Thursday, May 16, 2013

ঘূর্ণিঝড় কী ও কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে।



ঘূর্ণিঝড় কী?

কোন জায়গার বাতাস গরম হলে তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় এবং ঐ জায়গায় নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়৷ তখন চারদিকের ঠান্ডা ও ভারী বাতাস প্রবল বেগে সেদিকে ছুটে আসে এবং ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রে প্রবেশ করে৷ এই প্রবল বায়ু প্রবাহকেই ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন বলে৷ বিভিন্ন দেশে ঘুর্ণিঝড়ের বিভিন্ন ধরনের নাম রয়েছে,যেমন উত্তর আমেরিকায় হারিকেন,দূরপ্রাচ্যে টাইফুন এবং আমাদের দেশে একে সাইক্লোন বা ঘুর্ণিঝড় বলে৷ মাসুদউর
ঘূর্ণিঝড় কেন হয়
প্রখর রোদ ও অত্যধিক তাপে কোনো জায়গার বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে গেলে ঐ স্থানে বাতাসের চাপ কমে যায় এবং নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়৷ এই ফাঁকা জায়গা পূরণ করার জন্য চারদিকের ঠান্ডা ও ভারী বাতাস মেঘসহ প্রবল বেগে ছুটে আসে এবং ঘুরতে ঘুরতে শূণ্যস্থানে প্রবেশ করে৷ ঘুরতে ঘুরতে ছুটে আসা বাতাসের এই প্রবাহকেই ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন বলে৷ ঘূর্ণিঝড়ে কেবল বাতাস থাকেনা প্রবল বৃষ্টিপাতও হয়৷ 
  • সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যখন ২৭ ডিগ্রী সেঃ বেশি হয় তখন ঘূর্ণিঝড় হবার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে৷ যে সকল সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রী সেঃ এর কম সেখানে সাধারণত ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় না৷
  • সমুদ্রে যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তাকে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় বলে৷ আর স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তাকে কালবৈশেখী ও টর্নেডো বলে৷
  •  সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে সাধারণত ৩-৭ দিনের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করে৷ আবার অনেকসময় ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রেই দুর্বল হয়ে পরে উপকূলে আঘাত হানে না৷
  • সাধারণত বাংলাদেশে বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ ও আশ্বিন-কার্তিক মাসে ঘূর্ণিঝড় হয়৷ অধিকাংশ ঝড়ের সৃষ্টি হয় বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি এলাকায়৷
বাতাসের বেগ বা গতি অনুসারে আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড়কে কয়েকটি শ্রেণীতে
ভাগ করা হয়ে থাকে৷ এগুলো হলো :
১. নিম্নচাপ :বাতাসের গতিবেগ যখন ঘন্টায় ৪০-৫০ কি ঃ মিঃ৷
২. গভীর নিম্নচাপ  :বাতাসের গতিবেগ যখন ঘন্টায় ৫১-৬১ কি ঃ মিঃ৷
৩. ঘূর্ণিঝড় :বাতাসের গতিবেগ যখন ঘন্টায় ৬২-৮৭ কি ঃ মিঃ৷
৪. প্রচন্ড ঘুর্ণিঝড় :বাতাসের গতিবেগ যখন ঘন্টায় ৮৮-১১৭ কি ঃ মিঃ৷
৫. হারিকেন গতিসম্পন্ন প্রচন্ড ঘুর্ণিঝড়   :বাতাসের গতিবেগ যখন ঘন্টায় ১১৭ কি ঃ মিঃ এর বেশি৷
ঘুর্ণিঝড় মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি
আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা৷ বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সমুদ্র-উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতি বছর কম বেশি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হয়৷ মানুষের পক্ষে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, এমন কি এর গতিপথ পরিবর্তন করাও সম্ভব নয়৷ কিন্তু এ ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে প্রায় সঠিক পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব৷ এজন্য পূর্বাভাস তথ্যানুযায়ী আমাদের পদক্ষেপ এবং পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে৷ কিছু ব্যবস্থা ও পূর্বপ্রস্তুতি নিলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা যেমন কিছুটা কমানো যায় তেমনি জলোচ্ছ্বাসের বেগও আমাদের পক্ষে কিছুটা কমানো সম্ভব হবে৷ নিম্নলিখিত প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে:  
