Monday, June 25, 2012

হাসি! কেন হাসি?

  • undefined

    • undefined
    সেই কবে সুকুমার রায় লিখে গেছেন, ‘হাসছি মোরা হাসছি দেখ, হাসছি মোরা আহ্লাদী/ তিনজনেতে জটলা করে ফোকলা হাসির পাল্লা দি/ হাসতে হাসতে আসছে দাদা আসছি আমি আসছে ভাই/ হাসছি কেন কেউ জানে না, পাচ্ছে হাসি হাসছি তাই।’ একেবারে মোক্ষম উত্তর। হাসি পাচ্ছে তাই হাসছি।
    কিন্তু সত্যিই তো! আমরা কেন হাসি? এর কারণটাই বা কী? খুব সহজ একটা প্রশ্ন। কিন্তু এর উত্তর? অবিশ্বাস্য ধরনের জটিল আর এর তত্ত্ব-তালাশ করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলাটাই স্বাভাবিক। আশ্চর্যজনকভাবে জটিল এর উত্তর। হাসির অর্থ বুঝতে পারা মানেই যে মানুষের অন্তর্নিহিত প্রকৃতিকে বুঝতে পারা। গবেষকেরা বলেন, হাসি হচ্ছে রোগ সারানোর সর্বোত্কৃষ্ট দাওয়াই। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গবেষকেরা সম্প্রতি গবেষণা করেছিলেন। গবেষকদের মতে, হাসির পর মানুষের মধ্যে যন্ত্রণাবোধ কমে, এর কারণ হতে পারে শরীরের মধ্যে নিঃসৃত রাসায়নিক উপাদান। এই উপাদান প্রকৃতির নিয়মেই বেদনানাশক হিসেবে কাজ করে।
    হাসছ কেন? এই প্রশ্নটার উত্তর দিতে গিয়েও অনেকেই হেসে ফেলেন। হাসির এই প্রশ্নটা নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
    অনেকেই মনে করেন, হাসির কোনো কিছু বা মজাদার কোনো কিছু দেখলেই মানুষ হাসে। কিন্তু হাসির কারণ খুঁজতে গেলে অনেক সময় এই কারণটিই যথেষ্ট নয়। এ নিয়ে হাসি বিশেষজ্ঞ রবার্ট প্রভিন তাঁর গবেষণায় দেখেছেন, মজার কোনো বিষয় ছাড়াও মানুষ হাসে। তিনি বলেন, কোনো সাধারণ কথা শেষে বা কারও কোনো স্বাভাবিক কথার উত্তরেরও হাসি দিয়েই জবাব দিতে দেখা গেছে অনেককেই। এমনকি অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে দেখা গেছে সাধারণ কোনো কথাতেই।
    গবেষকেরা জানিয়েছেন, ‘আমরা যদি হাসির রহস্য উদঘাটন করতে যাই, সে ক্ষেত্রে আমাদের আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। আর দেখতে হবে হাস্যরসিক ব্যক্তিটির মস্তিষ্কে কী ঘটছে। মস্তিষ্কের যে অংশ থেকে হাসি নিয়ন্ত্রিত হয়, তার নাম সাবকর্টেক্স। এই অঞ্চলটি থাকে মস্তিষ্কের গভীরে। মস্তিষ্কের বিবর্তনের দিক থেকে এ অঞ্চলটি হচ্ছে সবচেয়ে আদিমতম অঞ্চল, যা শ্বাস নেওয়া বা প্রত্যুত্পন্নমতির মতো আদিম আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। যার অর্থ হচ্ছে, হাসি নিয়ন্ত্রণের অঞ্চলটি মস্তিষ্কের স্মৃতি নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল থেকেও অনেক গভীরে অবস্থান করে।’
    হাসির কিছু না হলেও মস্তিষ্কে হাসির খোরাক জন্ম নিতে পারে। ফলে অনেক সময় হো হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে মানুষ। কোনোমতেই হাসি আটকে রাখতে পারে না। আবার অনেক সময় উল্টোটাও ঘটতে পারে। প্রয়োজনের সময় হাসির উদ্রেক নাও হতে পারে। মস্তিষ্কপ্রসূত হাসির বাইরে যে হাসি মানুষ হাসে, সে হাসি মেকি বা নকল হাসি।
