Wednesday, November 7, 2012

পরিকল্পিত জীবন গড়তে পরিকল্পনাক্যারিয়ার

ক্যারিয়ারের সম্মানজনক অবস্থানে দাঁড়িয়ে একটা সুখের নীড় গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন না, এমন মানুষ খুঁজে বের করা দায়। ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যেকে এই স্বপ্ন নিজের মাঝে লালন করে থাকে। কিন্তু পরিকল্পনানুযায়ী প্রস্তুতি না থাকার কারণে অনেক সময় অনেকেরই সে স্বপ্ন হাতের মুঠো থেকে খুব সহজেই ফসকে যায়।
পরিকল্পনা করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন। ব্যক্তিগত ও সামাজিক চাহিদা, অবস্থান, সামর্থ্য এবং রুচিবোধকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। এ জন্য আপনি কিছু সহজ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে চারটি বিষয় এ ক্ষেত্রে থাকা উচিত। যথা: লক্ষ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত, সঠিক কাজ, সময় এবং প্রচেষ্টা। জীবনে সিদ্ধান্ত নেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিদ্ধান্ত বলতে একটি কাজ করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেটি থেকে বিকল্প বা কোনো একটি বিষয় বেছে নেয়াকে বুঝায়। আর সিদ্ধান্ত সঠিক হওয়ার ওপর সাফল্যের অনেকটাই নির্ভর করে। সিদ্ধান্ত শেষে আপনাকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সময়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
তোমার জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ স্কুলে এই বিষয়ে রচনা লেখেননি এমন শিক্ষার্থী কমই আছে। মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়, কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আবার শিক্ষক ইত্যাদি। শখ অনুযায়ী এই কিশোর বয়স থেকে শুরু করা উচিত ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। কারণ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার আসল সময় এই বয়সটাই। যদি প্রস্তুতিটি সঠিক হয় তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনাটির বাস্তব রূপদান সম্ভব। আর সেটা সম্ভব আমাদের প্রচেষ্টা, ইচ্ছা, আগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতার ওপরই। তবে এ ক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত সামর্থ্য, দক্ষতা, আগ্রহ, রুচি, উৎসাহ, মূল্যবোধ, স্বপ্ন এবং গুণাবলিকে প্রাধান্য দিতে হবে। আর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা।
 যে কাজকে জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেব এবং তার মাধ্যমে উপার্জন করে জীবনযাপন করব সেটাই পেশা। আর পেশা নিয়ে পরিকল্পনা বলতে যে পেশার মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করবেন সে বিষয়ে পরিকল্পনা করাকে বোঝায়। কেননা বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে পড়াশোনা শেষে চাকরির নিশ্চয়তা রয়েছে এমন চিন্তা করা বোকামি। কারণ চাকরি পেতে হলে আপনাকে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতেই হবে।
আর এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দরকার যোগ্যতার। এ জন্য ক্যারিয়ার হিসেবে আপনি কোনটিকে বেছে নেবেন, কোনো পেশার জন্য কী রকম প্রস্তুতি নিতে হবে, আপনার ইচ্ছাধীন পেশায় যাওয়ার রাস্তাটা কেমন হবে বিষয়গুলো জানতে অবশ্যই পেশা পরিকল্পনা প্রয়োজন।



চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিনঅতীতাকে যেমন একেবারেই গুরুত্বহীন মনে করা যাবে না, তেমনি খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে ক্ষতি ডেকে আনা যাবে না। বর্তমানকে যথাযথ মূল্যায়ন করে ভবিষ্যতের সফলতা লাভের প্রচেষ্টা চালানোতেই লুক্কায়িত রয়েছে সত্যিকারের বীরত্ব। যারা বর্তমানকে উপভোগ করতে পারেন না, ভবিষ্যতের সোনালি স্বপ্ন দেখতেও ভুলে যান তাদের অমঙ্গলই হয় বেশি। নিজের অবস্থান ও সামর্থ্যরে ব্যাপারে সচেতন থেকেই পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নিতে হয়। শুধু উপরে দেখা কিংবা শুধুই নিচে দেখার মাঝে লাভ নয়, বরং ক্ষতিই বেশি। নিজের ব্যাপারে পরিপূর্ণ সচেতনতাই সামনে এগিয়ে নিতে পারে। অনেকগুলো বিকল্প যখন একসঙ্গে সামনে আসে, তার মধ্য থেকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, উপযুক্ত বিকল্পটি বেছে নেয়ার নাম সিদ্ধান্ত। জীবনের প্রত্যেকটি পদে, এমন হাজার বার আমাদের বিকল্প বেছে নিতে হচ্ছে। কখনো আমরা সঠিকটা নিতে পারি, কখনো হয়ে যায় ভুল। হয়তো আপনি যে সিদ্ধান্তটা ভালো বুঝবেন, কিন্তু তা গ্রহণ করতে পারছেন না এমনটিও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী যেটি ওই সময়ের জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর সেটি বেছে নিন। সেটিই হতে পারে আপনার সঠিক সিদ্ধান্ত। কাজেই সততা ও সাফল্যের সঙ্গে নিজ অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে সঠিক সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
 নিজের মতের ওপর স্থির থাকা ভালো, যদি সে মত সঠিক হয়। পাহাড়, পর্বত, বৃক্ষরাজি শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে স্থির অস্তিত্বের দৃষ্টান্ত হিসেবে। স্থিরতাতেই কল্যাণ। ঘন ঘন মতো বদলানো বোকামি। খড়কুটোই শুধুমাত্র উদ্দেশ্যহীনভাবে ভেসে চলে। তাই উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্টকরণ এবং সিদ্ধান্তে অটল অবিচল থাকতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে, কঠিন প্রতিজ্ঞা নিতে হবে। এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা অযৌক্তিক। কথা কম বলা মন্দ নয়। তাই বলে পরামর্শবিহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা প্রয়োজনেও মুখ না খোলার অভ্যাসকে তো কিছুতেই ভালো বলতে পারি না। তবে অতিরিক্ত কথা বলার অর্থই চিন্তা কম করা, যা কম বুদ্ধিমানেরাই করে থাকে। যে ক্ষুদ্র চিন্তা করে তার কাছ থেকে কিছু আশা করা যায় না। আবার যে বড় চিন্তা করবে এবং চিন্তার আলোকে কর্মপ্রচেষ্টা চালাবে, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যপানে ছুটবে সে ছোট থাকবে এটাও যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। চিন্তা কোনো মাপের কোনো পর্যায়ের সেটি নির্ণয় করতে পারলেই কোনো মাপের মানুষ সেটি বুঝা অনেকটা সহজ হবে। ইচ্ছের শেষ নেই। সব ইচ্ছা পূরণ হওয়ার নয়। ইচ্ছে অপূরণ থাকে বলেই মানুষ আরো বেঁচে থাকতে চায়।

No comments:

Post a Comment