  • বেড়ীবাঁধ তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ
  • পেরাবন সৃষ্টি ও এর যত্ন নেয়া
  • কিল্লা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ
  • ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ
  • বৃক্ষ রোপণ ও এর পরিচর্যা
  • উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা
  • ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ
  • পূর্বাভাস
  • সতর্কতা ও সংকেত প্রচার
  • ক্ষয়ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা
  • জরিপ ও তথ্য সংগ্রহ
  • কমিটি গঠন ও সংগঠন তৈরি
  • উপকরণ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ প্রস্তুত থাকা
ঘুর্ণিঝড় সংকেত সমূহ ও এর অর্থ
ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত শুধুমাত্র সমুদ্র বন্দর এবং নদী বন্দরকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে এবং তা বোঝা বেশ জটিল৷ সংকেতগুলো জনগণকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়নি৷ এছাড়া সংকেত থেকে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান (উপকূল থেকে কত দূরে রয়েছে), উপকূলীয় অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের স্থান পরিবর্তনের গতিবেগ কত এর কোনটিই বোঝা যায় না৷ কেবলমাত্র কোন দিক থেকে বাতাস বইছে এবং আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ হচ্ছে এবং বিপদাপন্নতা আরও বাড়ছে কিনা এটা বোঝা যায়৷ তারপরও উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণ এই সংকেতগুলোই অনুসরণ করে৷
বাংলাদেশে দুই ধরনের সংকেত ব্যবহার করা হয়৷ তাহলো-  
১. সমুদ্র বন্দরের জন্য ১১ টি সংকেত এবং
২ . নদী বন্দরের জন্য ৪টি সংকেত 
বিপদ বা ভয়াবহতা বিশ্লেষণ করে সর্বমোট ১১টি সংকেতকে ৫টি ভাগে ভাগ করা যায় যা নিচে দেয়া হলো:
    সমুদ্র বন্দর সংকেত নং         ১ ও ৩         - সতর্ক সংকেত
    সমুদ্র বন্দর সংকেত নং         ২ ও ৪         - হুঁশিয়ারি সংকেত 
    সমুদ্র বন্দর সংকেত নং         , ৬ ও ৭     - বিপদ সংকেত 
    সমুদ্র বন্দর সংকেত নং         , ঌ ও ১০    - মহাবিপদ সংকেত  
    সমুদ্র বন্দর সংকেত নং         ১১              - ঘূর্ণিঝড়ের প্রচণ্ডতার কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন  
ঘূর্ণিঝড় এবং ঝড়ের সংকেত সম্পর্কে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত প্রত্যেকের জানা উচিত৷ সংকেতসমূহ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :  
সমুদ্র বন্দরের সংকেতসমূহ
সমুদ্র বন্দরের বিপদ সংকেত দেয়া হলে সেখানে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয় এবং রেডিও-টেলিভিশনে বার বার প্রচার করা হয়৷  
একটি লাল পতাকা
  • ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত: এর অর্থ বঙ্গোপসাগরের কোন একটা অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বইছে এবং সেখানে ঝড় সৃষ্টি হতে পারে৷
  • ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত: সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে৷
  • ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত: এর অর্থ বন্দর দমকা হাওয়ার সম্মুখীন ৷

দুইটি লাল পতাকা
  • ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত: এর অর্থ বন্দর ঝড়ের সম্মুখীন হচ্ছে, তবে বিপদের আশন্কা এমন নয় যে চরম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷
  • ৫ নম্বর বিপদ সংকেত: এর অর্থ হচ্ছে অল্প বা মাঝারী ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে (মংলা বন্দরের বেলায় পূর্ব দিক দিয়ে)৷