    গবেষকেরা জানিয়েছেন, ‘হাসির আরেকটি মূল ভিত্তি রয়েছে। আর তা হচ্ছে সব মানুষই হাসে। আর সবাই প্রায় একই ধরনের শব্দ করে হাসে। এমনকি বধিরকেও হাসতে শোনা যায়। হাসির শব্দের মধ্যে মানুষের ধ্বনিতাত্ত্বিক অনেক বিষয়ও যুক্ত থাকে। অর্থাত্ আমরা শ্বাস নেওয়া এবং কথা বলার সময় মস্তিষ্কের ও শরীরের যেসব অঙ্গ ব্যবহার করি, হাসি মানুষের মস্তিষ্ক ও শরীরের বিভিন্ন অংশের সেসব কাজ ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু এই ব্যাখাতেও আমরা কেন হাসি, এই প্রশ্নের উত্তর মেলে কি?’ গবেষকেরা বলেন, ‘আমরা যদি মস্তিষ্কে হাসি তৈরির নির্দিষ্ট এই অঞ্চলকে শনাক্ত করতে পারি এবং আমরা মস্তিষ্কের এই অঞ্চলকে উদ্দীপিত করে যদি কাউকে হাসাতে পারি তার পরও আমরা কেন হাসি, এই আসল রহস্যের সমাধান পাব না।’ অবশ্য গবেষকেরা মানুষের মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে হাসাতে পেরেছেন। তাঁরা বলছেন, ‘আমরা হাসির প্রভাবটার কথা জানি। কিন্তু কারণটা আমাদের কাছে এখনো অধরাই। আমরা কেন হাসি, সে শুরুর প্রশ্নটা কিন্তু এখনো থেকেই যাচ্ছে।’
    প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, হাসির কারণ খুঁজতে আমাদের এবার মানুষের মস্তিষ্কের অভ্যন্তর ছেড়ে সামাজিক বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। গবেষক প্রভিন দেখিয়েছেন, ‘হাসি মূলত কথা বলতে গেলে চলে আসে। অর্থাত্ যোগাযোগের ক্ষেত্রে হাসির একটা ভূমিকা রয়েছে। আমরা যখন কারও সঙ্গে কথা বলি, তখন হাসির বিষয়টি একক ঘটনার ফল হিসেবে তৈরি হয় না।’ তিনি তাঁর গবেষণায় দেখেছেন, বক্তা সাধারণত শ্রোতার চেয়ে বেশি হাসেন। এ বিষয়টি কোনো দলের মধ্যে থাকলে বা আবেগঘন পরিস্থিতির মধ্যে প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়।
    গবেষকেরা হাসির সামাজিক গুরুত্বের কথা স্বীকার করে হাসিকে সমাজে ইতিবাচক উপাদান হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
    হাসির একদিকে যেমন ইতিবাচক, তেমনি নেতিবাচকও বটে। একজনের হাসিতে যখন কারও ভালো অনুভূতি হচ্ছে, অন্যদিকে কারও কাছে এটা ঘৃণাভরা হাসিও হতে পারে। তবে হাসির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তা কতটা অন্যকে প্রভাবিত করতে পারছে অর্থাত্ হাসি কতটা সংক্রামক হিসেবে সবার কাছে ছড়াচ্ছে। কাউকে সুন্দর করে হাসতে শোনাটা যেমন ভালো অনুভূতি তৈরি করে, তেমনি সুন্দর হাসতে পারাটাও মানুষের একটা বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
    গবেষণায় খানিকটা ব্যাখ্যা মিললেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু আমাদের সুকুমার রায়ের কাছেই ফিরে যেতে হচ্ছে: হাসছি কেন কেউ জানে না, পাচ্ছে হাসি হাসছি তাই।

    No comments:

    Post a Comment