Thursday, August 29, 2013

চাকরি পাওয়ার পরে করণীয়...



চাকরি পাওয়াকেই অনেকে জীবনের শেষ লক্ষ্য মনে করে থাকেতবে চাকরি পাওয়াটাই আসলে শেষ কথা নয়ক্যারিয়ারে সফলতার জন্য প্রয়োজন চাকরিতে ঢোকার পরেও বিভিন্ন বিষয়ে মনোযোগএর অভাবে সম্ভাবনাময় একটি ক্যারিয়ারও নষ্ট হয়ে যেতে পারেআর যথাযথ স্থানে যথাযথ মনোযোগ দিতে পারলেই কেল্লাফতে তাহলে জেনে নেয়া যাক কি করা যাক,

পড়ালেখা শেষ হয়ে গেলে প্রথম চিন্তাটাই থাকে কী করে ভালো একটি চাকরি পাওয়া যায়কিন্তু ভালো একটি চাকরি পেলেই কী সব চিন্তা শেষ? প্রশ্নটা শুনে অবাক হতে পারেন অনেকেইকিন্তু অবাক হওয়ার কিছু নেইচাকরি পাওয়া মানেই চাকরি জীবনে সফলতা নয়এর জন্য বাড়তি চিন্তার প্রয়োজন আছে বৈকিকেননা শিক্ষাজীবনে যেমন চিন্তা ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো ফলাফল করতে হবে, শিক্ষকদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সুসম্পর্ক গড়তে হবে; তেমনি চাকরি জীবনেও এই প্রয়োজনগুলো রয়েছে ভালোমতোইজেনে রাখবেন, আপনি চাকরি পাওয়ার পর প্রথম যেদিন অফিসে যাবেন সেদিনের কিছু কাজ, কাজ করার প্রক্রিয়া, উদ্যোগ, অন্যদের সাথে আপনার কথাবার্তা, এমনকি হাঁটাচলা, নড়াচড়া সবই পরীক্ষকের চোখে লক্ষ করবে সবাইএগুলোই আপনার সম্পর্কে আপনার বসকে ভালো অথবা মন্দ ধারণা দেবেআপনার সহকর্মীরা ভেবে নেবে আপনি মানুষটি কেমনতাই চাকরি পাওয়ার পরের এসব বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে
ভালো কিছু দিয়েই শুরু করুন
প্রতিটি অফিসেই বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা থাকেএগুলো সবাই ভোগ করতে পারে নাতারাই ভোগ করতে পরে, অফিসে যারা ভালো কর্মদক্ষতা দেখাতে পারেতাই প্রথম ২/৩ মাসে অফিসে নিজের ইতিবাচক প্রভাব তৈরিতে একটু বেশিই মনোযোগ দিনআপনি নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন, যেন অফিসের কোনো কঠিন প্রজেক্টে বা অফিসের কোনো সুযোগের অফার আপনাকেই দেওয়া হয়মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনানিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করুনসময় এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার করুনকঠিন পরিশ্রম করুন
আপনি যদি এই পরামর্শগুলো আত্মবিশ্বাসের সাথে মেনে চলেন, তাহলে দেখবেন অফিস সময় আপনার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে দ্রুতইপ্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা সম্পর্কে সঠিক এবং পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকারআপনার প্রতিষ্ঠান আপনার কাছ থেকে কতটুকু আশা করে, সে ধারণা থাকা দরকার আপনারআর সেটা আপনি কতটা কৃতিত্বের সাথে দেখাতে পারবেন, সে সম্পর্কেও আপনার নিজের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা চাইআর তাহলেই আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাজগুলো যথাযথভাবে করতে সক্ষম হবেনআর না হলে দেখবেন পদে পদে আসবে বাধা
কর্ণধারদের মেনে চলুন