  • ৬ নম্বর বিপদ সংকেত: এর অর্থ হচ্ছে অল্প বা মাঝারী ধরনের ঝড় হবে এবং আবহাওয়া দুযোগপূর্ণ থাকবে৷ ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷ (মংলা বন্দরের বেলায় পশ্চিম দিক দিয়ে)৷
  • ৭নং বিপদ সংকেত: এর অর্থ অল্প অথবা মাঝারী ধরনের ঘূর্ণিঝড় হবে এবং এজন্য আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে৷ ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রবন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷
তিনটি লাল পতাকা
  • ৮ নং মহাবিপদ সংকেত: এর অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় হবে এবং বন্দরের আবহাওয়া খুবই দুর্যোগপূর্ণ থাকবে৷ ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে (মংলা বন্দরের বেলায় পূর্ব দিক দিয়ে)৷
  • ঌ নম্বর মহাবিপদ সংকেত: এর অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে৷ ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করার আশন্কা রয়েছে (মংলা বন্দরের বেলায় পশ্চিম দিক দিয়ে)৷
  • ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত: এর অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঘূর্ণিঝড়টির বন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷
  • ১১ নম্বর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সংকেত: এর অর্থ ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সাথে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে এবং স্থানীয় অধিকর্তার বিবেচনায় চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার আশন্কা রয়েছে৷  
নদী বন্দরের জন্য সংকত সমূহ
নদী বন্দরের জন্য ৪ (চার) রকমের সংকেত রয়েছে৷ নিচে এগুলো পরিচিতি দেয়া হল:  
১ নম্বর সতর্ক সংকেত: এর অর্থ হলো আপনার এলাকায় ঝড় হতে পারে তাই পরবর্তী পরিস্থিতির দিকে নজর রাখুন৷ অর্থাত্‌ কোনো এলাকায় বিক্ষিপ্ত কাল বৈশাখী ঝড় কিংবা সামুদ্রিক ঝড় হতে পারে তবে নৌকা বা নৌযান চলাচল বন্ধ করতে হবে না৷ তবে অবশ্যই ঝড়ো আবহাওয়া ও সাময়িক দুর্যোগের জন্য সতর্ক থাকতে হবে৷  
২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত: এর অর্থ ঘন্টায় ৩৮ মাইলের কম গতি সম্পন্ন সামুদ্রিক ঝড় বা কালবৈশাখীর ঝড় আপনার এলাকায় আঘাত হানতে পারে৷ এজন্য ছোট ছোট নৌযানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহন করতে হবে অর্থাত্‌ যে নৌযানগুলোর দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট বা তার কম সেগুলোকে খুব তাড়াতাড়ি নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে৷ অন্য যে কোনো কারণে ব্যাপকভাবে কোনো এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এ সংকেত দেয়া হয়৷  
৩ নম্বর বিপদ সংকেত: এর অর্থ মাঝারি ধরনের সামুদ্রিক ঝড় আঘাত হানতে পারে এবং একারণে সকল নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে৷ কোনো এলাকায় ঘন্টায় ৩ঌ-৫৪ মাইল বেগে একটানা ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকলে এ সংকেত দেখাতে হবে৷ এ সংকেত একমাত্র সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের জন্যেই হয়, কালবৈশাখী ঝড়ের জন্যে এ সংকেত দেখাবার প্রয়োজন নেই৷
৪ নম্বর মহাবিপদ সংকেত: এর অর্থ, একটা প্রচণ্ড ঝড় আপনার এলাকায় শীঘ্রই আঘাত হানবে৷ সকল নৌ-যান নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে৷ যখন কোনো এলাকায় ঘন্টায় ৫৪ মাইলেরও অধিক গতিতে প্রচণ্ড সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের আশন্কা দেখা দেয় তখন এ সংকেত দেখাতে হবে৷  
ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত অনুযায়ী আপনি কি করবেন
রেডিও, টেলিভিশন বা অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের আবহাওয়া বার্তায় কি ধরনের সংকেত প্রচার করা হচ্ছে খেয়াল করে শুনুন এবং সংকেত অনুযায়ী যে কাজগুলো করা যেতে পারে তা হলো:  
