন।
সময়ের দিক ভুলে গেলে চলবে না। বিজনেস কনফারেন্সে বড়জোর সর্বোচ্চ এক ঘন্টাকাল বক্তৃতা রাখা যায়। সামাজিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা যেনো কোনোভাবেই দশ মিনিটের বেশি দীর্ঘায়িত করা না হয়।
সব কথার শেষ কথা এর চর্চা আর অনুশীলন। এর কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং আর বিলম্ব কেনো?