চাকরি করবেন অথচ বসের আদেশ নিষেধ মেনে চলবেন না, তা তো কল্পনাই করা যায় নাচাকরিতে জয়েন করার প্রথম সপ্তাহেই আপনার বসের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নানা ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করুনসেই সঙ্গে জেনে নিন কী করে আপনার বসকে সন্তুষ্ট রাখবেনকারণ বস ইজ অলওয়েজ রাইটসুতরাং আপনার বস কীভাবে তথ্য আদান-প্রদান করেন, তিনি কী ধরনের কর্মধারা মেনে চলেন, আপনার সঙ্গে কাজ করার সময় আপনার কাছ থেকে কী ধরনের অংশগ্রহণ তিনি আশা করেন ইত্যাদি মাথায় রেখে তার সঙ্গে কাজ করুনএমন কোনো কাজ করবেন না, যে জন্য তিনি বিরক্ত হতে পারেন
বস সংক্রান্ত আরো কিছু
প্রতিদিন কাজ-কর্ম, কথাবার্তা এবং আচার-আচরণ দিয়ে বসকে তো সন্তুষ্ট রাখবেনই, সম্ভব হলে তিন মাস পর পর আপনার বসের কাছ থেকে আপনার কাজের মূল্যায়ন জেনে নেবেনআর বস ছাড়াও অফিসের নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুনএরাই সিদ্ধান্ত নিতে এবং নতুন কৌশল বা উদ্যোগ নিতে প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করে থাকেনপ্রতিষ্ঠানের এ সকল কর্তাব্যক্তিদের আচরণ, বৈশিষ্ট্য, স্বভাব, অভ্যাস, পেশাগত বৈশিষ্ট্য, প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা ইত্যাদি সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখুনতবে খোঁজ-খবর এমনভাবে রাখবেন, যেন তারা তা টের না পানসম্ভব হলে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলুনএর ফলে আপনি বুঝতে পারবেন কী করলে আপনি নিজেকে একই অবস্থানে দেখতে পারবেন
নতুন নতুন আইডিয়া
আপনার মেধা কতটুকু, তা আপনিই ভালো জানেনআপনার যদি নতুন কিছু প্রবর্তনের মেধা থাকে, তবে তা কাজে লাগানোর আগে জেনে নিন আপনার কোম্পানি নতুন কিছু গ্রহণের ক্ষেত্রে কী ভূমিকা নেয়বসদের মন-মানসিকতা এবং পছন্দ-অপছন্দের উপর নির্ভর করে অনেক কিছুইআপনার নতুন আইডিয়া তারা কীভাবে নেবেন, তা বুঝে-শুনে শেয়ার করুনআর অফিসে নিজের একজন হিতাকাঙ্ক্ষী গড়ে তুলুন, যিনি অফিসে আপনাকে সব ধরনের কাজে সহায়তা করবেন এবং আপনার গাইড হিসেবেও কাজ করবেনতিনি আপনাকে কোম্পানির নিয়ম-কানুন, আচার আচরণ ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি অফিসের ভালো-মন্দ আপনার সাথে শেয়ার করবেনহবেন সামনে এগিয়ে যাবার সহায়কতিনি আপনার বসও হতে পারেন বা কোম্পানির সিনিয়র কেউ হতে পারেনএ বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে মেনে চলতে পারলে চাকরিতে আপনার উন্নতি হবেই হবে
কিছু টিপস
নতুন চাকরি পেয়েছেন মাত্র কদিন হলোএরই মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় মিস্টি পাঠানো আর বন্ধুদের নিয়ে ফাস্টফুডের দোকানে ঢুঁ মারার কর্মটি শেষ করে ফেলেছেনকিন্তু অফিসে গিয়ে কী করবেন না করবেন, সেটা তো অজানাই থেকে গেছেএখানে নতুন চাকরিজীবীদের জন্য কিছু টিপস দেওয়া হলো