সংকেত নং ১ ও ৩ (সতর্ক সংকেত) : 
  • লম্বা সময়ের জন্য যেমন ৩-৪ দিনের জন্য দূরে কোথাও না যাওয়া
  • ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী অবস্থা কী হয় সে দিকে খেয়াল রাখা
  সংকেত নং ২ ও ৪ (হুঁশিয়ারি সংকেত) :
  • এমন কোথাও না যাওয়া যেখান থেকে আসতে ১ দিনের বেশি সময় লাগবে৷
  • ঘূর্ণিঝড় আসছে এই চিন্তা মাথায় রাখা৷
  • মূল্যবান ও ভাসমান জিনিসপত্র কোথায় আছে সেদিকে লক্ষ রাখা৷
  • ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়স্থলে অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে পৌঁছাতে হবে সে ব্যাপারে খোঁজ রাখা৷
  • গবাদি পশু বাড়ির কাছাকাছি রাখা৷ : প্রয়োজনীয় উপকরণ হাতের কাছে রাখা৷
  সংকেত নং ৫, ৬ ও ৭ :
  • রেডিও,টেলিভিশন ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত বিপদ সংকেত ও নির্দেশ শুনতে হবে৷ বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান কত দূরে, বাতাসের গতিবেগ কত এবং ঝড়টির স্থান পরিবর্তনের গতিবেগ কত ইত্যাদি ভালো করে শুনতে হবে৷
  • পরিবারের সাথে থাকা এবং তাদের মানসিকভাবে সাহস দেয়া৷
  • মূল্যবান জিনিস ঘরের মেঝে খুঁড়ে অথবা শক্ত মাটির নিচে পুতে ফেলার ব্যবস্থা করা৷
  • শুকনো খাবার যেমন মুড়ি, চিড়া, গুড়, বিস্কুট, খাবার পানি, কিছু চাল, ডাল প্লাস্টিক পাত্রে ভরে ভালোভাবে মুখ বন্ধ করে নির্দিষ্ট জায়গায় গর্ত করে মাটির নিচে রাখার ব্যবস্থা করা৷
  • শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী ও অসুস্থদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা৷
  • গবাদি পশুদের নিকটবর্তী উঁচু জায়গা কিংবা কিল্লাতে নিয়ে যাওয়া অথবা তাদের বাঁধন খুলে দেয়া৷
  • মনে রাখতে হবে যে, অবস্থার অবনতি হলে এই বিপদ সংকেতের পরেই মহাবিপদ সংকেত আসবে এবং ঐ সময়ে চলাচল করা মোটেও সম্ভব হয় না৷ কাজেই আশ্রয়স্থলে যাওয়ার জন্য বিশেষ করে শারীরিকভাবে দুর্বলদের মহাবিপদ সংকেত পাওয়ার পূর্ব মুহূর্তেই স্থানান্তরের উপযুক্ত সময়৷
  • নৌকা, ইঞ্জিন চালিত নৌকা, ভেলা, ভাসমান দ্রব্য ও অন্যান্য যান প্রস্তুত করে গাছের সাথে ভালো করে বেঁধে রাখা৷
  • মাইক, মেগাফোন, হর্ণ বাজিয়ে কিংবা ঢোল পিটিয়ে রেডিও বা টেলিভিশনে প্রচারিত সংকেত ও ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ও গতিবিধির খবরাখবর প্রচার করা৷
  • নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার সময় প্রতিবেশীদের যাবার জন্য বলা৷
  • শক্ত ও মোটা দড়ি দিয়ে তৈরি করা মই বাড়ির বড় নারকেল বা তাল গাছের সাখে বেঁধে রাখা৷ কেউ যদি কোনো কারনে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে না পারে তবে জলোচ্ছ্বাসের সময় আশ্রয় নিতে পারবে৷
 সংকেত নং ৮, , ১০ (মহাবিপদ সংকেত) :
  • এই সংকেত প্রচারের পর প্রথম ও প্রধান কাজ হলো সম্পদের কী ক্ষতি হচ্ছে সে চিন্তা না করে জীবন বাঁচানো৷
  • এই সময়ে আবহাওয়া এতই দুর্যোগপূর্ণ থাকবে যে চলাচল করা খুবই কষ্টকর হবে৷
  • অল্প পথকে অনেক দূর বলে মনে হবে এবং অনেকসময় খারাপ আবহাওয়ার জন্য এই অল্প পথটুকু পার হওয়া বা অতিক্রম করা যায় না ৷
  • এ সময়ে চলাচল করা উচিত নয় বিশেষ করে পানি পথে ৷
  • এ সময়ে ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ এত বেশি থাকে যে কাছের কোন বস্তুও দেখা যায় না৷ বৃষ্টির ফোটা শরীরে এত জোরে লাগে যে মনে হয় বড় বড় ঢিল কিংবা বন্দুকের গুলি লাগছে৷
  • এ সময় বাতাস এত প্রবল থাকে যে গাছের ডাল, ঘরের টিন এ জাতীয় জিনিস বাতাসের প্রচণ্ড বেগে উড়তে থাকে৷ তাই আশ্রয় কেন্দ্রের বাইরে যাওয়া ও ঘোরাফেরা করা উচিত নয়৷
  • মহাবিপদ সংকেত দেয়ার আগে অথবা প্রথম অবস্থাতেই সময় নষ্ট না করে জীবন রক্ষার জন্য নিরাপদ স্থানে পৌঁছানো জরুরি৷
  • নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে না পারলেও কাছেই কোনো নারকেল কিংবা তাল অথবা শক্ত কোনো গাছে আশ্রয় নিতে হবে৷
  • মহাবিপদ সংকেত প্রদানের সাথে সাথে কেউ যদি নিরাপদ জায়গায় যেতে না চায় তাদেরকে জোর করে কিংবা বল প্রয়োগ করে হলেও নেয়ার ব্যবস্থা করা৷
  সংকেত নং ১১ (যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন)
  • দুর্গত এলাকার সাথে কোনো রকমের যোগাযোগ করা যায় না৷
  • এ সময়ে একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে জীবন বাঁচানো৷ 

ঘূর্ণিঝড়কালীন সময় করণীয়   (নিজে পড়ুন অন্যকে পড়তে সাহায্য করুন)
 
ঘূর্ণিঝড়ের শুরু থেকে অর্থাত্‌ নিম্নচাপ সৃষ্টি থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি আর জলোচ্ছ্বাস চলতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সময়কেই ঘূর্ণিঝড় চলাকাল বলা যায়৷ এই সময়ে জীবন হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ, নিরাপত্তাহীন এবং সব কিছু ছেড়ে জীবন বাঁচানোই হয়ে পড়ে প্রধান লক্ষ্য৷ ঘূর্ণিঝড়ের সময় এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যে নিজের সামনে নিজের স্ত্রী/সন্তান, বাবা/মা যদি পানির স্রোতে ভেসেও যায় কিছুই করার থাকে না৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঐ পরিস্থিতিতে নিজের জীবন বাঁচানোই একমাত্র প্রচেষ্টা হয়ে দাঁড়ায়৷
নিরাপদ স্থান বা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি
  • রেডিও, টেলিভিশন ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত বিপদ সংকেত ও নির্দেশ শুনতে হবে৷ বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান কত দূরে, বাতাসের গতিবেগ কত এবং ঝড়টির স্থান পরিবর্তনের গতিবেগ কত ইত্যাদি ভালো করে শুনতে হবে
  • সাধারণত বিপদ সংকেত প্রচারের আগে স্থানান্তর কিংবা নিকটবর্তী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই৷ তবে হুঁশিয়ারি সংকেত (সংকেত ২ ও ৪) প্রচারের সময়ে জিনিসপত্র গুছিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন;
শিশু, গর্ভবতী মা, বৃদ্ধ, বিকলাঙ্গ ও অসুস্থ নারী পুরুষদেরকে বিপদ সংকেত প্রচারের সময়ই সবার আগে নিরাপদ স্থানে কিংবা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷ কারণ মহাবিপদ সংকেত প্রচারের পরে এদের নিয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ

ঘূর্ণিঝড়ের সময় মেয়েদের চুল ও পোষাক অনেক সময় বিপদের কারণ হয়ে দাড়ায়৷ বাতাসে যেন সমস্যা না হয় সেজন্য কাপড় দিয়ে মাথার চুল শক্ত করে বেঁধে ফেলতে হবে এবং পোষাকও তেমনভাবে পড়তে হবে
  • নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য বিপদ সংকেত প্রচারের সাথে সাথে প্রস্তুতি নিয়ে পরবর্তী সংকেতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷;
  • বিপদ সংকেতের সময়ই গবাদি পশু উঁচু জায়গায় নিতে হবে অথবা দড়ির বাঁধন খুলে দিতে হবে যেন সে নিজেই বাঁচার চেষ্টা করতে পারে৷ অবশ্য এ ক্ষেত্রে আবহাওয়া কতটা দুর্যোগপূর্ণ সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে;
  • মহাবিপদ সংকেত চলার সময় স্থানান্তর করা খুবই কঠিন ব্যাপার৷ এ সময় কোনো অবস্থাতেই চলাচলের ঝুঁকি নেয়া ঠিক নয়৷ আশ্রয় কেন্দ্র বা নিরাপদ স্থানে অবশ্যই মহাবিপদ সংকেত দেয়ার সাথে সাথে অথবা আগেই যেতে হবে;
  • এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান শুধুমাত্র দুর্যোগে জীবন রক্ষার জন্য, কোনো প্রকার আরাম আয়েশের জন্য নয়৷ কাজেই কষ্ট হলেও অপরের জীবন রক্ষার জন্য আশ্রয়ে সহায়তা প্রদান করতে হবে৷
আশ্রয়কেন্দ্রের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কি করবেন
  • মহাবিপদ সংকেত দেয়ার আগেই আশ্রয়কেন্দ্রে যান ও শৃঙ্খলা বজায় রাখুন৷
  • আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখুন৷
  • যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করবেন না৷