  • প্রথমেই সবার মনে আপনার সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা গড়ে তুলতে হবেএজন্য সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে হবেমনে রাখতে হবে আপনার সাথে যারা কাজ করছেন তারাও কিন্তু স্ব স্ব ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই কাজে যোগ দিয়েছেন এবং তাদেরও উচ্চতর ডিগ্রি বা দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে পারেআপনার কাজ এবং উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যদি পর্যবেক্ষক হিসেবে কেউ নাও থাকে তবুও এ বিষয়ে সচেতন হোন
  • অফিসে দেরি করে আসা, লাঞ্চে গিয়ে বেশি সময় কাটানো বা অফিস সময় শেষ হবার আগেই চলে যাওয়ার মতো অভ্যাসগুলো যদি প্রথম থেকেই আপনার মধ্যে চলে আসে তাহলে আখেরে কিন্তু আপনার লাভের চাইতে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশিমনে রাখবেন আপনি নিজেকে যতই স্বাধীন ভাবুন না কেন, আপনার আচরণের দিকে কিন্তু সবাই লক্ষ রাখছে
  • ভালো কাজ করার একটি বড় শর্ত হচ্ছে ভালো কাজ শেখাএ কারণে আপনার শেখার দরজা কখনই বন্ধ করে দেবেন নাঅফিসেরনর্ম অ্যান্ড কালচারগুলোও শিখতে চেষ্টা করুনমনে রাখবেন, যেকোনো অফিসই কিন্তু তাদের মানসিকতার সাথে মানানসই লোককে খুঁজে বেড়ায়তাই আপনার অফিসের কাজের ধারাটিই আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা করুনআর যদি তাতে পরিবর্তন আনতে চান, তাহলে সেই অনুযায়ী নিজের অবস্থানটি আগে গড়তে হবে
  • নতুন চাকরির শুরুতে কথাবার্তাতেও আপনাকে কিছুটা কেউকেটা হতে হবেঅর্থাত্ খুব বেশি কথা না বললেও সঠিক কথাটি কীভাবে সঠিক জায়গায় বলা যায় সে বিষয়টি আপনাকে শিখে নিতে হবেআর বাইরের কোনো পরিবেশে যখন আপনি আপনার অফিসের প্রতিনিধি হিসেবে যাবেন তখন এটা মনে রাখবেন যে আপনার কথা বলার ধরণটি শুধু আপনার ব্যক্তিত্বের বিজ্ঞাপনই নয়, একইসাথে এটি আপনার অফিসকেও রিপ্রেজেন্ট করে
  • বড় বড় বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে গিয়ে অনেক তুচ্ছ বিষয় চোখ এড়িয়ে যেতে পারেআপনার ক্ষেত্রে যেন এমনটি না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখুনযেকোনো অফিসিয়াল ডক্যুমেন্ট বা ই-মেইলের ক্ষেত্রে বানান এবং অন্যান্য ছোটোখাটো তথ্যগত ভুলগুলো ভালো করে পরীক্ষা করে তারপর তা উপস্থাপন করুন
  • অনাবশ্যক প্রশ্ন পরিহার করুনযেসব প্রশ্ন আপনার তাৎক্ষণিক কাজের জন্য জরুরি নয়, সেসব প্রশ্ন কোনো একটি স্থানে টুকে রাখুনপরে সুবিধাজনক সময়ে এগুলোর উত্তর জেনে নিন
  • অন্যদের কাজের দিকে নজর দেওয়ার চাইতে প্রথমে নিজের কাজের প্রতিই বেশি মনোযোগী  হোননিজের কাজে শতভাগ দক্ষ হয়ে উঠার চেষ্টা করুন
  • অফিস সবসময়ই টিমওয়ার্কের জায়গাতাই টিমের সাথে কাজ করার জন্য নিজেকে গড়ে তুলুনএর জন্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলো আত্মস্থ করুন
  • অফিসের পরিবেশের সাথে আপাত সম্পর্কহীন মনে হলেও আপনার ব্যক্তিগত জীবনটিকেও গোছানো রাখার চেষ্টা করুনকারণ ব্যক্তিগত কোনো কারণে যদি আপনি মানসিকভাবে অস্থির হয়ে থাকেন, তার প্রভাব আপনার অফিসের কাজেও পড়তে বাধ্য

No comments:

Post a Comment