  • হৈ চৈ না করে ধৈর্য ধরে থাকুন৷
  • মহিলাদের শালীনতা রক্ষায় সহায়তা করুন৷
  • কেবল আকাশ পরিষ্কার দেখলেই আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করবেন না করং কর্তৃপক্ষের নির্দেশমত চলুন৷
জীবন রক্ষার প্রচেষ্টা
আমাদের দেশে সম্পদের অভাবের কারণে প্রয়োজন অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা শক্ত ও উঁচু বেড়ী বাঁধ তৈরি করা সম্ভব হয় না৷ যে সব জায়গায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ স্থান নেই সেখানকার জনগোষ্ঠী কি করবেন:
  • কাছাকাছি উঁচু জায়গায়, পাহাড় কিংবা কিল্লায় আশ্রয় নেয়া;
  • নারকেল কিংবা তাল গাছের উপরে আশ্রয় নেয়া;
  • শক্ত ও মোটা দড়ি দিয়ে মই তৈরি করে এবং ঐ মইয়ের এক দিক শক্ত গাছে বেঁধে অন্যদিকটি শক্ত  করে ধরে রাখা;
  • পানিতে ভাসে এমন কাঠ, ঘরের চাল, খরের গাঁদা, বাঁশের চালা ইত্যাদির সাহায্যে জীবন রক্ষা করা;
  • মহাবিপদ সংকেত চলাকালীন সময়ে ছুটাছুটি বা দৌড়াদৌড়ি খুবই বিপদজনক৷ কারণ এতে নিখোঁজ ও আহত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷
ধ্বংস কমানোর প্রচেষ্টা
সব ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বা প্রচণ্ডতা এক নয়৷ প্রস্তুতি কার্যক্রম না থাকলে অল্প ও বিরাট ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ এক্ষেত্রে প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে পারি৷ অর্থাত্‌ ঘূর্ণিঝড় আসার আগেই আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে যা পালন করলে ধ্বংস কমানো সম্ভব হবে৷ সাধারণভাবে যদিও আমরা ঘূর্ণিঝড়ের দিন কিংবা সময় সঠিকভাবে জানি না অর্থাত্‌ কখন ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে তা জানি না কিন্তু সাধারনত  কোন মাসে বা ঋতুতে ঘূর্ণিঝড় বেশি হয় তা আমরা জানি৷ এই জানাটুকুই আমাদের সাহায্য করে প্রস্তুতি নেয়ার এবং ধ্বংস কমাতে৷ নিম্নলিখিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা সম্পদের ধ্বংস কমাতে পারি :
  • গ্রীষ্মকাল শুরুর প্রথমেই ঘরবাড়ি মেরামত করা৷
  • বাড়ির ভিটার মাটি সরে গিয়ে থাকলে কিংবা নিচু হয়ে থাকলে নুতন মাটি তুলে ভরাট করা৷
  • নৌকাসহ অন্যান্য নৌযান মেরামত করা৷
  • ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত শোনার পরপরই ভারী ও বড় জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা৷
  • আকারে ছোট ও মূল্যবান জিনিসপত্র এবং খাবার সামগ্রী প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে ঘরের মাঝে গর্ত করে মাটির নিচে সযত্নে রেখে দেয়া৷
  • অতি মূল্যবান জিনিস যা আকারে ছোট এবং হাল্কা ঐ জিনিসপত্র সাথে করে নিয়ে যাওয়া৷
  • ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের শুরু থেকেই কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন মোমবাতি, দিয়াশলাই, কেরোসিন তৈল এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী যেমন চাল, চিড়া লবণ ইত্যাদি আলাদা করে রাখা৷
  • যে বাড়িতে দুধের শিশু আছে সেখানে বিকল্প খাবারের ব্যবস্থা রাখা৷
  • মৌসুমের শুরু থেকে যতগুলি সম্ভব শুকনো নারকেল সংগ্রহ করে রাখা বিশেষ করে দুর্যোগের সময় ব্যবহার করার জন্য৷
  • জরুরি ঔষধ ক্রয় ও নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের সময় সঙ্গে রাখা৷
  • দা, খন্তা, রশি এমন দ্রব্যাদি যা ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই খুবই দরকার হয়ে পরে এমন সব জিনিস সঙ্গে নিয়ে যাওয়া কিংবা নির্দিষ্ট জায়গায় মাটির নিচে রেখে যাওয়া৷

ঘূর্ণিঝড় পরবতী সময়ে করণীয়
প্রাথমিক পর্যায়ে ঝড় থেমে যাবার পর পরই আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করতে নেই কেননা কিছুক্ষণ পর ঝড় আবার আঘাত হানতে

পারে৷ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে যে সকল ক্ষতি হতে পারে তাহলো:
  • মৃতু্্
  • নিখোঁজ, পানিতে ডুবে যাওয়া
  • ভাসমান কোনো জিনিস ধরে গভীর সমুদ্রে চলে যাওয়া
  • অর্ধমৃত অবস্থায় স্থলভাগের কাছাকাছি পড়ে থাকা
  • হাত/পা ভেঙ্গে যাওয়া
  • মাথায় ও শরীরে আঘাত পাওয়া
  • গাছের বা ঘরের নিচে চাপা পড়া
  • নারকেল কিংবা তাল গাছের উপরে আটকা পড়া
  • শকপ্রাপ্ত হওয়া
  • সাপ বা অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীর কামড়ে আহত হওয়া
  • মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা৷
উদ্ধার কাজে আপনার করণীয়
  • প্রথমেই দেখতে হবে নিজের পরিবারের লোকজন কে কোথায় আছে৷ সবাইকে গুনে দেখতে হবে৷ কাউকে না পাওয়া গেলে জোরে জোরে নাম ধরে ডাকতে হবে৷ যদি রাত হয় তাহলে টর্চ লাইট জ্বেলে আশেপাশে খোঁজ করতে হবে;
  • পরিবারের কেউ কোথাও আহত হয়ে পরে থাকলে (গাছ চাপা পড়ে, ঘরে চাপা পড়ে, দৌড়াতে গিয়ে হাত পা কেটে বা ভেঙ্গে গেলে) তাকে সাথে সাথে উদ্ধার করে চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করতে হবে৷ কাছাকাছি হাসপাতালের সুবিধা থাকলে দ্রুত সেখানে পাঠাতে হবে
  • ত্রাণকর্মীরা এলে ও তাদের সাথে মেডিক্যাল টীম থাকলে সেখানে নিয়ে যেতে পারেন; পাড়াপ্রতিবেশী ও আত্নীয় স্বজনের খোঁজ খবর নিতে হবে ও তাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে;
  • ঘুর্ণিঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাস হলে বিপদের সম্ভাবনা আরো বেশি থাকে৷ জলোচ্ছ্বাসে বেশিরভাগ মানুষ লবণাক্ত পানি খেয়ে দম বন্ধ হয়ে যায়৷ যারা বেঁচে থাকে দ্রুত তাদের পেট থেকে পানি বের করার ব্যবস্থা করতে হবে;
  • এরপর গবাদি পশুর খোঁজ করতে হবে৷ আহত গবাদি পশু উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করতে হবে৷ 
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে করণীয়

  • যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুর্গত এলাকায় দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী/স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে পৌঁছান এবং উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা;
  • স্থল ভাগের কাছ থেকে সুদূর গভীর সমুদ্র পর্যন্ত জলযানের সাহায্যে অনুসন্ধান করতে হবে;
  • পানিতে ভাসমান বস্তুর সাহায্যে যারা অর্ধমৃত অবস্থায় বেঁচে থাকে তাদেরকে উদ্ধার করতে হবে
  • যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুমূর্ষু ব্যক্তিদের নিকটতম ত্রাণ ক্যাম্পে কিংবা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্থানান্তর করতে হবে৷ 
মৃতের সত্‌কার 
  • আত্নীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর লাশ ও অন্য এলাকা থেকে ভেসে আসা মৃতদেহ উদ্ধার করে যথাযথ ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে (যেমন গোসল করানো, কাফন পরানো) গোরস্থানে দাফন করতে হবে৷ মুসলমান বাদে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিজস্ব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সত্‌কার করতে হবে
  • লাশের সংখ্যা যদি বেশি হয় ও লাশ সনাক্ত করা না গেলে সামাজিক গোরস্থানে বা অন্য কোথাও গণ কবরের ব্যবস্থা করা যেতে পারে;
  • মৃতের দাফন ও সত্‌কারে যে সব জিনিস প্রয়োজন হয় (কাপড়, সাবান, বাঁশ, কাঠ) সেসব জিনিস সামাজিক কমিটির মাধ্যমে আগেই কিনে রাখা যায়৷ কেননা ঝড়ের পরে এগুলো জোগাড় করা খুবই কষ্টকর হয়;
  • মৃত পশু পাখি পঁচে যাওয়ার আগে জড়ো করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে৷ গবাদি পশু পাখির মড়া পরিবেশ নষ্ট করে;
  • অনেকে গবাদি পশু পাখির মড়া নদী বা সমুদ্রে ফেলে দেয় এটা মোটেই উচিত নয়৷ এতে পরিবেশ ও পানি দূষিত হয়৷ সেই পানি ব্যবহার করলে মানুষ অসুস্থ হয়ে যাবে
  • সব কাজে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবকরা সাহায্য করতে পারে৷ তারা তত্‌পর হলে দ্রুত স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে৷  
পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন কার্যক্রম
  • ব্যক্তিগতভাবে একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে৷ যার যেটুকু সম্বল আছে তাই দিয়ে আত্নীয় স্বজন ও প্রতিবেশীকে সাহায্য করতে হবে;
  • এলাকায় ত্রাণ দল পৌঁছানোর পর তাদের সহযোগীতা করতে হবে৷ সবার আগে যাদের ত্রাণ প্রয়োজন তারা যেন সাহায্য পায় সে ব্যাপারে সবাইকে সহযোগীতা করতে হবে;
  • হেলিকাপ্টার বা উঁচু থেকে ত্রাণ ছুঁড়ে মারা ঠিক নয় এতে আহত হবার সম্ভবনা থাকে ;  
  • ত্রাণ সামগ্রী সুষ্ঠ বিতরণে সকলকে সহযোগিতা করতে হবে;
  • ত্রাণ সামগ্রী যেন চুরি ও লুট না হয়ে যায় সেজন্য সহযোগিতা করা;
  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনকে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক বিবরণ দিতে হবে৷ দূর্গতের জন্য তাড়াতাড়ি ত্রাণ পৌঁছাবার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করা;
  • পুনর্বাসন কাজ জরিপ এবং এলাকাবাসীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে৷ এজন্য যারা ত্রাণ পাবার যোগ্য তাদের সঠিক তালিকা তৈরিতে সহযোগিতা করা খুবই দরকার
  • ত্রাণ বিতরণের সময় যাতে শৃঙ্খলা বজায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন;
  • কাজের বিনিময়ে ত্রাণ কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে;
  • সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ কাজে প্রশাসনকে ব্যাপারে সহযোগিতা করা;
  • ত্রাণ ও পূণর্বাসন কাজে স্থানীয় সরকার ও এনজিওদের  সহযোগিতা করা;
  • দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রতিটি গ্রামে সামাজিক কমিটি গঠন করা৷ কমিটিতে এলাকার বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষকে রাখতে হবে এবং কমিটিতে তরুণদের অংশগ্রহণ যেন বেশি থাকে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা৷
বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা

  • জলোচ্ছ্বাসের লবনাক্ত পানি পাইপে যেন ঢুকতে না পারে সেজন্য ঝড় শুরু হবার আগেই টিউবওয়েল খুলে ফেলুন এবং পাইপের মুখ পলিথিন জাতীয় কিছু দিয়ে বেঁধে ফেলতে হবে৷ ঘূর্ণিঝড়ের পরে খুলে রাখা টিউবওয়েল লাগাতে হবে;
  • যদি টিউবওয়েল মাথা খোলা সম্ভব না হয় তবে জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাওয়া টিউবওয়েলের পানি অনেকক্ষণ চাপ দিয়ে ফেলে দিতে হবে৷ পরিষ্কার পানি পাবার জন্য এক নাগারে আধাঘন্টা হতে পৌনে এক ঘন্টা পর্যন্ত পানি চেপে ফেলে দিন;
  • দুর্যোগের পরে রোগ জীবাণু যেন না ছড়ায় সেজন্য তাড়াতাড়ি পায়খানা  মেরামত করতে হবে৷ 
গৃহ ও অবকাঠামো পুনঃনির্মাণ

  • ঝড়ের আঘাতে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হতে হয়৷ ঝড় শেষে বাড়ি ফিরে ঘরবাড়ি মেরামত করুন৷ ঘরবাড়ি  পুন:নির্মাণের জন্য সেচ্ছ্বাসেবী  প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন
  • যে এলাকার উপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায় সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে৷ রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ ফলে ত্রানসামগ্রী ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে;
  • ঘূর্ণিঝড়ের পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা তাড়াড়ি ঠিক করার জন্য সামাজিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে;
  • রাস্তার উপর গাছ, গাছের ডাল বা অন্যান্য সামগ্রী বা চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এমন জিনিসপত্র পড়ে থাকলে সকলে মিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে৷ 
                                                              সংগ্রহে : এম. ওসমান গণী। Osman_stu@yahoo.com

2 comments: